ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে ড্রাগন ফলের চাষ। এই ফলের চাহিদা থাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন চাষিরা। এরই মধ্যে কোনও কোনও চাষি ড্রাগন চাষে ক্ষতিকর টনিক ব্যবহার করছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বহু গুণে গুণান্বিত পুষ্টিকর ড্রাগন ফলের গাছ ক্যাকটাস জাতীয়, লতানো। তাই এই গাছ খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হয়। একটি খুঁটিতে চার থেকে পাঁচটি ড্রাগন চারা দেওয়া যায়। এই ফল চাষে ক্ষতিকর টনিক ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা। কারণ ক্ষতিকর টনিক ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। কৃষকরা জানিয়েছেন, চাষ পদ্ধতি সহজ, বেশি সময় ধরে ফল পাওয়া এবং অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় জেলায় দিন দিন বাড়ছে ড্রাগন ফলের চাষ। কিন্তু একশ্রেণির চাষিরা অধিক মুনাফার লোভে অনুমোদনহীন ড্রাগন টনিক ব্যবহার করে স্বাদহীন অধিক ওজনের ফল উৎপাদন করছেন। এতে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এসব ফল কিনে ঠকছেন ক্রেতারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, গত মৌসুমে জেলায় ৮৬২ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল ১৯ হাজার ২২১ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি ফলন ছিল ২২ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন। এর আগের মৌসুমে ২৫১ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে এক হাজারের বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। চাষে জড়িত কয়েক হাজার কৃষক। এরই মধ্যে গাছে ফুল এসেছে। আগামী ২৫-৩০ দিনের মধ্যে বাজারে উঠবে ফল। কিন্তু ক্ষতিকর টনিক ব্যবহারের ফলে মানুষজন এই ফল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে বেকার হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। কয়েকজন ড্রাগন চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনও কোনও চাষি অধিক মুনাফার আশায় ড্রাগন টনিক ব্যবহার করছেন। এতে ফলের আকার ও ওজন বেড়ে যায়, রঙ পরিবর্তন হয়। প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফলের রঙ লাল হলেও টনিক ব্যবহৃত ফল লাল-সবুজ হয়। টনিক ব্যবহৃত ফলে স্বাভাবিক স্বাদ থাকে না।
কালীগঞ্জ উপজেলার বানুড়িয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, ‘লাল-সবুজ ড্রাগন ফলের স্বাদ লাল রঙয়ের ড্রাগনের মতো নয়। লাল-সবুজ ড্রাগনের ভেতরে শক্ত শক্ত কুণ্ডলী আকার হয়ে থাকে। চিকিৎসক আমার ছেলের হজমের সমস্যা দূর করতে ড্রাগন খাওয়াতে বলেছেন। কিন্তু ক্ষতিকর টনিকের কারণে ড্রাগন খাওয়াতে ভয় পাচ্ছি।’ কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ড্রাগন চাষি কবিরুস সোবহান বলেন, ‘কোনও কোনও চাষি ড্রাগনে ক্ষতিকর টনিক ব্যবহার করছেন। এতে ড্রাগন চাষে ধস নামার শঙ্কা আছে। কারণ মানুষজন এসব ফল খেয়ে প্রতারিত হলে মুখ ফিরিয়ে নেবে। ড্রাগনে ক্ষতিকর টনিক ব্যবহার বন্ধে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’
ড্রাগনে টনিক ব্যবহার মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আজগর আলী। তিনি বলেন, ‘আমরা চাষিদের টনিক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করছি। এরপরও যদি তারা টনিক ব্যবহার বন্ধ না করেন তাহলে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে কঠোর ব্যবস্থা নেবো। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে দণ্ড-জরিমানার ব্যবস্থা করা হবে।’
ঝিনাইদহে বেড়েছে ড্রাগন ফলের চাষ, ক্ষতিকর টনিক ব্যবহার
Leave a comment