
শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া : ডুমুরিয়া (খুলনা)২৪ ডিসেম্বর হলুদ সরিষা ফুলে গ্রামের চারপাশ সেজেছে। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ যেন নববধূর হলুদ সন্ধ্যার সাজে। এরমধ্যে বসানো হয়েছে ২৪৬টি মৌবাক্স। সরিষা খেতে মৌমাছি ছেড়ে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা। এতে মৌচাষি যেমন লাভবান হন, তেমনি বাড়ছে ফসলের উৎপাদনও।
সাতক্ষীরার মেসার্স মাহিম মৌ খামারের মৌচাষি মিজানুর রহমান প্রায় ১৪ দিন ধরে তিনি সেখানে মৌবাক্সগুলো বসিয়ে মধু সংগ্রহ ও বাজারজাত করছেন।
মৌবাক্স পরিচর্যাকারী শ্রমিক মোঃ ইসলাম, কবির ও হাসান জানান, দশ দিন পর পর মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি বাক্স থেকে গড়ে প্রায় ৪ কেজি মধু পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত ২৪৬ বাক্স থেকে প্রায় ৩৫ মণ মধু সংগ্রহ করা হয়েছে।
এক যুগ ধরে মৌচাষ ও মধু সংগ্রহ করছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যতীন্দ্রনগর এলাকার মৌচাষি মিজানুর রহমান । তিনি বলেন, গত বছর ৫ মাসে ২৪৬ বাক্স থেকে ১২০ মণ মধু পেয়েছেন তিনি। এ বছরও একই পরিমাণ মধু পাবেন বলে আশা তার। মধু ৪০০ টাকা কেজি দরে টাকা বিক্রি করেন। এ মধু দেশের এসিআই ও এপি, ভারতের ডাবর কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে খুচরাও বিক্রি করা হয়।
সাধারণত অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে বেশি পরিমাণে মধু সংগ্রহ করা যায়। মৌবাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহে মৌচাষি ও সরিষা চাষি উভয়ই লাভবান হয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তারা বলেন, মধু আহরণের মাধ্যমে মৌচাষিরা যেমন আয় করেন, তেমন মৌমাছির পরাগায়ণের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
মৌচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি মৌবাক্সে ছয় থেকে আটটি ফ্রেম থাকে। প্রতিটি বাক্সে একটি করে রানী মৌমাছির সঙ্গে রয়েছে ৫০ হাজারের বেশি মৌমাছি। মৌমাছিগুলো প্রায় চার কিলোমিটার দূরে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে আনতে পারে। সাধারণত পাঁচ মাস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে থাকেন মৌচাষিরা। বাকি সাত মাস মৌমাছিদের খাবার দিয়ে পালন করেন। খুলনার ডুমুরিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শীত মৌসুমে সরিষা ফুল থেকে প্রথম মধু আহরণ করা হয়। শীতের শেষে মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও ফরিদপুরে ধনে ও কালিজিরার ফুল থেকেও মধু সংগ্রহ করে থাকেন মৌচাষিরা। এরপর তারা মৌবাক্স নিয়ে ঈশ্বরদী, নাটোর, রাজশাহী, দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যান। সেখানে লিচুর ফুল থেকে মধু আহরণ করা হয়। চৈত্র মাসে লিচু ফুলের মধু সংগ্রহ করা হয়।
কৃষি বিভাগ জানায়, গত বছর খুলনা জেলায় ৪১ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়। সে সময় জেলায় ৩৪ জন মৌচাষি ৫ হাজার ৬৪৩টি মৌবাক্স থেকে প্রায় ২৭ টন মধু সংগ্রহ করেন। এ বছর ৪১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এ বছর ৪৫ জন মৌচাষি ৭ হাজার ২৮৭ মৌবাক্স বসিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে খুলনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মৌবাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহে মৌচাষি ও সরিষাচাষি উভয়ই লাভবান হয়ে থাকেন। মৌমাছির পরাগায়ণের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। গত বছরের তুলনায় এবার সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। আশা করি এবার মৌচাষিরা মধুও বেশি সংগ্রহ করবেন। মধু সংগ্রহের কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় না।’

