শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া : ডুমুরিয়া অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি উচ্চ ফলনশীল জাতের আগাম আমন ধান পাকতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ধান কাটাও শুরু হয়েছে। আগাম ধান পেয়ে খুশি কৃষক। এদিকে আগাম ধান কাটা শুরু হওয়ায় কার্তিক মাসে শ্রমহীন থাকতে হচ্ছে না কৃষি শ্রমিকদের।
অনেকে জমিতেই পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করার কাজ সেরে নিচ্ছেন। নারীরা মাড়াই করা ধান বাতাসে উড়িয়ে পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জানা যায়, আগাম ধান কাটা শেষে আগাম জাতের আলুর জন্য জমি প্রস্তুত করবেন চাষিরা। এজন্য আগাাম ধান কাটছে তারা। এ স্বল্পমেয়াদি উচ্চ ফলনশীল জাতের আগাম আমন ধান রোপণের ৮০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এই ধান পাকে। এ আগাম ধান কাটার পর আলুসহ নানা রকম রবিশস্য আবাদ করে থাকেন চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, দিগন্তজোড়া পাকা ধানক্ষেত। সবুজের মাঝে পাকা ধানক্ষেত। কোথাও কোথাও শুধু পাকা ধান খেত। আগাম ধান কাটা নিয়ে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাকা ধান কাটছেন কৃষক। আবার কোথাও কোথাও যন্ত্রের সাহায্যে ধান কাটা হচ্ছে। অনেকে জমিতেই পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করার কাজ সেরে নিচ্ছেন। নারীরা মাড়াই করা ধান বাতাসে উড়িয়ে পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কেউ কেউ ধান মাড়াইয়ের পর শুকানোর কাজে ব্যস্ত।
খুলনা উপজেলার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফ পুর ব্রিধান—৯৫,রোপা আমনে স্বল্প মেয়াদি ১২৫ জীবনকাল।নুতন আবাদ করেছে।
১একর জমিতে, কৃষক এস এম শাহনেওয়াজ,একজন প্রগতিশীল কৃষক। সামনে অনেক এটি আবাদ করবে রসুল সানা,মফিজুর হাওলাদার,ইউসুফ হাওলাদার, মহিউদ্দিন শেখ,তৌফিক শেখ সহ আরও অন্যন্য কৃষক
এলাকার কৃষক শফিকুল মিয়া বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ধান, আলু আগাম চাষ করে থাকি। সেই ধারাবাহিকতায় এবারেও আগাম ধান চাষ করেছি। আগে আগাম ধানে তেমন লাভ হতো না। এখন স্বল্পমেয়াদি উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান হওয়ায় লাভ হয়।
একই এলাকার সামিউল ইসলাম বলেন, ‘আগাম ধান কাটছি। এই সপ্তাহের মধ্যে আলুর জন্য জমি প্রস্তুত করা হবে। এই জমিতে আগাম আলু চাষ করা হবে।’
ডুমুরিয়া উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার করুণা মন্ডল জানান, ইতোমধ্যে খুলনা এবং ডুমুরিয়া উপজেলা মিলে ৫১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান কাটা হয়েছে। মূলত আলু ও অন্যান্য রবিশষ্যের জন্য কৃষকরা এখন আগাম ধান চাষ করে থাকে। আর নিয়মিত যে আমন ধান, সেই ধানেও অনেক এলাকায় পাকতে শুরু করেছে। এই মাসের কাটা শুরু হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, খুলনার ডুমুরিয়া অঞ্চলের ৫১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। গত বছর ৪৭০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে গত বছরের তুলানায় ৪০ হেক্টর বেশি জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন
আমন ধানে সুষম সার ব্যবস্থাপনা আমন মৌসুমে ধানের ফলন বাড়ানোর জন্য সুষম সার ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা জরুরি। আজকের নিবন্ধে আমন ধানের সুষম সার ব্যবস্থাপনা এবং পরিচর্যাগত কয়েকটি নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
বীজতলায় সার ব্যবস্থাপনা পরিমিত ও মধ্যম মাত্রার উর্বর মাটিতে বীজতলার জন্য কোনো সার প্রয়োগ করতে হয় না। তবে নিম্ন, অতিনিম্ন অথবা অনুর্বর মাটির ক্ষেত্রে গোবর অথবা খামারজাত সার প্রতি শতকে ২ মণ হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। বীজতলায় চারা হলুদ হয়ে গেলে প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার চারা গজানোর ২ সপ্তাহ পর মাটিতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া প্রয়োগের পরও বীজতলায় চারা হলুদ হয়ে গেলে প্রতি শতকে ৪০০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে।
মূল জমিতে সার ব্যবহার মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি আমন ধানের অধিক ফলন পেতে শুধু ইউরিয়া নয়, দরকার সঠিক সময়ে সুষমমাত্রায় বিভিন্ন জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা অপরিহার্য। রাসায়নিক সারের মধ্যে ডাই এমোনিয়াম ফসফেট, ট্রিপল সুপার ফসফেট, মিউরেট অব পটাশ, জিপসাম, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট (ম্যাগসার, অ্যাগ্রোম্যাগভিট), জিংক সালফেট (মনো বা হেপ্টা) বা চিলেটেড জিংক (লিবরেল জিংক), বরিক এসিড, সলিউবর বোরন (লিবরেল বোরন) ইত্যাদি সার সঠিক সময়ে সুষমমাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। তবে অধিকাংশ কৃষক অতিমাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে আগ্রহী। কিন্তু জানা দরকার, অতিমাত্রায় ইউরিয়া প্রয়োগের ফলে ওই জমিতে ফসফরাস ও পটাশজাতীয় সারের পরিমাণ মারাত্মক হারে কমে যায়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, উফশী জাতের আমনের উচ্চ ফলন পেতে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ২১ কেজি ইউরিয়া, ৭-১০ কেজি টিএসপি/ ডিএপি, ৩.৫-১৩.৫ কেজি মিউরেট অব পটাশ, ৪-১১ কেজি জিপসাম, ১-২ কেজি জিংক সালফেট এবং ৩৫ মণ জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে।
রাসায়নিক সার সাশ্রয়ী কয়েকটি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভিদে নাইট্রোজেন পুষ্টি উপাদানের অভাব পূরণে জমিতে ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়। ইউরিয়া সাশ্রয় করতে গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি, লিফ কালার চার্ট অনুযায়ী ইউরিয়া প্রয়োগ, বিভিন্ন ধরনের জৈবসার (সবুজ সার, আবর্জনা পচা সার, পচা গোবর), নাইট্রোজেন ফিক্সিং ব্যাকটেরিয়াল ইনোকুলাম, ধানের জমিতে অ্যাজোলার চাষ ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের মাধ্যমে শতকরা ২৫-৩০ ভাগ কম ইউরিয়া প্রয়োগে ১৫-২০ ভাগ ফলন বৃদ্ধি পায়। সবুজ সার হিসেবে ধইঞ্চার চাষ, গ্রীষ্মকালীন মুগ/মাষকলাই চাষ করলে ইউরিয়ার ব্যবহার অনেকাংশে কমানো সম্ভব।