
শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া : ডুমুরিয়াসহ সারাদেশে সুবাসে মৌ-মৌ করছে বাজার। ঘরে-ঘরে তৈরি হচ্ছে তালের পিঠা। অনেকে পাকা তালের মিষ্টি ঘন রস কাঁচাই খান, আবার অনেকে সিদ্ধ করে তা দিয়ে পিঠা বা সুস্বাদু খাবার বানিয়ে খান। এছাড়া তালের বীজের শাঁস অনেকের প্রিয়।
দুই তিন মাস আগে বাজারে কাঁচা তালের রসালো শাঁস রসনা মিটিয়েছে। এখন শহর-গ্রাম সবখানে তালের রস দিয়ে নানা রকমের পিঠা, পায়েস, পাকোয়ান, তালমিছরি, তাল মাখনা, তালের বড়াসহ রকমারি খাবার তৈরি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আড়তদাররা রাজধানীতে নিয়ে এসেছেন পাকা তাল। ছোট আকারের তাল ১০ থেকে ১৫ টাকা, মাঝারি আকারের তাল ২০ থেকে ৩০ টাকা এবং বড় আকারের ডাল ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তালের পবা ঝুড়িতে সাজিয়ে ফেরি করে বিক্রি করছেন অনেকেই।
ডুমুরিয়া, ধনিয়া, টিপনা নতুন রাস্তা, শাহাপুর বাজারের তাল বিক্রেতা আবদুল জলিল শেখ জানান, এ সপ্তাহ থেকে পাকা তাল আসা শুরু হয়েছে। বেশির ভাগই আসছে ডুমুরিয়া থেকে। তবে গুণগত মানের দিক থেকে চুকনগরের তালের সুনাম আছে। তবে সপ্তাহখানেক পর এর পরিমাণ আরো বাড়বে।
দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই কম- বেশি তালগাছ দেখা যায়। কি সমতল, কি পাহাড় কিংবা হাওর- বাঁওড় সবখানেই দেখা যায়- বলা হয়। ‘তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে, সব তালগাছ গাছ ছাড়িয়ে উকি মারে আকাশে।
আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে সারাদেশে হাজারো গাছের মধ্যে তালগাছ সারি দেখা যেত।
কালের আবর্তে তালগাছ বর্তমানে অনেকটাই অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। বৃক্ষরোপণ অভিযানকালে আমরা অন্যান্য গাছ লাগালেও তালগাছকে এড়িয়ে যাই। অপরিকল্পিতভাবে তালগাছ কাটা নাড়ত। এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন আর মাঠের ধারে ও গেঁয়ো পথের পাশে সারি সারি তালগাছ চোখে পড়ে না। চোখে পড়ে না তালগাছে বাবুই পাখির বাসা বাঁধার মনকাড়া সেই দৃশ্য।
তাল একটি ভারতীয় উপমহাদেশীয় গ্রীষ্মকালীন ফল যা তালগাছ নামক পাম গোত্রীয় গাছে ফলে। তালগাছ পাম গোত্রের অন্যতম লম্বা গাছ, যা উচ্চতায় ৩০ ফুট হতে পারে। তালের পাতা পাখার মতো ছড়ানো তাই বোরাসান গণের পাম গোত্রীয় গাছ গুলিকে একত্রে ফ্যান-পাম উপমহাদেশীয় অনেক অঞ্চলেই জনপ্রিয়। কারণ তাল গাছের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত কিছুই ফেলনা নয়। তালপাতা দিয়ে তৈরি হতো সেপাই। প্রবাদে বলা হয়- তালপাতার সেপাই। একটা কাঠির আগায় লাগানো থাকত। কাঠিটি হাতের আঙুল দিয়ে ঘোরালেই সেপাই নানা কায়দায় হাত-পাতালপাতার ব্যবহার বিভিন্ন রকম। হাত পাখার কথা তো বলাই বাহুল্য। এ দিয়ে টুপি, ঝুড়ি, চাটাই, মাদুর, বেড়াসহ নানা খেলনা তৈরি হয়। কাঠও দারুণ শক্ত এবং আশযুক্ত। সহজে পচে না বা নষ্ট হয় না। ছোট ডিঙি নৌকা তো হয়ই, ছাতির বাঁট, লাঠি, বাক্স, পাপোশ, কয়ার ইত্যাদি জিনিসও তৈরি হয় ওই তালগাছ থেকে। গ্রামের বহু পুকুরের ঘাটলাও তৈরি করা হয় তালগাছের গুঁড়ি দিয়ে। তালগাছ চিরে যে নৌযান বানানো হয় তার নাম ডোঙা।
গ্রামীণ জনপদের বর্ষাকালীন এক উপকারী নৌযান এটি। শাপলা তুলতে, মাছ ধরতে, পণ্য ভারতীয় বা অন্যান্য মালামাল পরিবহনে এটা দারুণ দরকারি।