ধামাচাপা দিতে কর্মকর্তাকে বদলি
জি এম ফিরোজ, ডুমুরিয়া : বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ডুমুরিয়া উপজেলা অফিসের হতদরিদ্র ও অসহায়দের মাঝে সহজ শর্তে ঋণদানের ২ কোটি টাকা কোন হদিস মিলছে না। বিআরডিবি থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে প্রদেয় ঋণের টাকা আদায়ে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে যাদের নামে ঋণ বরাদ্দ দেখানো হচ্ছে তাদের বেশির ভাগ মানুষের কোন অস্তিত্ব খুজে পাওযা যাচ্ছে না। তাছাড়া গ্রামীণ অবকাঠামো ইন্নয়নের পিআরডিবি স্কীম- ৩ এর দুই কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও সেসব প্রকল্পের কোন অস্তিস্ত নেই। গত কয়েক বছর যাবত ধরে চলে আসা এমন অনিয়ম ধরা পড়ে সর্বশেষ ২০২২ সালে বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর বর্তমান উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ হাসান ইমাম সরকারের অর্থ আদায় করতে যাওয়ায় ওই অফিসের কতিপয় ব্যক্তির রোষানলে পড়েন। বাধ্য হয়ে উপজেলা বিআরবি কর্মকর্তা ডুমুরিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এমন অবস্থায় গত ৯ নভেম্বর বিআরডিবি কর্মকর্তাকে ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলায় বদলির আদেশ দেয়া হয়। সূত্রে জানা যায়, ডুমুরিয়া উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লি.-এর সোনালী ব্যাংক (চিংড়ি) খাতে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ ২ কোটি ১লাখ ৯৯ হাজার ৭১৯টাকা। নীতিমালা বহিঃভূত ঋণ বিতরণের ফলে ওইসব ঋণ গ্রহীতা সদস্যগণের নিকট ঋণ খেলাপী হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খেলাপী ঋণের ২ কোটি ১লাখ ৯৯ হাজার ৭১৯টাকার মধ্যে প্রায় ১ কোটি টাকা ইউসিসিএ লি. এর পরিদর্শকগণ মাঠ থেকে উত্তোলন করে অফিসে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার, ডুমুরিয়া, খুলনা ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক (চিংড়ি) খাতে অনিয়মের বিষয়ে স্মারক নং- ৪৭.৬২.৪৭৩০.৮৫৪.০০.০০৮.২০.২৪৮, তারিখ: ১১/০৫/২০২৩ খ্রি. উপ-পরিচালক, খুলনা’কে পত্র প্রেরণ করেন। বর্তমানে সোনালী ব্যাংক ২০২১-২২ অর্থবছরের খেলাপী ঋণ পরিশোধ না করলে পুনঃরায় কোন ঋণ প্রদান করবে না। এই মর্মে সোনালী ব্যাংকের স্মারক নং- ৪৫২, তারিখ: ১৯/১০/২০২৩ পত্রে জানিয়েছেন। ফলে ডুমুরিয়া উপজেলায় ১০২টি সমবায় সমিতির ২ হাজার ৫০ জন সমবায়ীর শেয়ার-সঞ্চয়ের জমাকৃত ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংক খেলাপী ঋণে সমন্বয় করে নেবেন বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়। পিআরডিবি-৩ স্কিম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়ম আছে বলে জানা যায়। ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত পিআরডিবি-৩ এর আওতায় প্রায় ২ কোটি ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২০৪টি স্কিম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বাস্তবায়নকৃত ২০৪টি স্কিমের কোন ফাইল, সরকারি টাকা উত্তোলনের ফাইল নোট, স্কিমের ছবি, রেজুলেশন, স্কিম বাস্তবায়নের স্থানে নাম ফলক ইত্যাদি ডুমুরিয়া উপজেলা বিআরডিবি দপ্তরে পাওয়া যায়নি বলে সাংবাদিকগণ জানিয়েছেন। তাছাড়া স্কিম বাস্তবায়নের যে রিপোর্ট বিআরডিবি সদর দপ্তরে প্রেরণ করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার মোঃ হাসান ইমাম জানান বিগত ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর ডুমুরিয়া উপজেলায় যোগদান করেন। যোগদানের পর হতে খেরাপী ঋণ আদায়ে উদ্যোগ করেন। এতে তিন পরিদর্শক ক্ষিপ্ত হন তার উপর। এ বিষয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ডুমুরিযা থানায় ১৫৩২ নম্বর সাধারণ ডায়েরি করেন। ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সহকারি উপপরিদর্শক সরদার রমজান আলীকে। এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরির তদন্ত কর্মকর্তা এএসআই সরদার রমজান আলী জানান, উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তার দায়ের করা সাধারণ ডায়েরিটি পরবর্তি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হযেছে। আদালতের নির্দেশনা পেলে পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পল্লী উন্নয়ন বোর্ড খুলনার উপ-পরিচালক একেএম আশরাফুল ইসলাম জানান, সোনালী ব্যাংক কোন চিঠি দিয়েছে কিনা জানা নেই। টাকা নয়ছযের বিষয়টি সম্পর্কে বলেন, মাঠ পর্যায়ে কি হয়েছে আমার জানা নেই। সরকারের টাকা নয়ছয় হলেতো তদন্ত কমিটি হত। এক্ষেত্রে তো কোন কমিটি গঠণ করা হয়নি । তবে ডুমুরিয়া উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ হাসান ইমামকে ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলায় বদলি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ পল্লী উন্নযন বোর্ডের মহাপরিচালক আঃ গাফ্ফার খান বলেন, খুলনা জেলার ডুমুরিযা উপজেলা অফিসে ঋণের টাকা বিতরণে অনিযম ও পিআরডিবি স্কীমের টাকা ব্যযে অনিয়মের বিষয়টি শুনেছেন। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ও আনগত ব্যবস্থা নেযা হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, কর্মকর্তা-কমৃচারীদের বদলি একটি নিয়মিত পদ্ধতি। স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ ডুমুরিয়ার জনগণের এত বড় ক্ষতি দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না। পিআরডিপি-৩ এর স্কিম বাস্তবায়নে অনিয়ম ও নিয়ম বহির্ভূত ঋণ বিতরণ-আদায়ের সাথে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং নিরপেক্ষ তদন্ত মাধ্যমে জবাবদিহিতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হবে বলে।