আল আজিম, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) : দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়েছে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চশ শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের শ্রেনী পাঠদান। শ্রেনীসমুহে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানে মনোযোগী এক নারী শিক্ষিকাসহ অপর দুই পুরুষ শিক্ষক। এক ছাদের নিচে তিনটি শ্রেনীর পাঠদানের কারনে শিক্ষকদের বক্তব্য ধরতে পারছে না অধিকাংশ শিক্ষার্থী। একইভাবে একাধিকবারের চেষ্টায় ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পৌছে জেনে নিতে হচ্ছে তাদের দেয়া ব্যাখ্যা।
সকাল ৯ঃ ১৫ মিনিট থেকেও কক্ষ তিনটির চিত্র ছিল অভিন্ন। শিশু ও প্রথম শ্রেনীসহ দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ুয়াদের নিয়ে সে সময়ের পরিবেশ ছিল আরও কোলাহলপুর্ন আর কঠিন। শতাধিক শিক্ষার্থীকে পাশাপাশি বসিয়ে একত্রে তাদের পাঠদানে গলদঘর্ম অবস্থা ছিল ভিন্ন তিন শিক্ষকের।
এমন অবস্থার দেখা মিললো শ্যামনগর উপজেলার ৭২ নং পুর্ব কৈখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছয় দশক পুর্বে কৈখালী ইউনিয়নের সুন্দরবনপাড়ের প্রত্যন্ত জনপদে গড়ে উঠে প্রতিষ্ঠানটি। পাশর্^বর্তী সাপখালী, জয়াখালী, বৈশখালীসহ পুর্ব কৈখালী গ্রামের শিশুদের জন্য একমাত্র অবলম্বন ঐ বিদ্যালয়। এতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের পাশাপাশি মেধার ক্ষেত্রে ঈশর্^নীয় সাফল্য সত্ত্বেও অভাব শুধু পাঠদান জায়গা।
সরেজমিনে দেখা যায় দু’টি ভবনের দ্বিতীয়টি পুরোপুরি ব্যবহার অনুপযোগী। ২০০৬ সালে পিইডিপি-২ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত দ্বি-তল ঐ ভবনের পিলার ও ছাদের মরচে পড়া রড উম্মুক্ত হয়ে গেছে। আবার খসে পড়া পলেস্তারা থেকে শিক্ষক মন্ডলীর মুখ মাথা রক্ষার্থে অতি ঝুঁকিপুর্ন ভবনটিতে অবস্থিত পাঠাগার ও অফিস কক্ষে টাঙানো হয়েছে সামিয়ানা।
নিতান্ত বাধ্য হয়ে তাই শুধুমাত্র পাঠদানের কাজে ব্যবহার হচ্ছে কারিতাস নির্মিত ৩০ বছর পুরানো সাইক্লোন শেল্টারের হলরুম। প্রায় দুই হাজার বর্গ ফুট আয়তনের একমাত্র কক্ষই এখন তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠ গ্রহনের একমাত্র বিকল্প।
ভীতি ছড়ানো জীর্ণশীর্ণ সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় ভবনের একমাত্র কক্ষে প্রবশে করে দেখা যায় দক্ষিন পাশে তৃতীয় শ্রেনীর বাংলা বিষয়ের পাঠদানে ব্যস্ত মোশারফ হোসেন। পশ্চিম পাশে দেয়াল ঘেঁষে ১৪টি বেঞ্চ লাগিয়ে সেখানে চতুর্থ শ্রেনীর গণিত ক্লাস নিচ্ছেন আয়েশা খাতুন। একই সময়ে উত্তর পাশে পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রীর বাংলা বিষয়ের পাঠদানে মগ্ন সাইফুল্লাহ মিহিন।
পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী তাসনিমা আক্তার রাইয়া, জাকিয়া খাতুন ও নাজমুল হাসানসহ অন্যরা জানায় একই কক্ষে পৃথক তিন শ্রেনীর পাঠদানের কারনে পড়া বুঝতে তাদের সমস্যা হয়। আবার পাশাপাশি ক্লাস হওয়ায় বেশিরভাগ সময় ক্লাসে থাকা শিক্ষকের কথায় মনোযোগ দিতে পারে না। এমনকি ভঙ্গুর অবস্থায় উপনীত তিন দশক পুরনো উক্ত ভবনে পাঠ গ্রহন নিয়েও তাদের মধ্যে আতংক কা করে।
প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়ে তৃতীয় শ্রেনীর রেজাউলসহ চতুর্থ শ্রেনীর আছিয়া ও আয়েশা খাতুন জানায় পাশাপাশি ক্লাসের কারনে শিক্ষকদের কথা তারা শুনতে পান না। তাদের কথাও শ্রেনী শিক্ষকরা বুঝতে না পেরে রাগান্বিত হয়- উল্লেখ করে তারা জানায় একত্রে সবার ক্লাস হওয়ায় অনেক সময় অভিভাবকরা অসন্তোষ প্রকাশ করে। এমনকি মাঝেমধ্যে বিদ্রালয়ে যেতেও নিষেদ করে বলে এসব শিক্ষার্থীর দাবি।
এসব বিষয়ে সামছুর রহমান নামের এক অভিভাবক জানান, দু’টি ভবনের একটি সম্পুর্ন নষ্ট। অপরটির পার্টিশানহীন একটিমাত্র কক্ষ। বার বার বলা সত্ত্বেও কোন সুরাহা না হওয়ায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী চার/পাঁচ কিলোমিটার দুরের মেহেজাবিন স্কুলে গেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবাশীষ মন্ডল জানান শ্রেনী কক্ষ সংকটে পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে। ২০০৬ সালে নির্মিত ভবন সম্পুর্ন ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় ১৯৯৪ নির্মিত এক কক্ষের ভবনে পাঠদানের কাজ চালাতে হচ্ছে। পার্টিশান না থাকায় সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের মত শিক্ষকদেরও নানান সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়।
তিনি আরও জানান দুই বছর পুর্বে আবেদন সত্ত্বেও এলজিইডি কতৃপক্ষ ব্যবহার অনুপযোগী ভবনকে অদ্যাবধি পরিত্যক্ত ঘোষনাসহ ও নুতন ভবন বরাদ্দ করেনি। বাধ্য হয়ে তাই পরিত্যক্ত ভবনে দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি অপর ভঙ্গুর এক কক্ষের ভবনে পাঠদান চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
এবিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ এনামুল হক জানান একটি ভবন পরিত্যক্ত ঘোষনার আবেদনের বিসয়ে তার জানা নেই। তবে পার্টিশান ছাড়া তিন শ্রেনীর একই কক্ষে পাঠদান খুবই কষ্টকর। বিষয়টি দ্রুতই নিরসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ জাকির হোসেন জানান প্রশিক্ষনের কারনে বাইরে আছেন। কর্মস্থলে ফিরে পরিদর্শন শেষে ভবন পরিত্যক্তে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে নুতন ভবন বরাদ্দসহ পার্টিশানের বিষয়ে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট প্রস্তাবনা পাঠানোর কথা জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন জানান মাত্র দু’তিন দিন পুর্বে শ্যামনগরে যোগদান করেছি। তারপরও বিষয়টি জানতে পেরে ডিডিসিসির সভায় উপস্তাপন করা হয়েছে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত