জন্মভূমি রিপোর্ট : মানুষের সর্ব প্রথম চাহিদা হচ্ছে খাদ্য। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও জীবন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদনের বিষয়টিকে পৃথিবী জুড়েই একটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ছুড়ে দিয়েছে। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য দরকার অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষককে সর্বোচ্চ প্রণোদনা ও কারিগরি সহায়তা প্রদান এবং মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা।
দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততার সমস্যা। উত্তরাঞ্চলে অম্লের আধিক্য। গোপালগঞ্জের কিছু এলাকায় রয়েছে জৈব মাটি, দেশের পূর্বাঞ্চলে রয়েছে পাহাড়ি মাটি। এসব মাটি ফসল উৎপাদনের অন্তরায়। এসব অন্তরায় দূর করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট নিরন্তর কাজ করে চলেছে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট কর্তৃক পরিচালিত গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প (এসআরডিআই অংগ) ইতোমধ্যে সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ২০১৯ সালে থেকে অবিরাম কাজ করে চলেছে।
ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকার ৩৮টি উপজেলার জন্য আলাদা আলাদা ভাবে ‘ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে নতুন করে ওই সব উপজেলার মধ্যে প্রায় সকল উপজেলার নির্দেশিকা নবায়ন করা হয়েছে। বাকী উপজেলার নবায়ন কাজ চলছে। এ নির্দেশিকায় মাটি, ভূমি ও কৃষি জলবায়ুর ওপর ভিত্তি করে কোথায় কোন ফসল চাষ করা যাবে, ফসলের বিভিন্ন জাতওয়ারী কতটুকু সার প্রয়োগ করতে হবে। এই এলাকায় কৃষি উৎপাদনের প্রতিবন্ধকতা ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য করণীয় বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা ‘ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকায়’ সন্নিবেশিত মৃত্তিকা উর্বরতা বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত জিআইএস প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল তথ্যে রূপান্তর করা হয়েছে। এ বিশাল তথ্য-উপাত্তকে ভিত্তি করে ‘অনলাইন ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন সিস্টেম’ নামক একটি সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে। এই অনলাইন ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন এর মাধ্যমে সহজেই ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে কৃষক তার জমির সার সুপারিশ পেতে পারেন।
ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানভিত্তিক সুষম সার প্রয়োগের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মৃত্তিকা অবক্ষয় রোধের জন্য সব ইউনিয়নের জন্য ইউনিয়ন ভূমি, মাটি ও সার সুপারিশ সহায়িকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে ৩৪০টি ইউনিয়নের ইউনিয়ন সহায়িকা প্রকাশ করা হয়েছে। এ সহায়িকা ব্যবহার করে ইউনিয়নভিত্তিক মাটির উর্বরতামান অনুসারে সুপারিশকৃত সার প্রয়োগ করে ফসল উৎপাদন ১৫-২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব। ইতোমধ্যে ৩৪০টি ইউনিয়নের মৃত্তিকার উর্বরতামান অনুসারে প্র্রান প্রধান ফসলের জন্য সার সুপারিশ ডিসপ্লে বোর্ড তৈরি করে দর্শনীয় ও জনসমাগমের স্থানসমূহে সেটে দেয়া হয়েছে।
এই প্র্রকল্পের মাধ্যমে মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার কয়েকটি প্রযুক্তি বিশেষ করে ডিবলিং পদ্ধতিতে ভুট্টা, সূর্যমুখী চাষ, বিনা চাষে লবণাক্ত এলাকায় গম চাষ, পলি বেডে ও খড়ের বেডে শাক জাতীয় ফসল চাষ, পলি ব্যাগে ও ট্রে পদ্ধতিতে আগাম তরমুজ চাষসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছে কৃষক। সুষম সার প্রয়োগের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের এডাপ্টিভ ট্রায়াল প্লট স্থাপনের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরিত হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় তরমুজ ২০০০ হেক্টর, ভুট্টা ৭০০ হেক্টর, আগাম শিম ৫০০ হেক্টর, অফ সিজন তরমুজ ১২০০ হেক্টর, পানি কচু ২০০ হেক্টর, লাউ ৫০০ হেক্টর সহ বিভিন্ন ফসল মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারিত হয়েছে। এসআরডিআই কৃষককে সরাসরি প্র্রণাদনা না দিলেও কৃষক যাতে টেকসই ও লাভজনকভাবে মাটির ব্যবহার নিশ্চিত করে অধিক খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন সে লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
গোপালগঞ্জ-খুলনা- বাগেরহাট -সাতক্ষীরা-পিরোজপুর জিকেবিএসপি প্রকল্প পরিচালক অমরেন্দ্রনাথ বিশ^াস বলেন, কৃষক অর্থনৈতিক ভাবে ঘুরে দাড়িয়েছেন। প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কোন জমি পতিত ফেলে না রেখে আবাদ করা হয়েছে। সে মোতাবেক কৃষকদের ফসল ফলাতে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কৃষকদের কীটনাশক ও সার বিনামূল্যে এই প্রকল্প থেকে দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সার সুপরি পেয়ে কৃষকরা ফসল আবাদ করে ১৫-২৫শতাংশ ফসল বেশী হয়েছে। ঘেরেরপাড়ে অফসিজনের তরমুজ চাষসহ নানা রকমের সবজি আবাদে কৃষক লাভবান হয়েছেন।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত