শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া : খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া এলাকার হরি নদীর পাশ দিয়ে দক্ষিণ দিকে চলে গেছে একটি পিচঢালা সড়ক। ওই সড়ক ধরে সামনে এগিয়ে গেলেই দেখা মেলে খনন করা ভদ্রা নদীর। নদীর পশ্চিম পারে শোভনা ও পূর্ব পারে খর্নিয়া ইউনিয়ন। আগে নদী না থাকায় খর্নিয়ার ভদ্রদিয়া গ্রামের কাছে নদীর মাঝবরাবর তৈরি করা হয়েছিল শোভনা ও খর্নিয়া ইউনিয়নের মধ্যে সংযোগ সড়ক। গত শনিবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খনন করা নদীর জায়গায় এখন বিশাল মাঠ। মাঠে শত শত গরু-ছাগল চরছে। নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে সংযোগ সড়কটি কেটে ফেলা হয়েছে। চলাচলের জন্য পাশেই তৈরি করা হয়েছিল কাঠের সেতু। বর্তমানে ওই এলাকায় নদীর মাত্র ১০-১৫ ফুট খালের মতো আছে। তবে তাতে পানি নেই। দুই পাশে ভরাট হয়ে যাওয়া জমিতে গত বছর ধান লাগানো হয়েছিল, সেই চিহ্ন এখনো আছে। ভরাট হয়ে যাওয়া অনেকেই মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করে নদী দখলে নিয়েছেন। সংস্কার না করায় কাঠের সেতুটির বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গেছে। এ কারণে রাস্তা থাকার স্থানেই আবার নতুন করে রাস্তা করা হচ্ছে। এ জন্য নদীর মাঝবরাবর চওড়া করে ফেলা হয়েছে মাটি।
ওই এলাকায় কথা হয় শোভনা গ্রামের ইনতাজ শেখের সঙ্গে। নদীর চরে গরু চরাচ্ছিলেন তিনি। ৭০ বছর বয়সের ইনতাজহাবিবুর রহমান শেখের চোখের সামনেই এ নদীর বাঁচা-মরা সবই হয়েছে। তিনি বলেন, ওই নদী এতটাই বড় ছিল যে বড় বড় লঞ্চ, জাহাজ চলত। আশির দশকের দিকে নদী ভরাট হওয়া শুরু হয়। এরপর কয়েক বছরের মধ্যে নদীর আর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। একেবারে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। তখন মানুষ চলাচলের জন্য নদীর মধ্যে রাস্তা তৈরি করে। এলাকার মানুষ সরকারের কাছ থেকে জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। অনেকে আবার নদীর মধ্যে ঘরবাড়ি তৈরি করেছিলেন। নতুন করে নদী খননের সময় সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়। খনন করার পর নদীর পানিপ্রবাহ শুরু হওয়ার এক বছরের মধ্যে ভরাট হতে শুরু করে। দেখতে দেখতেই আবার ভরাট হয়ে যায়। আগের চেয়ে এবার নদীর বুক বেশি উঁচু হয়ে গেছে।
সাহস ইউনিয়নের গাবতলা এলাকায় ছিল আরেকটি সড়ক। সেটি সাহস ও শোভনা ইউনিয়নকে সংযুক্ত করেছে। ভদ্রাদিয়া এলাকার সড়কটি কেটে ফেলা হলেও গাবতলা এলাকার সড়কটি কাটা হয়নি। এ কারণে ওই সড়কের দুই পাশে নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই, নেই পানিপ্রবাহের কোনো চিহ্ন।
ওই এলাকায় কথা হয় রফিকুল আলম সঙ্গে। তিনি ব্যাটারিচালিত ভ্যান নিয়ে সড়কটি পার হচ্ছিলেন। মোস্তাক বলেন, নদীর দুই পারের মানুষের যাতায়াতের জন্য নদীর ওপর সেতু করার কথা ছিল। কিন্তু সেতু না হওয়ায় সড়কটি কাটতে দেননি এলাকাবাসী। এ কারণে খননের পর নদীর দুই পাড়ে মুখ কেটে দিলে পানি এসে জমা হতো ওই সড়কের দুই পাশে। ধীরে ধীরে পলি জমতে থাকে। এক বছরের মধ্যেই নদী একেবারে ভরাট হয়ে যায়।
মোস্তাক আহমেদ আরও বলেন, নদী খননের আগে মানুষ নদীর জমিতে ফসল ফলিয়ে খেতে পারতেন। নদী খনন করার পর ওই সুযোগ বন্ধ হলেও স্থানীয় লোকজন নদীতে মাছ ধরে ও পানি দিয়ে কৃষিকাজ করতেন। কিন্তু নতুন করে ভরাট হয়ে যাওয়ার পর কোনো কিছুই করতে পারছেন না তাঁরা। এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে একটু ভারী বৃষ্টি হলেই এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।
জানতে চাইলে পাউবো প্রকৌশলী পলাশ কুমার বলেন, সালতা ও ভদ্রা নদী খননের সঙ্গে হামকুড়া নদীর খনন প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোভিডসহ বিভিন্ন কারণে ওই নদী খননের প্রকল্প বাতিল হয়। অন্যদিকে ভদ্রার দুই প্রান্তে দুটি স্লুইসগেট করার কথা থাকলেও পরবর্তীকালে নিষেধাজ্ঞার কারণে তা করা হয়নি। এ কারণে পলি পড়ে দুই বছরের মধ্যেই ভদ্রা ভরাট হয়ে গেছে। এখন হামকুড়া খননের জন্য নতুন প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। ওই প্রকল্পের সঙ্গে ভদ্রাও পুনঃখনন করার কথা বলা হয়েছে।
ডুমুরিয়ার খনন করা নদীর জায়গায় এখন বিশাল মাঠ
Leave a comment