জন্মভূমি ডেস্ক : জাপানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটি সুনামি সতর্কতা তুলে নিলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে। সোমবার দেশটিতে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরপর কয়েক ঘণ্টায় শতাধিক আফটার শক হয়েছে যেগুলোর মাত্রা ৪ এর বেশি।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সতর্ক করেছেন যে ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক এবং হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। খবর জাপান টাইমস ও আল জাজিরার
খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ জনে এবং গুরুতর আহত হয়েছে আরও ১৪ জন। নিহতদের অর্ধেকই নতো অঞ্চলের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল ওয়াজিমার। মূলত ভূমিকম্পের পরপরই বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়লে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সোমবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটের দিকে জাপানের নতো অঞ্চলে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার এই ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের পরপরই সুনামির আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। প্রাথমিকভাবে অবশ্য ভূমিকম্পের মাত্রা বলা হয়েছে ৭ দশমিক ৪। পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় অন্তত ১৫৫ বার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
জাপানের মিটিওরোলিজক্যাল এজেন্সি (জেএমএ) জানিয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৬, অপর একটি ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬। এ ছাড়া বাকি ভূমিকম্পগুলোর প্রায় সবগুলোই ছিল রিখটার স্কেলে ৩ মাত্রার ওপরে। সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্রতাও কমে এসেছে। তবে স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার সকালের দিকেও বেশ কয়েকবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেএমএ।
ভূমিকম্পের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, রাজধানী টোকিও থেকেও এর কম্পন অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের ১০ মিনিটের মধ্যেই ১২ ফুট উচ্চতার একটি ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে দেশটির ইশিকাওয়া প্রিফেকচারের ওয়াজিমা বন্দরে।
ভূমিকম্পের পর জাপানের সামরিক বাহিনী উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। তারা খাদ্য, পানি এবং আশ্রয়ের যাবতীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করতে শুরু করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করে বলেন, ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে।
কিশিদা আরও বলেন, গতকালের শক্তিশালী ভূমিকম্পে অনেক রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধসে পড়েছে অনেক ভবন। এ কারণে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দলের ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে।
ভূমিকম্পটি দেশের পরিবহন নেটওয়ার্ককেও প্রভাবিত করেছিল এবং যাত্রীদের আটকে রেখেছিল। ভূমিকম্পের পর থেকে ওই এলাকায় বুলেট ট্রেন ও ফ্লাইট বাতিল করা হয়। তোয়ামা এবং কানাজাওয়া স্টেশনের মধ্যে হোকুরিকু বুলেট ট্রেনের চারটি ট্রেন মোট ১,৪০০ যাত্রী নিয়ে ১১ ঘন্টার জন্য স্থবির হয়ে পড়েছিল।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৩২ হাজারের বেশি পরিবার বিদ্যুৎহীন রয়েছে। একাধিক শহরে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি ভূমিকম্প অনুভূত হয় জাপানে। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণেই দেশটিতে বেশি ভূমিকম্প হয়। দেশটিতে প্রতি বছর গড়ে দুই হাজারের মতো ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে থাকে। ভূমিকম্পগুলোর অধিকাংশই ক্ষীণ হয়ে থাকে। তবে দেশটিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পকের অনেক রেকর্ড রয়েছে।