সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরা। সুন্দরবনের একাংশ নিয়ে গঠিত এই সাতক্ষীরা জেলায় রয়েছে শত শত নদ-নদী ও খাল বিল। রয়েছে ছয় শতাধিক বেড়িবাঁধ। এসব বেড়িবাঁধের অধিকাংশই দূর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ। আইলা, বুলবুল, সিডর, ইয়াসের মতো ঘুর্নিঝড়ে এসব বাঁধগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ।
জানা গেছে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর আওতাধীন বেড়িবাঁধ রয়েছে ৩৮২ কিলোমিটার। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এ রয়েছে ৩০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এসব বেড়িবাঁধের মধ্যে ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে অতি দূর্বল বা ঝুঁকিপূর্ণ। ঘুর্ণিঝড় রেমাল বা অন্য যেকোন ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানলে ঝুঁকিপূর্ণ এসব বাঁধগুলো ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে কোটি কোটি টাকার সম্পদের।
এলাকায় বসবাসকারী আনিসুজ্জামান সুমন, আব্দুর রহিমসহ অনেকেই জানিয়েছেন, ষাটের দশকে মাটি দিয়ে তৈরি এসব ভেড়িবাঁধ ছিলো ১৪ ফুট উঁচু ও ১৪ ফুট চওড়া। কিন্তু এখন ২৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও চওড়ার অর্ধেকও অবশিষ্ট নেই। অর্থাভাবে দীর্ঘদিনেও প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্কার করতে না পারায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ষাটের দশকে তৈরি বেড়িবাঁধের বেশিরভাগই দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে বাঁধগুলো ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, নিম্নচাপ, লঘুচাপ, আমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে লোকালয়ে পানি প্রবেশ ঠেকাতে পারছে না। দুর্বল এসব ভেড়িবাঁধের কারণে বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। তাছাড়া নিম্নচাপ এবং অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারেও বাঁধ উপচিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। ফলে উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
আরো জানা গেছে, উপকূলীয় এই জেলার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা কম। সেগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়া, বাঁধগুলো দীর্ঘদিনেও ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। লবণাক্ত মাটি দিয়ে উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো তৈরি। উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ নদ-নদীর পানিও লবণাক্ত। লবণাক্ত পানি বেড়িবাঁধের মাটির বন্ডিং দুর্বল করে ফেলে। ফলে অতিরিক্ত জোয়ারের পানির চাপে বাঁধের মাটি ধ্বসে যায়। তাছাড়া, বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে চিংড়ি ঘেরে লবণ পানি তোলার কারণেও বেড়িবাঁধ দুর্বল হয়ে গেছে। নানাবিধ কারণে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দুর্বল বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। বাস্তহারা হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ।
সম্প্রতি সব চেয়ে বড় দুর্যোগ বলে মনে করা হয় নদী ভাঙন। এ নদী ভাঙন যেন উপকূলের মানুষের পিছু ছাড়ছে না। এক একটি ঘূর্ণিঝড়ের পরে উপকূলের মানুষের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয় সেগুলো কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারো নতুন ঘূর্ণিঝড় নিয়ে উপকূলবাসী শঙ্কিত হয়ে পড়ে। উপকূলের মানুষের এ ধরনের দুর্যোগ থেকে পরিত্রান পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা।
তবে, অর্থ ছাড়ের সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাবি, বাজেট নেই। তারপরও বেড়িবাঁধ জরুরি সংস্কার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ মোকাবেলায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। উপকূলীয় অঞ্চলে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় লাখো মানুষ

Leave a comment