দুই বাংলায় সাড়া জাগিয়েছেন মা ও মেয়ে
জি এম ফিরোজ, ডুমুরিয়া : তেল পানি পড়া আর শিকড়ে মুক্তি মিলছে হাড়ভাঙ্গা ও শ্বাসকষ্ট। শনি ও রবিবার মা মেয়ের দুই দরবারে ভীড় জমাচ্ছে এসব রোগী। চিকিৎসা বিজ্ঞান এটাকে কুসংস্কার মনে করলেও দূরদূরান্ত থেকে মুক্তির আশায় ছুটে আসছে সাধারণ ও শিক্ষিত মানুষ। তবে মা ও মেয়ের দরবারে এসে রোগ থেকে মুক্তি পাননি এমন তথ্যও কেউ দেননি। ভারতের মোসলেন্দুপুর ও বাংলাদেশের খুলনার ডুমুরিয়ায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন মা ও মেয়ে তথা হাড়ভাঙা নামের দুই বুড়ি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়; ডুমুরিয়া উপজেলার ডিকে প্রাইমারি সড়কে এ্যম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, মাহিন্দ্রা, ইজিবাইকসহ অসংখ্যা গাড়ি সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে আছে। বাড়ির ভেতরে শত শত রোগীর লাইন। সবার হাতে তেল পানির বোতল। ঘরের দরজায় বসে রোগী দেখছেন শ্যামলী মণ্ডল (৬৩)। ডাকনাম হাড়ভাঙ্গা বুড়ি। কারো দিচ্ছেন তেল পানি পড়া, কারো দিচ্ছেন শিকড় মাদুলি আবার কাউকে দিচ্ছেন ফুকঁ। এখন গ্রামের চেয়ে “বুড়ির বাড়ি” নামেই প্রসিদ্ধ। শনি ও রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগীদের তদবীর করেন তিনি।
অপরদিকে ভারতের মোসলেন্দুপুরের ঘোষপুরে রোগী দেখেন শ্যামলীর মাতা; লক্ষ্মী মণ্ডল (৮৩)। একই পদ্ধতিতে সেবা দেন তিনি। হাড়ভাঙ্গা বুড়ি নামেই ঐ এলাকায় বেশ আলোচিত। দেড়’শ বছর আগে লক্ষ্মী মণ্ডলের মা হরিদাসী মণ্ডল স্বপ্নে পেয়েছিলেন হাড়ভাঙ্গার এই তদবীর ব্যবস্থা। তিনি তার মেয়ে লক্ষ্মী মণ্ডলকে স্বপ্নে পাওয়া ব্যবস্থাদি হস্তান্তর করেন। বিল ডাকাতিয়ায় ফসল অজন্মা হলে তিনি ১৯৮৬ সালে ভারতের মোসলেন্দুপুর ঘোষপুর এলাকায় তিনি চলে যান। সেখানে তিনি হাড়ভাঙ্গা রোগী দেখা শুরু করেন। যাওয়ার সময় তিনি তার মেয়ে শ্যামলী মণ্ডল (৬৩) কেও রোগী দেখার অনুমতি দিয়ে যান। তখন থেকে শ্যামলী ডুমুরিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের দেড়ুলী গ্রামে শনিবার ও মঙ্গলবার রোগী দেখেন।
বরিশাল থেকে হাড়ভাঙ্গা রোগী আঃ করিম (৬০) এখানকার তদবীর নিয়ে সুস্থ হন। এখন তিনি ঐ এলাকা থেকে রোগী নিয়ে আসেন। তিনি জানান; রোগীরা ভালো ফল পাচ্ছেন। ফুলতলার ফিরোজ আহম্মেদ (৫৫) একই বক্তব্য পেশ করেন। দেড়ুলী গ্রামের পলাশ মাস্টার পা ভাঙ্গা নিয়ে বুড়ির তদবীরে ভালো হযেছেন বলে জানান।
শ্যামলী বেগম জানায়; তিনি এলাকায় ৪৫ বছর ধরে হাড়ভাঙ্গা ও শ্বাসকষ্টের রোগী দেখছেন। খুলনা সাতক্ষীরা বরিশাল বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী এসে তদবীর নিয়ে যাচ্ছেন। তবে তার তদবীরে কেউ ভালো হয়নি এমন কথা কেউ বলেননি। রোগীরা শনিবার ও রবিবার শিকড় মাদুলী ও তেলপড়া নিয়ে যাচ্ছেন। দিনে পাঁচ শতাধিক রোগী বুড়ির দরবারে নিয়মিত ভীড় জমায়। আমার মা লক্ষ্মী মণ্ডল ভারতের মোসলেন্দুপুর এলাকার ঘোষপুর গ্রামে শনিবার ও মঙ্গলবার হাড়ভাঙ্গা শ্বাস কষ্টের রোগী দেখেন।
বাগেরহাট পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহকারি পরিচালক ও ডিস্ট্রিক কনসালটেন্ট ডা. দীন মোহাম্মাদ খোকা বলেন; হাড়ের ধর্ম জোড়া লাগা। হাড় ভাঙলে তিন মাসের মধ্যেই জোড়া লাগে সেটা সোজাভাবে হোক আর বাঁকাভাবে হোক। তবে ডাক্তাররা পজিশনটা ঠিক করে দেয়। সাথে হয়তো ব্যথার ওষুধ বা ক্যালসিয়াম দেন। সাধারণ মানুষের বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান না থাকার কারণে হুজুগে মানুষ যেখানে সেখানে কুসংস্কারে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তবে তেল পড়া, পানি পড়া বা শিকড়ে কোন হাড় জোড়া লাগে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমন কোন তথ্য নেই।