
মোঃ এজাজ আলী : অল্প বয়সেই পরিবারের অভাব অনটন, পারিবারিক কলহ, লেখাপড়ায় অনাস্থা প্রকাশসহ বিভিন্ন কারনে সম্মুখীন হয়ে শিশুরা আত্ননিয়োগ করছে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে। সাধারনত যে বয়সে স্কুলে গিয়ে হাসি আনন্দে বেড়ে ওঠার কথা সে বয়স থেকে ধরতে হচ্ছে অভাবী সংসারের হাল এসব শিশুদের। সম্প্রতি সময়ে শিশুদের অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত হতে দেখা যাচ্ছে নগরীরসহ খুলনার আশপাশে।
নগরীর বিভিন্ন মোটর গ্যারেজ, ওয়ার্কশপ ঘুরে দেখা গেছে, অল্প বয়সী শিশুরা বিরতীহীনভাবে কাজ করে চলেছে। কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশই পারিবারিক অস্বচ্ছলতার জন্য বাধ্য হয়ে চলে এসেছে এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা শেখপাড়া, পাওয়ার হাউজ মোড়, ফেরিঘাট, ডাকবাংলা, ময়লাপোতা. পিটিআই মোড়, গল্লামারী, জোড়াগেট, বয়রা, বৈকালি, খালিশপুর ও দৌলতপুর এসব এলাকায় হরহামেশাই এসব শিশু শ্রমিকদের দেখা মিলছে। যারা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিজেকে নিযুক্ত করেছে। যাদের অধিকাংশকে দেখা গেছে, বিভিন্ন মোটর সাইকেল গ্যারেজ, লেদ, ওয়ার্কশপ, হোটেল-রেঁস্তোরায়, কারখানাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ এমনকি যানবাহন চালাতেও দেখা গেছে। এমনিতেই জীবন যাত্রার মান ব্যাপক বেড়ে গেছেঅ আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে দিন দিন বেড়ে চলেছে শিশুশ্রম। শিশুশ্রম বন্ধে কঠোর আইন থাকলেও বেআইনীভাবে শিশুদের নিয়োগ বন্ধ হচ্ছে না। স্বল্প খরচেই হাতের নাগালেই সহজেই পাওয়া যায় সহজলভ্য শিশুদের। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাক্তিবর্গ শ্রম আইনের তোয়াক্কা না করে এসব শিশুদের আত্ন নিয়োগ করে কাজে লাগাচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। সুধি সমাজের ব্যক্তিবর্গ জানিয়েছেন, দারিদ্রতা, পারিবারিক বিচ্ছেদ, স্থায়ী বিচ্ছেদ, পিতা-মাতার পেশা, অভিভাবকদের মৃত্যুসহ বিভিন্ন কারনে শিশুরা স্কুল বা স্বাভাবিক জীবন হতে সরে এসে কোনো না কোনো কাজে যোগ দিচ্ছে, যার দরুন দিন দিন বেড়েই চলেছে শিশু শ্রমের সংখ্যা। শ্রম আইন সূত্রে জানা যায়, কোনো প্রতিষ্ঠানে অল্প বয়সীদের কাজে নিয়োগের আগে সে শিশু না কিশোর বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে জন্ম নিবন্ধন সনদ, স্কুল সার্টিফিকেট বা রেজিষ্ট্রার্ড চিকিৎসকের প্রত্যয়ন পত্রের ভিত্তিতে। কোন অভিভাবক তার কিশোর ছেলেকে কাজের জন্য একজন রেজিষ্ট্রার্ড চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। কিশোরকে পরীক্ষা করে কাজে তার সক্ষমতা কতটুকু সে বিষয়ে চিকিৎসক অভিভাবকদের জানাবেন। শ্রম অধিদপ্তর খুলনার পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত শহরের বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শনসহ শিশুশ্রম বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকেন। পাশাপাশি শিশুশ্রম বন্ধে প্রতিষ্ঠানের মালিক, অভিভাবকসহ শিশুকেও বোঝানো হয়ে থাকে। শিশু শ্রম বন্ধে ইতিমধ্যে সরকার ২৮৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। খুলনায় জরিপের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ওই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম বন্ধে খুলনাসহ সারাদেশে ১ লক্ষ শিশুকে প্রাথমিক পর্যায়ে ৬ মাসের কারিগরী শিক্ষা ও তার পরিবারকেও ভাতা দেওয়া হচ্ছে।