
শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া : ডুমুরিয়া জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। দেখার কেউ নাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৭/১ ফোল্ডারের এস ডি মিজানুর রহমানের নিকট জানতে চাইলে তিনি কিছু জানেন না তিনি সাংবাদিকের কাছে বলেন আপনি ছবি পাঠান তাহলে আমি দেখছি।
দেশের ভাটি অঞ্চলের লোকালয়। এমন ঘটনা স্মরণকালে আর হয়নি। ১৯৮৮-এর ভয়াবহ বন্যায়ও প্লাবিত হয়নি দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী কোনো জেলা-উপজেলা বা গ্রাম। এতদিন দক্ষিণের মানুষ শুধু নদী-খালেই দেখেছে জোয়ার-ভাটা। কিন্তু এখন পানির স্রোত বইছে লোকালয়ে। শুক্রবারওশনিবার দিনে ২ বার জোয়ারের পানিতে শোভনা ইউনিয়নের বাড়ই কাটি নিখিল গোলদারের বাড়ি হইতে মঠের পাশে শচীন রায়ের চায়ের দোকান পর্যন্ত ওয়াপদার রাস্তার উপর দিয়ে পানি লোকালয় ডুকছে।
শুধু দক্ষিণাঞ্চলই নয়, বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতেএলাকাগুলোও প্লাবিত হয়েছে । হঠাৎ কেন প্রকৃতির এ ভয়াবহ আগ্রাসন। নদী ও পানি বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধানত ৩টি কারণে স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে লোকালয়। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামীতে দেশে নদ-নদী বলে কিছু থাকবে না।
বেড়েছে জোয়ারের উচ্চতা, প্রতিশোধ নিচ্ছে প্রকৃতি : লোকালয় প্লাবিত হওয়ার পেছনে নদ-নদীর নাব্য হারানোর সঙ্গে স্বাভাবিক জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধিকেও কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শফিউদ্দিন বলেন, ‘গত ৫০ বছরের জোয়ার-ভাটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে জোয়ারের স্বাভাবিক উচ্চতা বেশ খানিকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ’৭০-এর দশকে দেশের নদ-নদীর জোয়ারের উচ্চতা ছিল আড়াই থেকে ৩ মিটার। সেখানে চলতি বছর ১৬ আগস্ট দক্ষিণের প্রধান ৩ নদী বিষখালী-পায়রা-বলেশ্বরে জোয়ারের উচ্চতা পাওয়া গেছে ৩ দশমিক ৫৪ মিটার। ২০০৬ সালে জোয়ার আসে ৩ দশমিক ৯৬ মিটার উঁচু হয়ে। এছাড়া আমরা ৩ দশমিক ৬২ এবং ৩ দশমিক ৬১ মিটার উচ্চতাও রেকর্ড করেছি। এসব তথ্য বিশ্লেষণে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, স্বাভাবিক জোয়ারের উচ্চতা গড়ে প্রায় দশমিক ৬০ মিটার বেড়েছে। সরকারেরও এ বিষয়ে নজর রয়েছে। ৮শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে বরগুনা-পটুয়াখালী-খুলনা ও বাগেরহাটকেন্দ্রিক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘কোস্টাল ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ নামে এ প্রকল্পের আওতায় সাগর এবং নদী তীরবর্তী বাঁধগুলো আরও উঁচু করে নির্মাণ পুনর্নির্মাণ করা হবে।’ বিআইডব্লিউটিএর সাবেক সচিব নদী বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভয়াবহ এ ক্ষতির সূচনা হয়েছে ব্রিটিশ শাসনামলে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে যেখানে নৌপথভিত্তিক দ্রুততর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠার কথা ছিল সেখানে ব্রিটিশ শাসকরা তাদের দেশের ভূ-প্রকৃতিগত অভিজ্ঞতায় এখানে রেল আর সড়কপথের উন্নয়নের নামে নদী ধ্বংসের কাজ শুরু করে। সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরাও প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে বাঁধ দিয়ে স্বাভাবিক প্রবাহ আটকানো এমনকি নদী হত্যা করে সড়ক বানিয়েছি। দেশে যত বড় বড় সেতু আছে সেখানে গিয়ে দেখুন, সেতুর পিলার আটকাচ্ছে নদীর স্রোত। পলি জমে মরে যাচ্ছে নদী। আমরা শুধু সড়ক আর সেতু বানিয়ে গেছি। এসবের ভবিষ্যৎ প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবিনি। এখন তার প্রতিশোধ নিচ্ছে প্রকৃতি। এখনও সময় আছে, প্রকৃতির গতির সঙ্গে তালমিলিয়ে প্রকৌশলের সমন্বয় ঘটাতে হবে। নইলে অদূর ভবিষ্যতে যে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটবে তার হাত থেকে কেউ আমাদের বাঁচাতে পারবে না।