ডায়াবেটিস রূপ নিচ্ছে নতুন এক মহামারিতে। দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে চিকিৎসার ব্যয় নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ায় অর্থ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রোগীদের। এমন বাস্তবতায় ‘ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানুন- প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন’ এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে গতকাল পালিত হলো ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’। বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫৪ কোটি। আর ২০২১ সালে বিশ্বে ৬৭ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুবরণ করে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম। দেশের শহর ও গ্রামে প্রায় সমানভাবে বেড়ে চলেছে ডায়াবেটিস রোগী। গত ২ বছরে বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। আর ২০ শতাংশ মানুষের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। দেশে ডায়াবেটিসের যে সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত আছে, আগামী চার বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। সে হিসাবে দেশের চারটি অসংক্রামক রোগের মধ্যে অন্যতম এই ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে দেড় কোটি ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। আক্রান্তের এমন ভয়াবহ চিত্রে পেছনে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, খাবারের নিয়ম না থাকা, আচরণগত পরিবর্তন, কায়িক পরিশ্রম না করা এবং ডিভাইসের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বলছেন বিশেষজ্ঞরা। নিয়মিত চিকিৎসা না করানোয় ইনসুলিন নেয়ার পরও ৮০ ভাগের বেশি রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে কোটির বেশি ডায়াবেটিসের রোগীর মাত্র ২০ শতাংশ নিয়মিত ওষুধ খান। বাকিরা নিয়মিত ফলোআপ না করার পাশাপাশি অর্থকষ্টে প্রায় সময় চিকিৎসা বন্ধ করে দেন। যার বড় কারণ অর্থনৈতিক টানাপড়েন। ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। নিয়মিত পরীক্ষা করে ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। প্রতিদিন ওষুধ খেতে হয়। গত ১ বছরে ডায়াবেটিসের কমবেশি সব ওষুধেরই দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৪০ শতাংশের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ পরিবারের ডায়াবেটিক রোগীর চিকিৎসা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। আক্রান্তদের মাত্র ২৬ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। বাকিরা বেসরকারিনির্ভর। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেভাবে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডায়াগনোসিস হওয়ার কথা ছিল, প্রান্তিক পর্যায়ে এখনো সেসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেনি। অতিরিক্ত প্রস্রাব, অত্যাধিক পিপাসা, বেশি ক্ষুধা, দুর্বল বোধ করা এবং কেটে-ছিঁড়ে গেলে ক্ষত তাড়াতাড়ি না শুকানোই হচ্ছে এই রোগের সাধারণ লক্ষণ। নিয়ম-শৃঙ্খলাই ডায়াবেটিক রোগীর জীবনকাঠি। ডায়াবেটিক রোগীকে নিজে থেকে রোগ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব গ্রহণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শমতো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। শুধু খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ৬০ ভাগই প্রতিরোধ সম্ভব বলেও মনে করেন চিকিৎসক। পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য খাওয়া, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করা ছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ করতে হবে। টেনশন, স্ট্রেস পরিহার করতে হবে, রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে হবে। নগরায়ণের ফলে হাঁটার সুযোগ কমে গেছে, খেলার জায়গা নেই। তাই ফুটপাতগুলোকে অন্তত সুন্দর করতে হবে। যাতে সেখানে হলেও মানুষ চলাচল করতে পারে। সর্বোপরি, গুরুতর অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এখনই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবি।