জন্মভূমি ডেস্ক
গোটা ইউক্রেন জুড়ে জ্বলছে রাশিয়ার ত্রি-মুখী হামলায়। আর বিশ^ শক্তিগুলো চেয়ে চেয়ে দেখছে। বিশে^র পরাশক্তিগুলোর আধিপত্যের কেন্দ্র করে ভ‚-রাজনীতির দাবার গুটি হিসেবে ইউক্রেন আজ রক্তাক্ত। পরাশক্তি রাশিয়া এক চুল চাড় দেবে না। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্ররা ব্যবহার করতে চায় ইউক্রেনকে। যে কারণে ইউক্রেনের দলে ভেড়াতে ন্যাটোর আশ^াস। আর তাতেই রাশিয়া ক্ষুব্ধ। আমেরিকার নাকের ডগায় বসে যুগের পর যুগ কিউবা আর ভেনুজ্যুয়েলা যখন চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিব্রত করে যুক্তরাষ্ট্রকে। তেমন সুযোগ দিতে নারাজ ভøাদিমির পুতিন। রাশিয়ার সাবেক কেজিবি (রাষ্ট্রীয় প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা) প্রধান ভøাদিমি পুতিন একজন দক্ষ সামরিক কর্মকর্তা। প্রায় ৩০ বছর ধরে শক্তি সঞ্চয় করেছে রাশিয়া। যা কেন্দ্র বিন্দুতে পুতিন। একাধিকবার সংবিদান নিজেন মতো করে সংশোধন করে ক্ষমতা আকড়ে রেখে পুতিন এখন এখন বিশে^র নাম্বার ওয়ান এক নায়ক বা স্বৈরাচার। বিরুদ্ধ মত বা দল সেখানে পরাভ‚ত। সাবেক দক্ষ সামরিক কর্মকর্তা পুতিন আজ বিশ^ মোড়লদের বিরুদ্ধে শিক্ষা দিতে তার প্রতিবেশি ছোট রাষ্ট্র ইউক্রেনে হামলা করে তছনছ করে দিচ্ছে। লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে বিশ^শক্তিগুলো ইউক্রেনের পাশে থাকার কথা দিলেও কার্যাত গত দুই দিনে নাস্তানাবুদ ইউক্রেন নিজেই কোনো রকমে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ^ শক্থিধর দেশগুলো চেয়ে চেয়ে দেখছে। তাইতো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছে একাই লড়ছি।
\ ২০০ সৈন্য হত্যা করে কিয়েভের বিমানবন্দর দখলে নিল রাশিয়া \
আগ্রাসনের দ্বিতীয় দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছের প্রধান একটি বিমানবন্দর দখলে নিয়েছে রুশ সৈন্যরা। প্রায় ২০০ হেলিকপ্টার ব্যবহার করে অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের দুই শতাধিক সৈন্যকে হত্যার পর ওই ঘাঁটি দখল নেওয়া হয়েছে বলে শুক্রবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স বলছে, হোসটোমেল বিমানঘাঁটি দখল করতে ২০০টি হেলিকপ্টার এবং সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ডিভিশন ব্যবহার করা হয়েছে। হোসটোমেল বিমানবন্দর দখলে নেওয়ায় ভারী সামরিক সরঞ্জাম এবং সৈন্য পরিবহনকারী রাশিয়ার বিমান অবতরণ করতে পারবে সেখানে। বিমানবন্দরটিতে দীর্ঘ রানওয়ে থাকায় রাশিয়া থেকে সরাসরি কিয়েভের ওই বিমানবন্দরে সৈন্য পরিবহন করা যাবে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগোর কোনাশেনকোভ বলেছেন, রাশিয়ান বিমানবাহিনী হোসটোমেল দখলে নেওয়ার জন্য ২০০টি হেলিকপ্টার ব্যবহার এবং ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনীর ২০০ জনেরও বেশি সদস্যকে হত্যা করেছে।
তবে এই অভিযানে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর কোনো হতাহত হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। যদিও ইউক্রেন পাল্টা দাবি করে বলেছে, হোসটোমেল বিমানবন্দরে সংঘর্ষে ব্যাপক রুশ সৈন্য হতাহত হয়েছে। এদিকে, কিয়েভ শহরের মেয়র বলেছেন, ইউক্রেনের রাজধানী এখন প্রতিরক্ষামূলক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি বলেছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের নির্দেশে অভিযান শুরুর পর বৃহস্পতিবারই রুশ সৈন্যরা কিয়েভের উপকণ্ঠে পৌঁছায়। সেখানে পৌঁছানোর পর হেলিকপ্টার করে রাশিয়ার সৈন্যরা ওবোলোনস্কির কাছের একটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়।
এদিকে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী অস্ত্র সমর্পণ করলেই কেবল কিয়েভের সঙ্গে আলোচনায় মস্কো প্রস্তুত বলে জানিয়ে দিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, নব্য-নাৎসিরা ইউক্রেন শাসন করুক মস্কো তা চায় না। শুক্রবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রুশ সৈন্যদের প্রবেশের পর এসব কথা বলেছেন তিনি।
সের্গেই লাভরভ আরও দাবি করেছেন, রাশিয়া চায় ইউক্রেনের জনগণ স্বাধীন হোক এবং স্বাধীনভাবে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ থাকুক।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর জেরে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এর জবাবে রাশিয়াও পাশ্চাত্যের দেশগুলোর ওপর পাল্টা নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দিয়েছে। শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক সংবাদ সম্মেলনে পশ্চিমের দেশগুলোর উদ্দেশে এই সতর্কবার্তা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে পেসকভ আরও বলেন, পাশ্চাত্যের দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া সমস্যায় পড়বেÍ এটি সত্য, কিন্তু সেসব সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে না; কারণ গত কয়েক বছর ধরে রাশিয়া বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে।
\ বিশ্বশক্তিগুলো দূরে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখছে: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট \
রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একাই লড়ছেন বলে জানালেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলো দূরে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখছে। খবর বিবিসির।
যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য একটি ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রতি আহŸান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
ওই ভিডিওতে তিনি বলেন, কীভাবে বৈরিতার অবসান ঘটানো যায় এবং যুুদ্ধ বন্ধ করা যায়, এ নিয়ে আগে বা পরে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে রাশিয়াকে।
তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি এই আলোচনা শুরু হবে, রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতি ততো কম হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত হামলা বন্ধ না হবে, আমরা আমাদের দেশ রক্ষায় লড়াই করে যাবো।
তিনি বলেন, রাজধানী ছেড়ে যেতে তার কোন ইচ্ছা নেই, যদিও তিনি জানেন, তিনিই রাশিয়ার এক নম্বর লক্ষ্য।
রাশিয়ার হামলা বন্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি সহায়তার জন্য অনুরোধ জানিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) সকালে আমাদের একাই দেশ রক্ষায় যুদ্ধ করতে হচ্ছে। গতকালও বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলো দূরে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখেছে।’
\ ১ হাজারের বেশি রুশ সৈন্য নিহত, দাবি ইউক্রেনের \
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে। রাশিয়া প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কোনো সশস্ত্র সংঘাতেই এত বেশি সৈন্যের প্রাণহানির শিকার হয়নি।
অন্যদিকে রয়টার্স বলেছে, সংঘর্ষে রাশিয়ার প্রায় ২ হাজার ৮০০ সৈন্য নিহত ও ৮০টি ট্যাংক ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালইয়ার।
স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি। হান্না বলেছেন, রুশ সৈন্যরা আরও ৫১৬টি সাঁজোয়া যুদ্ধ যান, ১০টি বিমান এবং সাতটি হেলিকপ্টার হারিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সৈন্যরা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে পৌঁছানোর কারণে দেশটিতে রাশিয়ার আক্রমণের চিত্র দ্রæত পাল্টে যেতে শুরু করেছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে ইউক্রেনে সংঘর্ষে হতাহতের অনেক পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। তবে সেসব পরিসংখ্যান নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীবিষয়ক মন্ত্রী জেমস হিপ্পি বলেছেন, রাশিয়ার ৪৫০ সৈন্য এবং ইউক্রেনের ৫৭ বেসামরিকসহ কমপক্ষে ১৯৪ সৈন্য নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, জাতিসংঘ বলেছে, ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৫ বেসামরিক নিহত এবং আরও ১০২ জন আহত হয়েছে।
\ অবরুদ্ধ কিয়েভ, সব ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ \
রুশ অভিযানের দ্বিতীয় দিনেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন রাজধানী শহরটি রাতভর ভয়াবহ রকেট হামলার শিকার হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে যে, ‘বিধ্বংসী গ্রæপ’ কিয়েভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিøনকেন বলেছেন, শহরটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়তে পারে।
এর আগে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান রুশ অভিযানে তার দেশের ১৩৭ জন সেনা ও বেসামরিক নিহত হয়েছে। তবে এই হিসাব কিয়েভে রাতভর হামলা চলার আগের। রুশ বাহিনী কিয়েভ অভিমুখের সব সড়কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটি এবং সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর সড়কগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় রুশ বাহিনী।
রাজধানীতে হামলা শুরুর পর কিয়েভের হাজার হাজার বাসিন্দা বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন কিংবা শহর ছেড়ে পালিয়েছেন। কিয়েভ থেকে দশ কিলোমিটার দূরে ইউক্রেনের প্রধান বিমানবন্দর হোস্টোমেল এর নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রুশ ও ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছে, শত্রæ গ্রæপ ইতোমধ্যে শহরে ঢুকে পড়েছে।
জ্বলছে ইউক্রেন
Leave a comment