সোহেল আহমেদ, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : মাত্র সাত মাসে আট হাজারের মত মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। এর মধ্যে ১ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ঝুলে থাকা প্রায় তিনশত মিসকেস মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অফিসে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও দালাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এভাবে সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা ও দ্রুততার জন্য চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে খুলনা বিভাগের শীর্ষে উঠে আসে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস। এর আগে তিনমাসে জেলার শীর্ষ স্থান অর্জন করেন নাগরিক সেবা জনগুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরটি।
চলতি বছরের ২২ এপ্রিল কালীগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে মো. শাহিন আলম যোগদানের পর এ অফিসের চিত্র পাল্টে যায়। তিনি ৩৮ তম বিসিএস এর কর্মকর্তা। এ্যাসিল্যান্ড হিসেবে কালীগঞ্জ তার প্রথম কর্মস্থল। মাত্র সাত মাসে জনবল সংকট, দক্ষতার ঘাটতি আর সার্ভারে সমস্যার মধ্যেও নাগরিক সেবা দিয়ে উপজেলাবাসির নজরে এসেছেন তরুণ এ কর্মকর্তা।
নামজারি নিষ্পত্তির সরকার নির্ধারিত সময়সীমা ২৮ দিন এবং মিসকেস এর ক্ষেত্রে ৯০ দিন। ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩০০ এর মত মিসকেস পেন্ডিং ছিল। গত সাত মাসে সকল মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। এসিল্যান্ড এর রুমসহ অফিসের প্রত্যেক রুমে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আগে শুধু বাইরে ক্যামেরা ছিল।
সেবার প্রদানে জবাবদিহীত নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অফিসের কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি এবং অন্যত্র বদলিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাবলিক টয়লেট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, আইডি কার্ড প্রদান, রেকর্ড রুম সংস্কারসহ বিভিন্ন ভিজিল্যান্স কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। পৌরসভার সহায়তায় এলইডি সোলার লাইট সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।
দালালদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে সেবাগ্রহিতার ফোন নাম্বারসহ আবেদন ও শুনানীতে নিজেদের উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে। একই সময়ে উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসসমূহ পরিদর্শন করে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অফিসে যাতে জনগণকে ৫ মিনিটের বেশি অপেক্ষা না করতে হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কালীগঞ্জ কাশিপুর গ্রামের মুস্তাফিজুর রহমান জানান, আমি একটি নামজারির আবেদন করেছিলাম। সরকার নির্ধারিত সময় ২৮ দিন হলে মাত্র ১৩ দিনে আমার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ফি নিয়ে অল্প সময়ে নামজারি আমার কাছে একেবারেই অকল্পনীয়। এর আগেও আমি ও আমার পরিবার একই ধরনের নামজারির আবেদন করে দুই থেকে চার মাস সময় লেগেছিল, সাথে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছিল।
কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা জহির রায়হান জানান, গত দেড় বছর আগে করা আমার একটি মিসকেস আবেদন ছিল। বর্তমান ভূমি অফিসার আসার পর আমার অভিযোগটি জানিয়েছিলাম। এরপর মাত্র ৪০ দিনে তা সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছে একই অফিসে একটি মিসকেস শেষ হতে আগে ১ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত লেগে যেত। এখন এক-দুই মাসের মধ্যে সরকার নির্ধারিত ফিতে সে কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে মো. শাহিন আলম যোগদানের পর চিত্র পাল্টে গেছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শাহিন আলম বলেন, কালীগঞ্জকে ভূমি সেবার একটি রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে যেতে চাই। জনগণের হয়রানি দূরীকরণ, অফিসের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে সার্ভার জটিলতায় সারাদেশে অনলাইন সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। জানুয়ারি মাসে নতুন ভার্সন উদ্বোধন হলে সমস্যার সমাধান হবে আশা করা যায়। সেবাগ্রহীতাসহ সাধারন মানুষের সহযোগিতা পেলে সেবার মান আরো বাড়বে বলে মনে করেন এ ভূমি কর্মকর্তা।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ভূমি অফিসে ১০ বছরের সব মামলা নিষ্পত্তি
Leave a comment