জন্মভূমি ডেস্ক : ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগের ২৫ কোটি ডলারের ঘুষ কেলেঙ্কারির মামলার পর ভারতীয় শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। গতকাল বুধবার (২০ নভেম্বর) অভিযোগ দাখিল করার পর আদানি গ্রুপের বিভিন্ন শেয়ারের ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হয়। বিশেষ করে আদানি এন্টারপ্রাইজেস, আদানি গ্রিন এনার্জি ও আদানি পাওয়ারের শেয়ারগুলো বড় ধরনের পতনের মুখোমুখি হয়।
এ ঘটনায় একদিনে আদানি গ্রুপ ১ হাজার ২৩০ কোটি ডলারের বাজার মূলধন হারিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা হারানো ও আইনি ঝুঁকিকে পতনের প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। আদানি গ্রুপের ডলার বন্ডের দামও রেকর্ড ১৫ সেন্ট পর্যন্ত কমেছে।
বাজার পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সংকট আদানি গ্রুপের বৈশ্বিক অবস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মামলা সম্পর্কে কোম্পানির পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি। এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ ও এর প্রভাব
মার্কিনভিত্তিক সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে গত জানুয়ারিতে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ তোলে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, আদানি গ্রুপ বহু বছর ধরে শেয়ারদরের কৃত্রিম বৃদ্ধি এবং আর্থিক লেনদেনে অনিয়ম করেছে। এরপর ভারতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি) বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে।
মামলা ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদানি গ্রুপের শেয়ারের দাম এক দিনে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। বিশেষ করে আদানি এন্টারপ্রাইজ, আদানি গ্রিন এনার্জি এবং আদানি ট্রান্সমিশনের মতো কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ
আদানি গ্রুপের শেয়ারের দরপতনের কারণে স্থানীয় ও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভারতীয় বাজারে এ ঘটনা শুধু আদানি গ্রুপকে নয়, বরং পুরো শেয়ারবাজারকেই প্রভাবিত করছে। আদানি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ঝুঁকি বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অভিযোগ দীর্ঘ মেয়াদে আদানি গ্রুপের ব্র্যান্ড এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে কোম্পানিগুলো তাদের বড় প্রকল্পের জন্য তহবিল সংগ্রহেও সমস্যায় পড়তে পারে।
বাজারের প্রতিক্রিয়া
দরপতনের কারণে মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে আদানি গ্রুপের বাজারমূল্য এক ধাক্কায় প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার কমেছে। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো ইতিমধ্যে গ্রুপের বেশ কিছু কোম্পানির রেটিং নিম্নগামী করার সতর্কতা দিয়েছে।
তবে আদানি গ্রুপ এর আগে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, তারা সব ধরনের নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনা করছে। গ্রুপের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের আর্থিক লেনদেন এবং করপোরেট গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। আমরা সব আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করব যে আমরা নির্দোষ।’
সামগ্রিক চিত্র
গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মামলার প্রভাব ভারতের শেয়ারবাজারে শুধু তাৎক্ষণিক নয়, বরং দীর্ঘ মেয়াদে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এটি দেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
বিশ্লেষকদের মতে, এ পরিস্থিতি সামাল দিতে আদানি গ্রুপকে স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যদিকে, ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। তাদের উচিত এ মামলার নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই ঘটনার প্রভাব কেবল আদানি গ্রুপের শেয়ারে সীমাবদ্ধ নয়। এটি ভারতের করপোরেট জগৎ এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশের ওপরেও গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেবে।