শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া : ডুমুরিয়ায় প্রথম বারের মত ব্রি হাইব্রিড-৩ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার সময় ডুমুরিয়া উপজেলা উলা ব্লকে বোরহান সরদারের ব্রি হাইব্রিড-৩ জাতের ধান কর্তন করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন, কৃষক রবিউল ইসলাম, গ্রুপ লিডার বোরহান সরদার,আসাবুর রহমান, সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।কথায় বলে Hybrid needs high care, যত্ন আর্তি একটু বেশি নিতে হলেও দিনশেষে ফলন দেখে কৃষকের সকল ক্লান্তি দুর হয়ে যায়। হ্যাঁ, বলছি হাইব্রিড ধানের কথা-বাংলাদেশে প্রতিবছর ১% হারে চাষযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে, পক্ষান্তরে জনসংখ্যার সাথে যুক্ত হচ্ছে ২৪ মিলিয়ন নতুন মুখ। এই বর্ধিত জনসংখ্যাকে দু-বেলা দুমুঠো খেয়ে পরে বাঁচিয়ে রাখার জন্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রয়োজন।
এজন্য কৃষকও ঝুকছে হাইব্রিডের দিকে। তবে, বাংলাদেশে চাষকৃত অধিকাংশ হাইব্রিড ধানসহ অন্যান্য বীজ বাইরে থেকে আসে, ফলে কৃষককে চড়া দামে কিনতে হয়। তাছাড়া, কোন একসময় যদি বিদেশ হাইব্রিড বীজ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তবে ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলার কৃষক। এজন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ব্রি উদ্ভাবন করেছে ছয়টি হাইব্রিড জাত।
এবছর ডুমুরিয়া উপজেলার উলা গ্রামের কৃষক শেখ বোরহান উদ্দিন কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় প্রথম বারের মত চাষ করেছন ব্রি হাইব্রিড ৩ জাতের ধান। বিঘাপ্রতি ফলন ৩০ মন যা উফশির চেয়ে ৩০% বেশি এবং জীবনকাল ১৪৫ দিন, স্বল্প জীবনকালিন হওয়ায় তিনি অত্যন্ত খুশি।
তিনি বলেন, দেশীয় হাইব্রিড প্রথমে সংকায় ছিলাম আসলে কেমন হবে এখন ধান দেখে খুব খুশি। প্রতিবেশি কৃষক আমাকে জিজ্ঞেস করে জাতটি কী? এটি লবনও সহ্য করতে পারে, আগে এখানে ২৮ ধান লাগাতাম এত ভাল হতনা। প্রতিবেশি কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন- বুরহান ভাইর ধান দেখি আমার ভাল লেগিছে, আমি আরবছর এডা লাগাব। কেবল রবিউল নয়, গ্রামের অধিকাংশ লোকই এটি দেখে খুশি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন এই প্রতিবেদককে বলেন বোরহান সরদার মূলত আমার কৃষক পর্যায়ে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প এর আওতায় যে গ্রুপ গঠন করা হয় সেই গ্রুপের গ্রুপ লিডার। সে সহ গ্রুপটিকে বীজ উৎপাদন,সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষন দিয়ে যাচ্ছি এবং মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত মনিটরিং ও সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
এবছরই প্রথম সে ব্রি হাইব্রিড-৩ জাতের ধান লাগিয়েছে।
এটি উচ্চ ফলনশীল, স্বল্প জীবনকালিন এবং লবন সহিষ্ণু হওয়ায় এটি এ এলাকা উপযোগী একটি জাত। এটির বীজ কৃষক অন্যান্য হাইব্রিডের তুলনায় কম দামে কিনতে পারবে এবং ধানটিও অনেক সুন্দর। আগামীতে এটি আরও সম্প্রসারণের উদ্যেগ গ্রহন করা হবে।সূত্র জানিয়েছেন,এই অঞ্চলে আবাদ করা হয়েছে ২লাখ ৫৭ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমি। যা গত বছরের চেয়ে বেশী। চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ১১লাখ ৩৮হাজার ৮৭১মেট্রিকটন। চাল উৎপাদনও বেশী হবে। ধান কর্তন করা হয়েছে ২লাখ ৫৪ হাজার ৬৮৭ হেক্টর। যা ৯৯শতাংশ। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলা নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চল।
এই অঞ্চলের মধ্যে খুলনা জেলায় জমি আবাদ করা হয়েছে ৬৪হাজার ৮৬০হেক্টর। কর্তন করা হয়েছে ৬৪হাজার ৭১১ হেক্টর। চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা ২লাখ ৯০হাজার ৪৭১ মেট্টিকটন। বাগেরহাট জেলায় জমি আবাদ করা হয়েছে ৬২হাজার ৭১৪ হেক্টর। কর্তন করা হয়েছে ৬১হাজার ৭৭০ হেক্টর। চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা ২লাখ ৮৮হাজার ৭৫৩ মেট্টিকটন।
সাতক্ষীরা জেলায় জমি আবাদ করা হয়েছে ৭৯হাজার ৭৭৬হেক্টর। কর্তন করা হয়েছে ৭৮হাজার ৫৭৯ হেক্টর। চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা ৩লাখ ৩৬হাজার ৭৭১ মেট্টিকটন এবং নড়াইল জেলায় জমি আবাদ করা হয়েছে ৫০হাজার ২৩০ হেক্টর। কর্তন করা হয়েছে ৪৯হাজার ৬২৭ হেক্টর। চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা ধরা হয়েছে ২লাখ ২২হাজার ৮৭৬ মেট্টিকটন।
সূত্র জানিয়েছেন, আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এবছর এখনো সেচ সংকট দেখা দেয়নি। সরকার প্রণোদনা দেয়ায় কৃষকরা আগ্রহী হয়ে চাষাবাদে এগিয়ে আসছেন। হাইব্রিড ধান আবাদ করছেন ৮১হাজার কৃষক ও উচ্চ ফলনশীন ধানের আবাদ করছেন ৭৭ হাজার কৃষক। হাইব্রিড ধানের দাম বেশী হওয়ার কারণে সরকার প্রণোদনা হিসেবে জন প্রতি ২কেজি করে ১লাখ ৬২হাজার কেজি এবং এবং উচ্চ ফলনশীল জন প্রতি ৫কেজি করে ৩লাখ ৮৫হাজার কেজি ধান দেয়া হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহন কুমার ঘোষ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। শীত কম থাকায় চারা ভালো হয়েছে। বোরো ধানে খাদ্য উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতে এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবেনা। কৃষক সরকারী প্রণোদনা পাচ্ছেন। যাতে তারা উৎসাহি হয়ে কৃষি কাজে এগিয়ে আসেন। তিনি পতিত জমি ফেলে না রেখে কৃষি উৎপাদনে কৃষকদের প্রতি আহবান জানান।