মোঃ এজাজ আলী
মহামারী করোনর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর খুলনাসহ বিভাগের একাধিক জেলা হয়ে উঠে করোনার হট স্পট। যে কারণে গত ২২ জুন থেকে খুলনায় শুরু কঠোর লকডউন। এ সময় যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়াতে অঞ্চল ভিত্তিক কঠোর লকডাউন চলে। একপর্যায়ে সারাদেশে করোনার প্রকোপ ভয়াবহ রূপ ধারণ করলে ১ জুলাই থেকে সারা দেশে কঠোর লকডাউন শুরু হয়। খুলনায় আগে থেকে নেওয়া কঠোর লকডাউনের সঙ্গে যুক্ত হয় জাতীয়ভাবে নেওয়া কঠোর লকডাউনে। পরবর্তীতে পবিত্র ঈদুল আযহার কারণে সারাদেশে লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয় ২২ জুলাই পর্যন্ত। ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে আবার শুরু হয় কঠোর লকডাউন। যা আগামীকাল ১১ আগস্ট পর্যন্ত বলবত রয়েছে। ফলে খুলনায় স্থানীয় এবং জাতীয়ভাবে দুই দফায় ৪০ দিনের কঠোর লকডাউনে পড়ে। আগামীকাল বুধবার তা অবসান হতে চলেছে।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ রোববার এ বিষয়ে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তাতে ১১ আগস্ট থেকে সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস, যানবাহন,বিপণী বিতান ও দোকানপাট স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর শিল্প কারখানা গত ১ আগস্ট থেকে থেকেই খোলা রয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দফায় দফায় লকডাউনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ থাকায় একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী জমা পুঁজি ভেঙ্গে খরচ করেছেন। ধার দেনা করে সচল রেখেছেন সংসারে চাকা। অবশেষে লকডাউনের শিথিলের খবরে ব্যবসায়ীদের চোখে মুখে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে। কাল থেকে ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ ঘরবন্দি থেকে ফিরে যাবেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এই স্বপ্নে বিভোর ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার বা বিনোদন কেন্দ্র খোলার বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। গণ পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক এলাকার প্রতিদিন মোট যানবাহনের অর্ধেক গাড়ি রাস্তায় নামানের শর্ত দেওয়া হয়েছে। হোটেল-রোস্তোরাঁর ক্ষেত্রে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখতে হবে। করোনাভাইরাস মহামারীর দেড় বছরে এখনই সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পার করছে বাংলাদেশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ১ জুলাই থেকে দেশে লকডাউন জারি করা হলেও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে কোরবানির ঈদের সময় নয় দিন তা শিথিল করা হয়েছিল। ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই থেকে আবার লকডাউন শুরু হলেও এর মধ্যে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। এরপর ১ আগস্ট সব রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খোলার অনুমতি মেলে। চলমান এই লকডাউন ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানোর কথা গত ৩ আগস্টের বৈঠক শেষে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক। সেদিনই তিনি বলেছিলেন, এক সপ্তাহ ব্যাপকভিত্তিক টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনার পর ১১ আগস্ট থেকে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস খুলবে। সীমিত পরিসরে রোটেশন করে যানবাহন চলবে। শনিবার থেকে শুরু হওয়া ছয় দিনের এই টিকাদান কর্মসূচিতে সারা দেশে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ৩২ লাখ মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তবে মানুষের ব্যাপক সাড়া মেলায় তা ৩৫ লাখ ছাড়াবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারনা। কাজের প্রয়োজনে যারা বাড়ির বাইরে আসছে, তাদের টিকার অধিকার দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে জন প্রশাসন প্রতি মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন রোববার সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু দোকান পাট খুলতে হবে-সবাই যাতে স্বাস্থ্যবিধি মানে সেদিকে আমাদের জোর থাকবে। শনিবার থেকে গণ টিকা চালু করেছি, এটি ১২ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে। আমরা চাইব সবাই যেন মাস্ক পরে। আমরা টিকা কার্যক্রমের মধ্যে যারা দোকানদার, যাদের বাইরে যেতে হবে, মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, তাদের প্রায়োরিটি দিচ্ছি। ধাপে ধাপে আস্তে আস্তে সীমিত পরিসরে শিথিল করার চিন্তা আছে।
টানা ৪০ দিনের বিধি-নিষেধের অবসান কাল থেকে সচল হচ্ছে খুলনা
Leave a comment