
জন্মভূমি ডেস্ক : আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সংশোধিত আইনে তিন বাহিনীর সঙ্গে পুলিশ ও র্যাবেরও বিচার করা যাবে বলে মন্তব্য জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইবুনাল ১৯৭৩ অ্যাক্ট সংশোধন অধ্যাদেশ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম বলেন, এই আইনে একইসঙ্গে বিদেশে অপরাধ করলেও ট্রাইব্যুনালে বিচার করা যাবে। শুধু কোনো রাজনৈতিক দলের বিচার করা যাবে না।
প্রসিকিউটর তামীম বলেন, এই সংশোধনীতে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, এখানে সকল প্রকার বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক মানের করা হয়েছে। সরকার এটিকে গতকাল সংশোধন করেছে। এই আইনে আন্তর্জাতিকভাবে যে-সব গোল প্রশ্ন তুলা হত, সেসব বিষয়ই মিট আপ করে এই সংশোধন করা হয়েছে। এই আইনে আগে ডিফেন্স কাউন্সিলের জন্য আলাদা বিষয় ছিল না। এখানে এখন এ বিষয়ে একটি স্পেশাল সেকশন করা হয়েছে। আগে আসামিদের শুধু স্টেটমেন্ট দেওয়ার সুযোগ ছিল। এখন এই সেকশন সেভেনটিনকে বিস্তার আকারে করা হয়েছে। এখানে আসামি তার সকল প্রকার সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, আগে শুধুমাত্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে অপরাধ করলে এ আইনে বিচার করা হতো। এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে অথবা দেশের বাইরে থেকে অপরাধ করলে তার বিচার করা হবে। অথবা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে যদি কোনো বিদেশিও এই অপরাধ করে তাকেও বিচারের আওতায় আনা হবে। আগে বিভিন্ন কিছু মিলিয়ে গুমের সংজ্ঞায়িত করা হতো এখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ফোর্সফুল ডিজ অ্যাপিয়ারেন্স বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। গুমের জন্য স্পেশাল বিচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আগে এই আইনে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান ছিল না। সেটা এখন এই আইনে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই ট্রাইবুন্যালের আধীনে অন্তর্বর্তী কোনো আদেশ যেটা কনটেম টু কোর্ট ছিল সেটার এগিনেস্টে আপিল ডিভিশনে আপিল করতে পারবে যে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি। এখানে আগে ছিল আর্ম ফোর্সের বিরুদ্ধে এখানে আপিল করা যাবে। সেই শব্দটি এখন পরিবর্তন করে মেম্বার অব ডিসিপ্লিনারি ফোর্স অর্থাৎ তিন বাহিনীর সঙ্গে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আনসার বাহিনীকেও এখানে যুক্ত করা হয়েছে।
প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম বলেন, আগে আসামিদের তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হতো। আসামিদের প্রস্তুত করতে এখন সেখানে ৬ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। আগে আমরা সবচেয়ে বেশি ফেস করতাম অ্যাট দা টাইম চার্জ হেয়ারিং সকল সাক্ষীর নাম বা তালিকা দেওয়া হতো। এখন আইনের সেই পরিবর্তন এনে বলা হয়েছে ডিফেন্স এজ এনি স্টেজ অব ট্রায়েল তাদের সাক্ষীদের কোর্টে উপস্থাপন করতে পারবে। এখানে বলে দেওয়া হয়েছে এই সংশোধনী ২০০৯ সাল থেকে কার্যকর হবে।
এর আগে রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। গতকাল এই অধ্যাদেশের গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, সংসদ না থাকায় এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরিস্থিতি বিরাজ করার বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে ‘সন্তাষজনকভাবে প্রতীয়মান’ হওয়ায় এ অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
এর আগে গত ২০ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে খসড়া অনুমোদন এবং অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত হয়। বিদেশে বসে কেউ মানবতাবিরোধী অপরাধ করলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তা আমলে নেওয়ার সুযোগ রেখে অধ্যাদেশ জারির এ উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত আইনে আরও যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে সেগুলো হলো
(১) সেকশন ১ এ আগে এখতিয়ার ছিল শুধু বাংলাদেশে। এখন এখতিয়ার বাংলাদেশ সহ বাংলাদেশের বাইরেও।
(২) সেকশন ২ এর ক্লজ aa এর পরিবর্তে নতুনরূপে ডিসিপ্লিনড ফোর্স বলতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ র্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড আনসার বা আইনের দ্বারা সৃষ্ট অন্য কোন ফোর্সকে বুঝাবে।
(৩) সেকশন ৩ (২) এর ক্লজ এ তে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলতে নতুন কিছু যোগ হয়েছে যেমন forcible transfer of population, sexual exploitation, enforced disappearance, human trafficking, sexual slavery, enforced prostitution, forced pregnancy, enforced sterilisation।
গণহত্যার অর্থ থেকে পলিটিকাল গ্রুপ বাদ গেছে। উক্ত সেকশনের ২ এর ( g ) তে incitement শব্দটি যুক্ত হয়েছে
(৪) সেকশন ৪ এ liability of crimes বিস্তৃত ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
(৫) নতুন সেকশন ৯ এ যুক্ত করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ইচ্ছা করলে অডিও ভিজুয়াল শুনানির ব্যবস্থা করতে পারেন।
(৬) নতুন সেকশন ১০বি যুক্ত হয়েছে। সেখানে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
(৭) সেকশন ১১ এর নতুন subsction ৭ ও ৮ সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে unavoidable circumstances এর জন্য ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট হলে ক্ষতিগ্রস্ত এবং সাক্ষীদের ভার্চুয়াল হেয়ারিং নিতে পারবেন।
(৮) সেকশন ১৯ (১) এর পরিবর্তে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে অডিও ভিডিও ডিভিডি সিসিটিভি হার্ডওয়ার সফটওয়্যার অথবা অন্য কোন ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে বলা হয়েছে যেগুলো ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা যাবে।
(৯) সেকশন ২১: অন্তর্বর্তী আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে শুধু ট্রাইব্যুনাল অবমাননার শাস্তির বিরুদ্ধে। আপিল বিভাগে আবেদন পেন্ডিং থাকলে ট্রাইব্যুনাল মামলা চালিয়ে যাবেন সে কথাও বলা হয়েছে।