
শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া : খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় ইরি-বোরো ধান রোপণের মৌসুম চলছে। আর তাই শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করেই ইরি-বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণিরা। ধান রোপণ নিয়ে গ্রামে গ্রামে চলছে এখন উৎসবের আমেজ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেউ জমিতে হাল চাষ দিচ্ছেন, কেউ বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলছেন, আবার কেউ জমিতে চারা রোপণের উপযোগী করে তোলায় ব্যস্ত রয়েছেন। এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন মাঠজুড়ে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলায় ২১ হাজার ৭০৯ হেক্টর,
ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হযরত আলী জানান, শীতের কুয়াশা কম থাকায় বীজতলার কোনো প্রকার ক্ষতি হয়নি। এ ছাড়া বাজারে সার ও ওষুধের দাম বাড়ায় বোরো আবাদে কৃষকের মুখে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এবার তিনি দুই বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ধানের আবাদ করেছেন। ধান আবাদে খরচ বেশি হলেও বাজারের ধানের দাম কম। এ কারণে কৃষকদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
উপজেলার আটলিয়া গ্রামের কৃষক অহিদুজ্জামান জানান, এবার প্রায় দুই বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। শ্রমিকসংকট থাকায় চুক্তিভিত্তিতে বোরো রোপণের কাজ দেওয়া হয়েছে। বিঘাপ্রতি দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকার মতো দিতে হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে চারা রোপণ এবং সার, ওষুধ বাবদ পর্যন্ত বিঘাপ্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়া অনেকে ৪০০ টাকা করে শ্রমিককে দিয়ে সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করে নিচ্ছেন।
উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের চহেড়া গ্রামের কৃষক আলী হোসেন জানান, কৃষিতে উৎপাদন খরচ দিন দিন যেভাবে বাড়ছে সে তুলনায় ধানের দাম বাড়ছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও ধানের সেভাবে দাম বাড়েনি। কতিপয় দালাল/ফড়িয়ার কারণে প্রতি বছরই কৃষককে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করেন যেসব কৃষক। সরকারকে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় এবং দাম বাড়ানোর জন্য দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
তবে কীটনাশক, সার, ও বিদ্যুৎতের দাম কমানোর জন্য সরকারের সুদৃষ্টি দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, জেলায় চলতি মৌসুমে ৫৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারে ইউরিয়া, ফসফেট, টিএসপি, পটাশসহ সব প্রকার সার ও তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় ইরি-বোরো ধানের ভরা মৌসুমেও সংকট থাকবে না। এ ছাড়া কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন ডুমুরিয়া উপজেলায় ২১৭০৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আধুনিক উফশী জাত চাষাবাদের জন্য কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

