
জন্মভূমি ডেস্ক : শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন কারাবন্দি ইরানি নারীবাদী মানবাধিকারী কর্মী নার্গেস মোহাম্মাদি। প্রায় দুই দশক ধরে কারাবন্দি ৫১ বছর বয়সী সাংবাদিক ইরানে নারীদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য পরিচিত। শুক্রবার এ পুরস্কার ঘোষণা করে নোবেল কমিটি।
২০০৩ সালে নোবেলজয়ী শিরিন এবাদি প্রতিষ্ঠিত হিউম্যান রাইটস সেন্টারের ডেপুটি হেড নার্গেস। নোবেল পুরস্কারের ১২২ বছরের ইতিহাসে ১৯তম নারী হিসেবে এ সম্মান অর্জন করলেন তিনি। তবে কারাবন্দি হিসেবে নার্গেসের আগেও একইভাবে শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হয়েছেন আরও চারজন।
১৯৩৫: কার্ল ভন ওসিটস্কি, জার্মানি: সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী ওসিটস্কি ১৯৩৫ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন। তার নাম যখন ঘোষণা হয়, তখন তিনি জার্মানির নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দি ছিলেন। পুরস্কার সংগ্রহের জন্য তিনি অসলোতে যেতে পারেননি। ১৯৩২ সালে রাইখস্টাগ অগ্নিকাণ্ডের পর অ্যাডলফ হিটলার বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলে ভন ওসিটস্কি গ্রেপ্তার হন। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা প্রথম কোনো ব্যক্তি ওসিটস্কি, যিনি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটিতে ভূষিত হন।
নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে হিটলার জার্মানির সব নাগরিককে যে কোনো বিভাগে নোবেল গ্রহণ করতে নিষেধ করেছিলেন। ১৯৩৮ সালে বন্দি অবস্থায়তেই তিনি মারা যান।
১৯৯১: অং সান সু চি, মিয়ানমার: মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেতা গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ের অন্যতম প্রতিবাদী হিসেবে পরিচিত অং সান সু চি ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন। তার নাম যখন ঘোষিত হয়, তখন তিনি সামরিক নেতৃত্বের অভ্যুত্থানে বন্দি হয়ে কারাগারে ছিলেন। সু চি আশঙ্কা করেছিলেন, অসলো ভ্রমণ করলে তাকে মিয়ানমারে ফিরে যেতে দেওয়া হবে না। ১৯৯১ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সু চির পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন তার দুই ছেলে ও স্বামী। প্রতীকীভাবে, তার অনুপস্থিতি চিহ্নিত করতে মঞ্চে একটি খালি চেয়ার রাখা হয়েছিল।
২০১০: লিউ জিয়াওবো, চীন: জেলে থাকা অবস্থায় চীনা ভিন্নমতাবলম্বী লিউ জিয়াওবো ২০১০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন। বিদ্রোহের দায়ে তিনি ১১ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। চীনে মৌলিক মানবাধিকারের জন্য তার দীর্ঘ এবং অহিংস সংগ্রামের জন্য লিউ-এর চেয়ার প্রতীকীভাবে খালি রাখা হয়েছিল ও পুরস্কারটি হস্তান্তর করা হয়নি। পুরস্কার ঘোষণার পর তার স্ত্রী লিউ জিয়াকে গৃহবন্দী করা হয়, এমনকি তার তিন ভাইকে চীন ত্যাগ করতে বাধা দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে ৬১ বছর বয়সে একটি চীনা হাসপাতালে লিভার ক্যান্সারে মারা যান তিনি। বন্দী অবস্থায় মারা যাওয়া দ্বিতীয় নোবেল বিজয়ী তিনি।
২০২২: আলেস বিলিয়াতস্কি, বেলারুশ: বেলারুশিয়ান মানবাধিকারকর্মী আলেস বিলিয়াতস্কিকে ২০২১ সালের জুলাই মাসে বন্দি করে সরকার। মানবাধিকার ও গণতন্ত্রে ভূমিকা রাখায় ২০২২ সালে রাশিয়ান অধিকার গোষ্ঠী মেমোরিয়াল ও ইউক্রেনের নাগরিক স্বাধীনতা কেন্দ্রের সঙ্গে মিলিতভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান তিনি। কর ফাঁকির অভিযোগে কয়েক মাস ধরে লুকাশেঙ্কোর শাসনের বিরুদ্ধে গণ-বিক্ষোভের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নোবেল পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিলিয়াতস্কির পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন তার স্ত্রী নাটালিয়া পিনচুক। মার্চ মাসে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।