জন্মভূমি ডেস্ক : কোটা বাতিলের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার (৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ -এর ব্যানারে ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে বসে স্লোগান দিচ্ছেন। এতে ফার্মগেট-শাহবাগ, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ-সায়েন্সল্যাব রোড এবং শাহবাগ- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। এসময় সাধারণ জনগণ গাড়ি ছেড়ে হেঁটে গন্তব্যের পথে রওনা হন। তবে অ্যাম্বুলেন্সের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য শিক্ষার্থীরা জায়গা করে দেন।
আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে আমরা বুয়েট, ইডেন কলেজ, হোম ইকোনমিকস কলেজ ঘুরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শাহবাগে জড়ো হয়েছি। আমাদের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবেই।
শিক্ষার্থীরা জানান, এই কোটা পদ্ধতির ফলে চাষার ছেলে চাষা, রাজমিস্ত্রীর ছেলে রাজমিস্ত্রী, মজুরের ছেলে মজুর থেকে যাবে। আমরা একই প্রশ্নে পরীক্ষা দেবো, একই প্রশ্নে লিখব, একই প্রশ্নে ভাইভার মুখোমুখি হবো। কিন্তু তারা কোটা সুবিধার কারণে একাই একশ সুবিধা পাবে, সেটা মেনে নেবো না।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘অবরোধ অবরোধ, শাহবাগ অবরোধ’, দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার”, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে, টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের শহর বাইপাসের আশেকপুর এলাকায় অবরোধ করেন। দেড় ঘণ্টা পর দুপুর ১২টার দিকে তারা মহাসড়ক থেকে সরে যান।
কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রেখে দ্রুত কমিশন গঠনের দাবি জানান তারা।
কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার বেলা ১১টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান সম্বলিত ব্যানার প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে মিছিল নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকের সামনে ঢাকার রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে শনিবার বেলা ১১টায় আন্দোলন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা প্রায় আধাঘণ্টা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।
পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৬ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠালতলা থেকে মিছিল বের করে রায়সাহেব বাজার পেরিয়ে তাঁতীবাজার মোড়ে তারা অবস্থান নেন। পঞ্চম দিনের এই কোটাবিরোধী আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, এবার শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবিতে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দাবিগুলো হলো:
১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।
২. পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সমস্ত গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত)।
৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া।
৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।