
ডেস্ক রিপোর্ট : কাতার সরকারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। ইরান ও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোতেও উভয় পক্ষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার খবর এসেছে। তবে কোনো সরকারের পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কূটনীতিকের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাতারের আমিরের কাছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতা করার অনুরোধ করেছিলেন।
কূটনীতিক আরও জানান, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান বিন জসিম আল-থানি গতকাল সোমবার ইরানের সম্মতি আদায় করেন, যা পরবর্তীতে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্বকে জানান।
তবে, ইসরায়েল বা ইরান সরকার কেউই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতিতে তাদের সম্মতির বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
আলোচনার বিস্তারিত
সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, কাতার ইরানের সঙ্গে আলোচনায় মধ্যস্থতা করে যুদ্ধবিরতিতে সহায়তা করেছে। হোয়াইট হাউসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল এই শর্তে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে যে ইরান তাদের দেশে হামলা বন্ধ করবে। সূত্র আরও জানায়, ইরান এই শর্তে সম্মত হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাতেই ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক বার্তায় বলেন, যে ইরানের ওপর সেই ‘নিখুঁত আঘাতই’ সবাইকে একত্রিত করেছে এবং চুক্তিটি সম্পন্ন করতে সাহায্য করেছে। তিনি আরও দাবি করেন, ইসরায়েল এবং ইরান উভয়ই একই সময়ে তাঁর কাছে শান্তির জন্য এসেছিল।
ইরান অবশ্য এটিকে এভাবে দেখছে না। তাঁদের একজন সংবাদ উপস্থাপক বলেছেন, কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ট্রাম্প ভিক্ষুকের মতো ফোনকল করেছিলেন।
হোয়াইট হাউস ঘটনার বর্ণনায় বলেছে—
ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলছিলেন এবং ইসরায়েলি পক্ষকে মধ্যস্থতা করতে সক্ষম হন। ইসরায়েলিদের রাজি করানোর পর, আমরা বিশ্বাস করি তিনি কাতারের আমিরকে ফোন করে বলেছিলেন, দেখুন, আপনারা কি ইরানিদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারবেন? তাদের কি আবার পক্ষে আনতে পারবেন? আমি ইসরায়েলিদের পেয়েছি, কিন্তু আমাদের ইরানিদেরও পক্ষে দরকার। কাতারের আমির এবং প্রধানমন্ত্রী তখন সেটি করতে সক্ষম হন।
এদিকে, ভাইস প্রেসিডেন্ট জে. ডি. ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ইরানিদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। যখন সবকিছু একযোগে চলছিল, তখন জে. ডি. ভ্যান্স এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রী মিলে লজিস্টিকগুলো চূড়ান্ত করেন। এভাবেই ঘটনাটি ঘটে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের দাবি
আজ মঙ্গলবার সকালে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশটির সামরিক প্রতিক্রিয়ার পর শত্রুর ওপর যুদ্ধবিরতি ‘আরোপ’ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে যুদ্ধবিরতি কখন কার্যকর হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইরান ন্যাশনাল নিউজ নেটওয়ার্কের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ‘ভিক্ষুকের মতো’ যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেছেন। অন্যদিকে, ট্রাম্প বলেছেন, ‘ইসরায়েল ও ইরান আমার কাছে শান্তির জন্য এসেছিল।’
বিশ্লেষকদের মতামত
সিএনএন-এর সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে এটি অন্তত স্বল্প সময়ের জন্য হলেও স্থায়ী হতে পারে। ইসরায়েল মনে করে, তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছে। ইরানের এতটা ক্ষতি তারা করতে পেরেছে যে পুনর্গঠনের জন্য সময় লাগবে। বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সেড্রিক লেইটন বলেছেন, ইসরায়েল তাদের অনেক লক্ষ্য অর্জন করেছে, যার মধ্যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানা এবং তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা অন্যতম।
লেইটন আরও বলেন, ইরান পুনর্গঠন এবং পরবর্তীতে তারা কী করবে তা বোঝার ও পদক্ষেপের জন্য একটি সুযোগ খুঁজছে। তিনি বলেন, এই অর্থে, যুদ্ধবিরতি অন্তত কিছু সময়ের জন্য স্থায়ী হওয়া খুবই সম্ভব।
অবশ্য গত শনিবার রাতে মার্কিন হামলায় ফোরদো, ইস্পাহান ও নাতানজে ইরানের প্রধান তিন পরমাণু স্থাপনায় কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। ফোরদো থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলেও খবর এসেছে। তবে অনুমান করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাংকার বাস্টার বোমার আঘাতে এই তিন পরমাণু কেন্দ্রের সেন্ট্রিফিউজগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। কারণ সেন্ট্রিফিউজ কম্পনের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সর্বশেষ বলেছেন, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এখন কার্যকর হয়েছে। তিনি ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘যুদ্ধবিরতি এখন কার্যকর। অনুগ্রহ করে এটি লঙ্ঘন করবেন না!’
যাই হোক, যুদ্ধবিরতি এখন আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এটি কতক্ষণ স্থায়ী হবে?