শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া : খুলনার ডুমুরিয়ায় দিন দিন বাড়ছে বিনাচাষে আলুর আবাদ। এতে করে কম খরচে কৃষকরা বেশি ফলন পেয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয় বাজারে আলুর পযাপ্ত চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি কৃষকরা। আর বিগত বছরের থেকে এ বছর কৃষকরা বেশি জমিতে আলুর আবাদ করেছেন বলে জানায় ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নের টিপনা ব্লাকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুন্নাহার।
ধান ও ডাল উৎপাদনে ডুমুরিয়ার কৃষকরা এগিয়ে থাকলেও আলু চাষে এই এলাকার কৃষকদের তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায় না। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই এলাকার কৃষকরা আলুর আবাদ শুরু করেছেন। আলু আবাদে বিভিন্ন উচ্চফলনশীল জাতের ব্যবহারের পাশাপাশি কৃষকরা নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষাবাদ করছেন। এতে কৃষকদের চাষাবাদ খরচ যেমন কমছে তেমনি আলুর উৎপাদনের পরিমাণও বাড়ছে।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে এবার মোট ১৫২ হেক্টর আলু আবাদ হয়েছে, যার মধ্যে ৮ হেক্টরের মত বিনাচাষে আলুর আবাদ হয়েছে । উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় কৃষকরা নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়ে ভালো ফলন পেয়েছেন।
খর্নিয়া ইউনিয়নের টিপনা গ্রামের কৃষক মোঃ আরিফ হোসেন জানান, আমন ধান কাটার পর জমির মাটি যখন কিছুটা নরম থাকে তখন সেই জমিতে আলুর বীজ সারিবদ্ধভাবে রোপন করে দেওয়া হয়, এরপর তার উপর জৈব সার, ছাই, অন্যান্য সার, খড়কুটা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপর আর তেমন কোনো পরিচর্যা লাগে না। এতে চাষের খরচও হয় না।
একই ইউনিয়নের খর্নিয়া গ্রামের কৃষক মিঠুন রায় বলেন, ‘আমি এবার ২০ শতাংশ জমিতে আলুর আবাদ করেছি, আশা করছি ভালো ফলন পাবো।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন জানান, আলু চাষে চার থেকে পাঁচটি চাষ দিতে হতো কিন্তু এই পদ্বতিতে চাষ করলে কোনো চাষ দিতে হয় না। এছাড়া অনেক সময় দেখা যায় লবণাক্ততার কারণে অনেক জমিতে আমন ধানের পর অন্য কোনো ফসল চাষ করা যায় না। তবে এই পদ্বতিতে আলু মাটির উপরিভাগে চাষ করায় এবং খড়কুটা দিয়ে ঢেকে দেওয়ায় লবণাক্ততা থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হয়।
পাশাপাশি আলুর জন্য শীতের আবহাওয়াটা বেশি দরকার হয়, কিন্তু এই অঞ্চলে শীতের স্থায়ীত্বকাল কম থাকে। এ কারণে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি আলু ৭(ডায়ামন্ট), বারি আলু ৮ (কার্ডিনাল), বারি আলু ২৫ এবং ৭২ এই এলাকায় চাষের উপযোগী। ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার খর্নিয়া, মধুগ্রাম ও টিপনা গ্রামের ৫ জন কৃষকের মাঝে বিনা মূল্যে সার, বীজ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আর এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং সঠিক পরিচর্যার কারণে রোগ বালাই ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।
ডুমুরিয়ায় বিনাচাষে আলু আবাদে লাভ বেশি কৃষকের
Leave a comment