জন্মভূমি রিপোর্ট : ডুমুরিয়ার ভদ্রা ও হরি নদী দখল করে গড়ে ওঠা ১৪ অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করেছে খুলনা জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়ে বৃহস্পতিবার এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটা মালিকদের যৌথ উদ্যাগে উচু-চিমনি ও ক্লিন বা চুল্লি ভাঙ্গা কার্যক্রমের পাশাপাশি ইট সরিয়ে নেয়া শুরু করা হয়। খর্ণিয়া ব্রিজ সংলগ্ন ‘নুরজাহান ব্রিক্স’র কর্তৃপক্ষ গত তিন দিন ধরে উঁচু চিমনি ও ক্লিন বা চুল্লি ভেঙ্গে এবং ইট সরিয়ে নিচ্ছেন। পাশে কে,বি-২ ব্রিক্স বুধবার তাদের চিমনি ভেঙ্গে নেয়াসহ ইট সরিয়ে নিচ্ছে। কে.পি.বি ব্রিক্স তাদের ক্লিনের আংশিক ভেঙ্গে নিচ্ছেন এবং ভাটার ভিতরে নদীর জায়গায় থাকা স্হাপনা সরাচ্ছেন। এ ছাড়া এস.বি ব্রিক্স, সেতু-১ ব্রিক্সও তাদের মধ্যে থাকা নদীর জায়গা ছেড়ে দিতে ক্লিন ভেঙ্গে ও অন্যান স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছেন। এ ছাড়া এফ.এম.বি ব্রিক্স তাদের চিমনি ভেঙ্গে সরিয়ে নিয়েছেন।
গত ত্রিশ বছর ধরে উপজেলার খর্ণিয়া ও রুদাঘরা ইউনিয়নের পশ্চিম পাশে বহমান ভদ্রা ও হরি নদীর দুই পাশে ব্যক্তি মালিকানার জমির সাথে নদীর চর ভরাটিয়া জমি অবৈধভাবে দখল করে এলাকার প্রভাবশালীরা ইটভাটা গড়ে তোলে।
নদীর চর দখল ও এলাকার পরিবেশের ঝুকির কথা বিবেচনা নিয়ে বিগত ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামক একটি মানবাধিকার সংস্থার পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরশেদ হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন।
আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ‘ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদী দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ১৪টি ইটভাটার মধ্যে থাকা সরকারি নদীর জায়গা থেকে ইটভাটা উচ্ছেদ/অপসারণ করে জমি অবমুক্ত করার জন্যে খুলনা জেলা ও ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ প্রদান করেন।’
কিন্ত আদালতের সেই আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় ২০২২ সালের ৭ডিসেম্বর রিটকারি আইনজীবির আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট খুলনা জেলা প্রশাসক ও ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে জবাব দেয়ার নির্দেশনা দেন।
এরই প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার গত ১০ জানুয়ারী আদালতে উপস্হিত হয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বিচারপতি জে.বি.এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল’র সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই ১৪টি অবৈধ ইটভাটা অপসারণ করে নদীর জায়গা অবমুক্ত করে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু তারপরও ইটভাটা মালিক পক্ষ সময় চেয়ে উচ্চ আদালতে একাধিক আবেদন করলেও তা খারিজ করে দেওয়া হয়। তারই প্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানুয়ারি মাসে ওইসব ভাটাগুলোর মধ্যে থাকা সরকারি জমির সীমানা নির্ধারণ করা হয়।
অভিযান কার্যক্রম মনিটরিং করছেন জেলা প্রশাসক মো: ইয়াসির আরেফিন, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শেখ আবু সাইদ, পাউবোর বিভাগীয় উপ প্রকৌশলি মো: মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) এস.এম মুমিন লিংকন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(এল,এ) আতিকুল ইসলাম, ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ আসিফ রহমান, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আফরোজ শাহীন খসরু প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক মোঃ ইয়াসির আরেফিন বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায় এবং আইনবিধি মোতাবেক আমরা ১৪টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। তাছাড়া সি.এস রেকর্ড অনুযায়ী নদীর জমি চিহ্নত করে তা উদ্ধার করা হচ্ছে।