শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া : সৈয়দ রেহেনা ঈসা একজন গৃহিনী। অথচ তাকে খুলনা সরকারি সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের সহযোগি অধ্যাপক সাজিয়ে ডুমুরিয়ার আঠারোমাইল সৈয়দ ঈসা টেকনিক্যাল এন্ড বি এম কলেজের সভাপতি হিসেবে নাম প্রেরণ করা হয়। কারিগরি বোর্ড থেকে অনুমোদনও নেওয়া হয়। কলেজটির দূর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ জি এম আব্দুস সাত্তার শুধুমাত্র সভাপতির ক্ষেত্রে এ জালিয়াতি করেননি। অভিভাবক সদস্য, দাতাসদস্য, বিদ্যুৎসাহী সদস্য, প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসহ অধিকাংশ সদস্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও চরম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। হাইকোর্টের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের তদন্তে এসব দূর্নীতির সত্যতা মিলেছে।
জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, আঠারোমাইল সৈয়দ ঈসা টেকনিক্যাল এন্ড বি এম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক এম এম আলাউদ্দীন ও অফিস সহকারী আক্তারুজ্জামান ২০২২ সালের ১০ অক্টোবরে অধ্যক্ষ কর্তৃক ভ’য়া কাগজপত্র তৈরি করে সভাপতিসহ ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদনকে বেআইনী মর্মে হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশন দাখিল করেন। ৮০৭৮/২০২৩ নম্বর রীট পিটিশনে মহামান্য হাইকোর্ট বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে ১ মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দেয়। তার প্রেক্ষিতে কারিগরি বোর্ড খুলনা জেলা প্রশাসককে তদন্ত করতে অনুরোধ জানালে সহকারি কমিশনার নাভিদ সারওয়ারকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
অধ্যক্ষ সভাপতি হিসেবে বেগম রেহেনা ঈসাকে সরকারি আদর্শ সুন্দনবন মহাবিদ্যালয়ের সহযোগি অধ্যাপক হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে তদন্তকালে দেখা গেছে তিনি একজন গৃহিনী। কোনদিন কোন চাকরী করেননি। সরকারি সুন্দরবন কলেজের অধ্যক্ষ তার প্রত্যায়নে উল্লেখ করেছেন সৈয়দ রেহেনা ঈসা কোন দিন অত্র প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাকতা করেননি এমনকি এ নামেও ইতিপূর্বে কোন শিক্ষক এ প্রতিষ্ঠানে ছিল না। উল্লেখ্য, শহরের অদুরে কোন কারিগরি কলেজের সভাপতি হবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অথবা তিনি কর্তৃক মনোনীত কোন ব্যক্তি বা সরকারি বা ¯^ায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে অবঃসর প্রাপ্ত প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পর্যায়ের ব্যক্তি। তবে এর কোনটিই অনুসরন করেননি দূর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ জি এম আব্দুস সাত্তার। অধ্যক্ষের ভাই আবুল হোসেনকে দাতা সদস্য করা হয়েছে। অথচ তদন্তকালে আবুল হোসেন দাতা সদস্য হিসেবে তার ¯^পক্ষে কোন দালিলিক প্রমান দেখাতে পারেনি। অধ্যক্ষের সকল অপকর্মের সহযোগি অফিস সহকারি সুরঞ্জন ঘোষ। অভিভাবক সদস্য হিসেবে তার স্ত্রী কাজল রানী ঘোষকে বিনা প্রতিদ›িদ্বতায় নির্বাচিত দেখানো হয়েছে। তবে তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে কাজল রানী ঘোষ তার ছেলে শুভ ঘোষের অভিভাবক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে শুভ ঘোষ ৫ বছর আগে ওই কলেজ ত্যাগ করেছেন। তদন্তকালে ভোটার তালিকায় কাটাছেড়া এবং শুভর অভিভাবকের ¯’ানে কাজল রানী এবং মায়ের ¯’ানে উষা রানী ঘোষ লেখা রয়েছে। তদন্তে রিপোর্টে এ জালিয়াতির তথ্য উঠে এসেছে। অধ্যক্ষের আপন বোন রশিদা খাতুনকে বিধিবর্হিভ’ত ভাবে সদস্য করা হয়েছে। অধ্যক্ষের আস্তাভাজন সহযোগি ল্যাব সহকারী রুমিচা খাতুনের ¯^ামী রফিকুল ইসলামকে বিদ্যুৎসাহী সদস্য করা হয়েছে সম্পূর্ন বেআইনীভাবে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার ও তদন্তকারী কর্মকর্তা নাভিদ সারওয়ার তার তদন্ত রির্পোটের শেষভাগে উল্লেখ করেছেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের একাধিক ধারা লংঘন করে বিধিবর্হিভ’ভাবে গঠিত কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন করার সুপারিশ করেন। অধ্যক্ষ তার সুবিধার্থে কখনও ভাবি, কখনও ভাই, কখনও বোন, কখনও ভগ্নিপতিকে অভিভাবক সদস্য, দাতা সদস্য তৈরি করেন। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি এখন তার কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ আল-আমিন বলেন, তদন্তে সত্যতা পেলে কঠিন ব্যবস্হা গ্রহন করা হবে।