২৪ ঘন্টায়ও মোটিভ উদ্ধার হয়নি, গ্রেফতার নেই, মামলা হয়নি,
রবির কাছে পরাজিত ওবায়দুল্লাহ হাওলাদার আত্মগোপনে
জন্মভূমি রিপোর্ট : খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি (৪২) হত্যার মুল মোটিভ উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তবে এ হত্যাকান্ডের সাথে পরাজিত প্রার্থী ওবায়দুল্লাহ হাওলাদার এবং বিগত জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত দুই প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন ও আজগর আলী বিশ^াসের সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ উঠেছে। হত্যাকান্ডের পর শরাফপুর ইউনিয়নে রবির কাছে পরাজিত ওবায়দুল্লাহ হাওলাদার আত্মগোপন করেছেন। শনিবার রাতে তাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পর পর তিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম এলাকায় খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। সাবারণ জীবনযাপনকারী রবিউল হত্যাকান্ডের ঘটনায় এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। হত্যার ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
অভিযোগের তীর ইউপি ও উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত তিন প্রার্থীর দিকে ঃ নিহতের পরিবারের সদস্য ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচন এবং স্থানীয় বানিয়াখালী মাওলানা ভাসানী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন ও কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের কোন্দলকে কেন্দ্র করে শরাফপুর ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হতে পারে। তবে পুলিশ এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
নিহত ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবির ভাগ্নে এম এম সাইফুর রহমান রাজু ও চাচাতো ভাই মো. মোতাহার শেখ জানান, রবিউল ইসলাম রবি শরাফপুর ইউনিয়নসহ ডুমুরিয়া উপজেলায় ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি গত তিনটি ইউপি নির্বাচনে শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে জয়লাভ করেন। তার কাছে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী বৃত্তি ভুলবাড়িয়া গ্রামের ওবায়দুল্লাহ হাওলাদার ২৬২ ভোটে পরাজিত হন। এরপর নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ওবায়দুল্লাহ আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতে মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইউপি চেয়ারম্যান রবি আওয়ামী লীগের প্রার্থী নারায়ণচন্দ্র চন্দ এবং ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাচনে গাজী এজাজ আহম্মেদের পক্ষে কাজ করেন। ওই দুটি নির্বাচনেই তার সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, রবির কাছে পরাজিত ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী শরাফপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল্লাহ হাওলাদার এবং আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত পরাজিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন ও ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত আজগর আলী বিশ^াস (তারা বিশ^াস) এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তাদের দাবি গত শনিবার রাতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে রবিউল ইসলাম রবি নিহত হওয়ার পর থেকে ওবায়দুল্লাহ হাওলাদার আত্মগোপন করেছেন। তাদের অভিযোগ বিগত জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত দুই প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন ও আজগর আলী বিশ^াস এই হত্যাকাণ্ডের অর্থ ও মূল মদদদাতা। ওবায়দুল্লাহ হাওলাদারকে গ্রেফতার করে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই এই হত্যাকাণ্ডের অর্থযোগানদাতাসহ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করা সহজেই সম্ভব হবে।
রবিউল ইসলাম রবির বড় ভাই মঞ্জিরুল ইসলাম বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিরোধেই আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। তার সঙ্গে ব্যক্তিগত কারো বিরোধ ছিল না।
শরাফপুর ইউনিয়নের ভুলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান, আবু বক্কার ও ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান খান বলেন, বৃত্তি ভুলবাড়িয়া গ্রামের ওবায়দুল্লাহ হাওলাদার ইউপি নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনসহ সকল ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবির প্রতিপক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে ইউপি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে সে ভোট কারচুপির অভিযোগ করাসহ রবির বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সময় সে রবির বিরুদ্ধে হুমকি-ধামকি প্রদান করলেও রবি তা আমলে নেয়নি।
বানিয়াখালী মাওলানা ভাসানী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের একটি সূত্র জানায়, বিগত ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ডুমুরিয়া উপজেলার বানিয়াখালী মাওলানা ভাসানী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে রবিউল ইসলাম রবির প্যানেলের কাছে ওবায়দুল্লাহ হাওলাদারের প্যানেল পরাজিত হয়। ওই নির্বাচনের পর কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম আমিনুল ইসলামকে বাদ দিয়ে সিনিয়র শিক্ষক সুরঞ্জন বিশ^াসকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেন। এ ঘটনা নিয়েও ওবায়দুল হাওলাদার ইউপি চেয়ারম্যান রবির বিরুদ্ধে ভীষণ ক্ষিপ্ত ছিলেন।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত আজগর বিশ^াস তার বিরুদ্ধে নিহত ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবির স্বজনদের আনা অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, তারা (ইউপি চেয়ারম্যান রবির স্বজন) এখন শোকাহত রয়েছে। তারা এই মুহূর্তে অনেকের বিরুদ্ধেই কথা বলতে পারেন। তবে আমার বিরুদ্ধে তাদের করা অভিযোগ সত্য নয়। আমার সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান রবির কোনো পরিচয় ছিল না। তাছাড়া তার সঙ্গে শত্রুতার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।
এছাড়া, বিগত নির্বাচনে ডুমুরিয়া-ফুলতলা আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করা ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে গতকাল রোববার দুপুরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহত ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবির ময়নাতদন্ত করা হয়। পরে তার দেহপরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, পেছন থেকে রবির কোমর থেকে পিঠ পর্যন্ত ৫টি গুলি করা হয়েছে। প্রতিটি গুলিই তার শরীরে বিদ্ধ হয়েছিল।
অপরদিকে, বাদ আছর শরাফপুর ইউনিয়নের ভুলবাড়ীয়া গ্রামে জানাযা শেষে ইউপি চেয়ারম্যান রবির লাশ পারিবারিক কবরস্থানে তার পিতা শেখ ফজলল করিমের (হাবিবুর রহমান) কবরের পাশে দাফন করা হয়।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত সাহা বলেন, হত্যাকাণ্ডের রহস্য (ক্লু) উদঘাটনে পুলিশের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তবে, নিহতের পরিবার থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান বলেন, আমরা ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবির হত্যা রহস্য উদঘাটনে চেষ্টা করছি। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়িই এই হত্যা রহস্য উদঘাটন হবে। তখন আপনাদের বিস্তারিতভাবে জানানো হবে।
এদিকে ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগের আহ্বায়ক গোবিন্দ ঘোষ বলেন, শনিবার বিকেল পাঁচটায় বিশেষ বর্ধিত সভা শুরু হয়। সাড়ে সাতটার দিকে শেষ হয় সেই সভা। সভা শেষে রবিউল ইসলাম আরও কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বাজারে বসে আড্ডা দেন। এরপর খুলনায় যাওয়ার পথে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গুটুদিয়া এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলিতে তিনি নিহত হন।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের শহিদ জোবায়েদ আলী মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শেষে ৮ নম্বর শরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি মোটরসাইকেলে খুলনার বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। রাতে তিনি খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের গুটুদিয়া ওয়াপদার মোড় নামকস্থানে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে পেছন দিক থেকে ৪/৫ রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়। এ সময় পিঠে একাধিক গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়েন। গুলির শব্দ শুনে স্থানীয় লোকজন তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রাত সোয়া ১০টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) মো. আসিফ ইকবাল বলেন, যেহেতু কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই, তাই কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে পুরো ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মর্জিনা বেগম জানান, ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবিকে হাসপাতালে আনার পর তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখা গেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ হোসেন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি পিঠে ৫টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। বিগত ইউপি নির্বাচনে তিনি দলের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ-কারণে তার ওপরে অনেকে ক্ষিপ্ত ছিলেন বলেও তিনি জানান।
ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগের আহ্বায়ক গোবিন্দ ঘোষ বলেন, শনিবার বিকেলে ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা ছিল উপজেলার শহীদ জোবায়েদ আলী মিলনায়তনে। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী ও খুলনা-৫ আসনের (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। রবিউল ইসলাম ওই বর্ধিত সভায় যোগ দিয়েছিলেন। বিশেষ বর্ধিত সভা শেষে রবিউল ইসলাম আরও কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বাজারে বসে আড্ডা দেন। এরপর খুলনায় যাওয়ার পথে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গুটুদিয়া এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন বলে শুনেছেন।
পরিবারের লোকজন বলেন, রবিউল ইসলাম মোটরসাইকেলে করে একাই চলাফেরা করতেন। প্রতিদিন সকালে ডুমুরিয়ায় নিজের এলাকায় যেতেন আর রাতে খুলনায় ফিরে আসতেন। শনিবারও ডুমুরিয়া থেকে খুলনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিলেন রবিউল। রাত ১০টার দিকে গুটুদিয়ার ওয়াপদা বাঁধের কাছে আসার পর সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে পালিয়ে যান। গুলির শব্দ শুনে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক কনক হোসেন জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রবিউল ইসলামকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান। রবিউলের পিঠের নিচের অংশে গুলি করা হয়েছে।
ডুমুরিয়ার ভুলবাড়িয়া গ্রামের রবিউল ইসলামের আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনবারের চেয়ারম্যান হলেও খুবই সাধারণ জীবনযাপন করতেন রবিউল। তাঁর বাড়ি শরফপুর ইউনিয়নের ভুলবাড়িয়া গ্রামে। তবে পরিবার নিয়ে থাকতেন খুলনা নগরের নিরালা আবাসিক এলাকায়। দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে রবিউল ষষ্ঠ। তাঁর স্ত্রী সমাজসেবা অধিদপ্তর খুলনায় চাকরি করেন। তাদের আট ও দেড় বছরের দুটি ছেলে আছে। ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে পরপর তিনবার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হয়েছিলেন রবিউল। এছাড়া তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্রলীগের হাত ধরে রাজনীতিতে হাতে খড়ি রবির। তিনি শরফপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
এদিকে হত্যাকান্ডের পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসার পাশাপাশি এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। কি কারণে তাঁকে হত্যা করেছে, সেটা নিয়েই চলছে আলোচনা।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, প্রথমবার স্থানীয় আওয়ামীলীগের সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও শেষ দুবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছেন। এ কারণে কতিপয় নেতাদো সাথে তার বিরোধ ছিলো। তবে এটা কখনোই প্রকাশ্যে আসেনি।
রোববার দুপুরে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর রবিউলের মরদেহ তার গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার মহরদেহ দেখতে শত শত মানুষ উপস্থিত হন।
সর্বশেষ সন্ধ্যায় ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এছাড়া থানায় মামলাও হয়নি। ঘটনার কারণও উদ্ঘাটন করতে তদন্ত ও অনুসন্ধান চলছে।
সূত্র জানায়, স্থানীয় রাজনীতিতে ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত রবিউল ইসলাম। মন্ত্রী এলাকায় থাকা অবস্থায় তারই ঘনিষ্টজনকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। একসময় ‘সন্ত্রাসের জনপদ’ হিসেবে পরিচিত ডুমুরিয়া উপজেলায় আবার টার্গেট কিলিং (পরিকল্পিত হত্যা) ফিরে এসেছে কি না, সেই আলোচনাও চলছে এলাকায়।