জন্মভূমি ডেস্ক : চুয়াডাঙ্গায় মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। টানা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
রোববার (৯ এপ্রিল) সকালে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঠেকেছে। তীব্র গরমে সড়কে মানুষের পাশাপাশি যানবাহন চলাচলও কমে গেছে।
গরমে রোজাদারদের অবস্থাও ওষ্ঠাগত। বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাচালক, ঠেলাগাড়ি ও ভ্যানচালকরা পড়েছেন বিপাকে। তারা তীব্র রোদে কাজ করতে পারছেন না। অনেককে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে। জরুরি কাজ না থাকলে মানুষজন তেমন বাইরে বের হচ্ছেন না। এর প্রভাব পড়েছে আসন্ন পহেলা বৈশাখ ও ঈদের বেচাকেনায়।
চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রিন্স প্লাজা মার্কেটের রাজু ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী রাজু আহমেদ বলেন, সন্ধ্যার পর ক্রেতা কিছুটা বাড়লেও গরমের কারণে সারাদিনই খদ্দেরের দেখা মিলছে না।
একই মার্কেটের ব্যবসায়ী শাকিল মিয়া বলেন, ‘আমরা নিজেরাই এ তাপমাত্রায় দোকানে বসতে পারছি না। কাস্টমার কেমনে আসবে? ঈদের কেনাকাটায় ভাটা পড়লো গরমে।’
ব্যাটারিচালিত পাখিভ্যান চালক টিপু বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে গরমের কারণে দিনের বেলায় তেমন ভাড়া পাচ্ছি না। সন্ধ্যার পরও রোজার কারণে ভাড়া নেই। সামনে ঈদ। কী যে করবো, ভেবে পাচ্ছি না।’
রিকশাচালক শুকুর আলী বলেন, ‘প্রচণ্ড রোদে দিনে যাত্রী নেই। আবার ইফতার শেষে তারাবি নামাজ। তখনো যাত্রী থাকে না। গরিব হলে খুব সমস্যা।’
বেসরকারি চাকরিজীবী রত্না মালিক ও ব্যাংক কর্মকর্তা আবির হাসান রাজু বলেন, এত তাপমাত্রায় অফিস করা ও রোজা রাখা কষ্টের। তারপরও তারা রোজা রাখছেন। গরম থেকে পরিত্রাণে বৃষ্টি প্রার্থনা করেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত একটানা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হচ্ছে। গত ৩ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও শনিবার (৮ এপ্রিল) ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, রোববার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এটি চলতি মৌসুমের ও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এছাড়া গত সাতদিনও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড হয়েছে। দু-তিনদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে তাপমাত্রা আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা কর্কটক্রান্তি রেখার কাছাকাছি হওয়ায় মার্চ ও এপ্রিলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় মার্চে গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এপ্রিলে তাপমাত্রা আরও বেড়েছে।