
২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড
যশোরের দুই উপজেলাকে ‘ডেঙ্গুর রেড জোন’ ঘোষণা
খুমেক হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি
শরণখোলায় শিশুর মৃত্যু
জন্মভূমি ডেস্ক : সারাদেশে যত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে ৬০ ভাগই ঢাকার। এ পর্যন্ত ৫৭টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই যদি সজাগ না হই তাহলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
রোববার দুপুরে মন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকার মানিকগঞ্জের গড়পাড়ায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, দেশে ডেঙ্গুতে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১২ হাজার আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং ৯ হাজারের বেশি লোক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক-নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয়াসহ সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে, ডেঙ্গু মোকাবিলা করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য সবাইকে সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখতে হবে। এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনগুলোকে বেশি বেশি মশা নিধনের ওষুধ স্প্রে করতে হবে। বহুতল ভবনে ডেঙ্গু দেখা দিচ্ছে বেশি। সেখানে গ্যারেজ এবং ড্রেন থাকে। নির্মাণাধীন ভবনেও পানি জমে এডিস মশার জন্ম হয়।
মন্ত্রী বলেন, গত বছর এ সময় অনেক ভালো অবস্থায় ছিলাম। বর্তমানে মশা এবং ডেঙ্গু অনেক বাড়তি, এখন থেকে যদি আমরা সজাগ না হই তাহলে এটা আরও বেড়ে যাবে। আমাদের ডিপার্টমেন্টে যারা মশা নিয়ে গবেষণা করেন তারা জানিয়ে দিয়েছেন কোথায় কোথায় মশা ভেসে আছে এবং ঘনত্ব বেশি আছে। এখন বাকি কাজটুকু সিটি কর্পোরেশনের। সিটি কর্পোরেশন স্প্রে করেছে কিন্তু আমার কাছে মনে হয় তারা সেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। যার ফলে ডেঙ্গু এত বেড়েছে।
আমাদের মেয়ররা বিভিন্ন ভবনে যাচ্ছেন তদারকি করছেন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কিন্তু সেভাবে নিয়ন্ত্রণে আসে নাই বলে জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, একার পক্ষে সম্ভব নয় জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে ডেঙ্গু মোকাবেলায়।
মন্ত্রী আরও বলেন, দেশে আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু আরো বাড়তে পারে। সেজন্য এখন থেকেই সবাইকে সজাগ এবং সচেতন হতে হবে।
॥ ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড ॥
শনিবার সকাল আটটা থেকে রবিবার সকাল আটটা পর্যন্ত দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় ডেঙ্গু ৮৩৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এই নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭৩ জন। এর মধ্যে জুলাইয়ের প্রথম নয়দিনে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম রবিবার (৯ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৫১৬ জন। বাকি ৩২০ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৯৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বর্তমানে ২ হাজার ৭৫০ ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
॥ যশোরের দুই উপজেলাকে ‘ডেঙ্গুর রেড জোন’ ঘোষণা ॥
যশোরে গত ৯ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ জন। এ পরিস্থিতিতে দুই উপজেলাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। উপজেলা দুইটি হলো- যশোর সদর ও অভয়নগর। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক।
বাসসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১ জুলাই থেকে ৯ জুলাই এই ৯ দিনে জেলায় মোট ৮০ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৬ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. পার্থ প্রিতম চক্রবর্তী বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৭ জন এবং নারী ২ জন। রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে বর্তমানে যে অবস্থা তাতে আগামীতে মেডিসিন বিভাগে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই প্রয়োজনে হাসপাতালের ‘রেডজোন’ ব্যবহার করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক বলেন, যশোরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দ্রুত বেড়েই চলছে। সেজন্য সদর উপজেলা এবং অভয়নগর উপজেলাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
॥ খুমেক হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ॥
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘন্টায় ৭ জন ডেঙ্গুরোগী নতুন ভর্তি হলেন। এ নিয়ে চার দিনে নতুন রোগী ভর্তির সংখ্যা ২১ জন। আর চলতি বছর মোট সনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭৬ জন। চার দিনে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২০ জন রোগী। রবিবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২১ জন। খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সূত্রমতে, গত ৬ জুন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। এদিনে ২ জন সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র গ্রহণ করেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১৯ জন। পরের দিন ৭ জুন নতুন রোগী ভর্তি হয় ৬ জন। ছাড়পত্র গ্রহণ করেন ৯ জন আর এদিনে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১৬ জন। ৮ জুন নতুন ভর্তি হয় ৪ জন রোগী। হাসপাতালে মোট ভর্তি ছিলেন ২১ জন। এদিনে কোন রোগী ছাড়পত্র পায়নি। গতকাল নতুন ভর্তি হয় ৭ জন রোগী। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১৯ জন আর ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফেরেন ৯ জন।
॥ শরণখোলায় শিশুর মৃত্যু ॥
শরণখোলায় রোববার সকালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কৌশিক নন্দী (৪) নামে একটি শিশু মারা গেছে। শিশুটি উপজেলার ধানসাগর গ্রামের সমির নন্দীর পুত্র।
মৃত্যু শিশুর পিতা জানান, গত শুক্রবার রাতে তার শিশু পুত্র কৌশিক জ্বরে আক্রান্ত হয়। গত শনিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ তহিদুল ইসলামের কাছে নিয়ে গেলে পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে চিকিৎসক জানান তার পুত্র ডেঙ্গু আক্রান্ত। শিশুটির অবস্থা খারাপ হলে রোববার সকালে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন বলে শিশুর পিতা সমির নন্দী জানিয়েছেন।
শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ তহিদুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত শিশু কৌশিককে শনিবার রাত ৮টার দিকে তার কাছে নিয়ে আসলে তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ প্রিয় গোপাল বিশ্বাস বলেন, শরণখোলায় প্রথম এই শিশুটি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। প্রতিদিন অনেক রোগী জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে। গত এক সপ্তাহে ৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো এর মধ্যে ২ জন সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছে অপর একজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে বলে ডঃ প্রিয় গোপাল বিশ্বাস জানিয়েছেন।