By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
Reading: তারা বৈষম্যের বাধ ভেঙেছেন সমাজসেবায়
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > খুলনা > তারা বৈষম্যের বাধ ভেঙেছেন সমাজসেবায়
খুলনাজেলার খবরঝিনাইদাহ

তারা বৈষম্যের বাধ ভেঙেছেন সমাজসেবায়

Last updated: 2025/09/20 at 1:57 PM
করেস্পন্ডেন্ট 1 year ago
Share
SHARE

ঝিনাইদহে চার হিজড়া জনপ্রতিনিধি

আওয়াল শেখ, প্রকাশের তারিখ:  ৫ জুলাই ২০২৪

সমাজে পদে পদে বৈষম্যের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও, মানুষের মন জয় করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন ঝিনাইদহ জেলার চার জন হিজড়া। লিঙ্গ বৈচিত্র্যের প্রতি বৃহত্তর সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা সত্ত্বেও, হিজড়া প্রার্থীদের দৃঢ় সংকল্প, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি উদারতা ও ভোটারদের প্রগতিশীল মানসিকতা সৃষ্টি করাতে পেরে, তারা বৈষম্যে নিমগ্ন সামাজিক প্রথা ভাঙতে পেরেছেন। তাদের এই অর্জন শুধু বাংলাদেশের সাম্যের অগ্রগতিই নয় বরং হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক কলঙ্ক এবং বৈষম্য দূর করার আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন সমাজ বিশেষজ্ঞরা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) অধ্যাপক ড. তুহিন রায় বলেন, তাদের এই বিজয় আমাদের দেশের জন্য একটি গর্বের বিষয়। এতে বোঝা যাচ্ছে আমাদের সমাজ সমতার দিকে বিকশিত হচ্ছে।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত ওই চার জন হিজড়া হলেন, ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পিংকী খাতুন, কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু, শৈলকূপা উপজেলার ফুলহরি ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য শম্পা খাতুন পপি ও সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বর্ষা খাতুন।

দেশের প্রথম হিজড়া জনপ্রতিনিধি পিংকি

২০১৯ সালের অক্টোবরে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন তৃতীয় লিঙ্গের পিংকি খাতুন। তিনি দেশের প্রথম হিজড়া জনপ্রতিনিধি। পিংকি ১২ হাজার ৮৮০ ভোট পেয়েছিলেন ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রুবিনা খাতুন পেয়েছিলেন ১২ হাজার ১৩৯ টি।

৪২ বছর বয়সী পিংকি খাতুনের বাড়ি কোটচাঁদপুর উপজেলার দোড়া ইউনিয়নের সোয়াদি গ্রাম। তার বাবার নাম নওয়াব আলী ও মা কুলসুম বেগম। তার দুই ভাই কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন, আর এক বোন বিবাহিত। দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর ১৯৯৬ সালে পিংকির বিয়েও হয়েছিল, তবে তা টেকেনি।

ছোট বেলা থেকে পিংকির স্বভাব ছিল মানুষের সেবা করার। এক পর্যায়ে যোগ দেন রাজনীতিতে। ২০১৭ সালে উপজেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক হন। পরে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি অংশ নেন।

পিংকি বলেন, নির্বাচনে অংশ নিলে প্রথম দিকে প্রতিদ্বন্দ্বী অনেকে কটু কথা বলতো। তবে প্রান্তিক মানুষেরা আমার পক্ষে ছিলেন। তারা বুঝতে পেরেছিলেন আমি নির্বাচিত হলে, তারা উপকৃত হবেন। আমারও মানুষের প্রতি আস্থা ছিল। তাই ভোটে বিজয়ী হয়েছি।

মানুষের মন জয় করার ব্যাপারে পিংকি বলেন, নির্বাচনের আগে এই উপজেলার ৮৬ টি গ্রামে ঘুরে ঘুরে আমি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। অনেকে বলেছে তুই কেন নির্বাচনে এসেছিস? তোকে দেখতে কেমন? কথা এমন কেন? এভাবে হাঁটে কেন? তাদেরকে আমি বুঝিয়েছি, তোমাকেও যে সৃষ্টি করেছেন, আমাকেও তো সেই সৃষ্টি করেছেন। এই সৃষ্টিতে তো আমাদের কোন হাত নেই। যারা তখন আমাকে কটুক্তি করেছে, আমি তাদের বুঝিয়েছি। তারা বুঝতে পেরেই আমাকে ভোট দিয়েছেন।

নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আরও দৃঢ় ভাবে নিজেকে জনসেবায় নিযুক্ত করেছেন। পিংকি বলেন, আমি মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রতিনিয়ত খোঁজ নিচ্ছি কার কি সমস্যা আছে। যতটুকু পারছি সহায়তা করছি। যেমন কারই জ্বর হলে, আমার কাছে যদি ১০ টা টাকা থাকে তা দিয়ে প্যারাসিটামল কিনে দিচ্ছি। এতে মানুষ আমার উপর সন্তুষ্ট আছে।

ভবিষ্যতে এলাকার মানুষের সাথে আরও বেশি সম্পৃক্ত হতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, এবার আমি নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা করবো। এটা আমি নিজে থেকে চাই না। এলাকার মানুষেরা আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করছে, উৎসাহ দিচ্ছে।

চেয়ারম্যান ঋতু এখন হিজড়াদের অনুপ্রেরণা

২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন নজরুল ইসলাম ঋতু। তিনিও একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। ভোটের হিসাবে দেখা যায় তিনি ব্যাপক ব্যবধানে বিজয়ী লাভ করেছিলেন। নজরুল ইসলাম ঋতু ভোট পান ৯ হাজার ৫৫৭টি ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের নজরুল ইসলাম সানা পান ৪ হাজার ৫২৯ ভোট। ২০২৩ সালে শুরু হওয়া নতুন জাতীয় পাঠ্যক্রমের মাদরাসা ও সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের সম্প্রদায় অধ্যায়ের ৫২ পৃষ্ঠায় তার একটি ছবির সাথে জীবনী ছাপা হয়।

৪৫ বছর বয়সী নজরুল ইসলাম ঋতু কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের আবদুল কাদেরে সন্তান। তার মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। তিনি ছাড়াও, তার তিন ভাই ও তিন বোন রয়েছেন। সামান্য লেখাপড়াও করেছিলেন, তবে তিনি হিজড়া এটা এলাকায় জানাজানির পর ১০ বছর বয়সে বাধ্য হয়ে ঢাকায় চলে যান। ঢাকার ডেমরা এলাকায় হিজড়া দলে সাথে বসবাস শুরু করেন।

ঋতু বলেন, ঢাকাতে থাকলেও প্রতি মাসে অন্তত একবার করে বাব-মায়ের সাথে দেখা করতে বাড়িতে আসতাম। আমার বাবা মা আমাকে কখনোই দূরে রাখতে চাইতেন না। তাই বার বার গ্রামে আসা লাগতো। যখন বাড়িতে আসতাম, এলাকার মানুষের দূরবস্থা দেখে আমার মন কাঁদত। তাই কাছে যা টাকা থাকতো, তাই দিয়ে তাদের সহায়তা করতাম।

তিনি বলেন, আমার কষ্টে অর্জিত টাকা আমি প্রতিনিয়ত ইউনিয়বাসীর জন্য খরচ করতে থাকি। মসজিদ মন্দিরের উন্নয়নেও অবদান রাখি। যারা কন্যাদের বিয়ে দিতে পারেন না, তাদের বিয়ের খরচ বহন করি, কেউ অসুস্থ হলে ওষুধ কিনে দিই, সাথে আর্থিক সহায়তা করি। আবার কেউ আমার কাছে এসে খালি হাতে ফিরে গেছেন, এমন কাউকে পাবেন না।

তবে বৈশ্বিক মহামারী করোনার সময়ে ঋতু কাছ থেকে ব্যাপক সহায়তা পান ওই ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এরই মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন চলে আসলে, স্থানীয়রা তাকে জোর করে প্রার্থী হতে বলেন। আর ওই নির্বাচনে তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর থেকে দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।

তবে নির্বাচিত হয়ে তিনি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন, তা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তিনি বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর পরই এখানে একটি হাসপাতাল বানাতে চেয়েছিলাম। তবে এখনো সেই পরিমাণ অর্থের যোগান পাইনি। তাই কিছুই করতে পারিনি। এই নিয়ে প্রতিনিয়ত চিন্তিত রয়েছি, চেয়ারম্যান থাকা কালে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারবো তো? আর আমি এলাকার মানুষকে কি ভাবে ভালো রাখা যায়, উন্নয়ন করা যায়, এই নিয়েই সব সময়ে ভাবি। আমার ভাতার সব টাকাই মানুষের মাঝে বিলায়ে দিই।

পপি কখনো ভাবেননি তিনি জনপ্রতিনিধি হবেন

২০২২ সালের জানুয়ারিতে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার ফুলহরি ইউনিয়নে সংরক্ষিত ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বর (ইউপি সদস্য) নির্বাচিত হন তৃতীয় লিঙ্গের ( হিজড়া ) শম্পা খাতুন পপি। নির্বাচনে শম্পা হেলিকপ্টার প্রতীকে ২১০১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবিহা খাতুন পান ৫১৪ ভোট।

শম্পার বাড়ি মাগুরা জেলার আড়পাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম রুহুল আমিন খন্দকার ও মায়ের নাম ছকিনা বেগম। তিনিসহ তার আরও ২ ভাই এবং ২ বোন রয়েছেন। এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়ার পরে তাকে বিয়ে দেওয়া হয় শৈলকূপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামে। তবে স্বামীর নির্যাতনে সেই সংসার আর টেকেনি। একপর্যায়ে যোগ দেন তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের দলে। এরপর আবারও নিজের মত করে বসবাস শুরু করেন ফুলহরি গ্রামে।

ফুলহরি গ্রামের মানুষের পাশে সব সময়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতেন পপি। তবে তিনি নিজে কখনো কল্পনাও করেননি একদিন জনপ্রতিনিধি হবেন।

পপি বলেন, এলাকার মানুষের সহায়তা করতাম মানবতা থেকে। তবে আমি প্রচার বিলাসী ছিলাম না। ভোটের আগে এলাকার মানুষরা আমাকে নির্বাচনের দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করতে থাকেন। কারণ আমি যে এলাকায় বসবাস করি এখানে সামাজিক কোন্দল অনেক বেশি। এখানে জনপ্রতিনিধিরা একপাক্ষিক আচরণ করেন। তাই এখানের মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছিলেন। তারা বুঝতে পেরেছিলেন আমি নির্বাচিত হলে তাদের উপকারে আসবে।

তবে নির্বাচনের সময়ে তার নানা রকমের বাজে আচরণের শিকার হতে হয়েছে জানিয়ে বলেন, কিছু মানুষ আজেবাজে মন্তব্য করেছিল। তবে আমি ভোটারদের ভালোবাসতে পেরেছিলাম বলেই বিপুল ভোট পেয়েছি। দুই চারজনের বাজে মন্তব্যে আমার কোন ক্ষতি হয়নি। আর যারা বাজে মন্তব্য করেছিল, আমি তাদের সাথে কখনো খারাপ আচরণ করিনি। তাদেরও বাপ-ভাই বলে বুঝিয়েছি। অনেকেই বুঝেছেন।

নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার মানুষ যেন বৈষম্যের শিকার না সেই লক্ষে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি গ্রামের পর গ্রামে ঘুরে অসহায় ও অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আমার তো সংসার নেই। এই এলাকার মানুষই আমার ঘর-সংসার। যা ভাতা পাই বা অন্যান্য মাধ্যম থেকে রোজগার করি, সবই বিলাই দিই গ্রামের মানুষের কল্যাণে। বাল্য বিয়ে দিতে চাইলে ওই পরিবারকে বুঝিয়ে বন্ধ করায়। কোন নারী নির্যাতনের শিকার হলে তারও পাশে দাঁড়ায়। আমি এই এলাকার মানুষকে ভালোবাসতে পেরেছি বলে আমি সার্বজনীন ভালোবাসা পাচ্ছি।

জনসেবী থেকে জনপ্রতিনিধি বর্ষা

২০২৪ সালের মে মাসে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্ষা খাতুন হিজড়া বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে তিনি প্রজাপতি প্রতীক নিয়ে ৫৪ হাজার ২৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তারতী দত্ত হাঁস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৩ হাজার ৩৫২ ভোট। হিসাব অনুযায়ী, বর্ষা হিজড়া প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ৩০ হাজার ৯০৬ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, যা দ্বিগুনের থেকেও বেশি।

৩৪ বছর বয়সী বর্ষা খাতুন ঝিনাইদহ পৌরসভার চাকলাপাড়ার বাসিন্দা। তার বাবা আলিজান মিয়া ও মা আছিয়া খাতুন। তিনি ছাড়াও তার দুই ভাই ও দুই বোন রয়েছেন। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়ার তিনি বয়ঃসন্ধি কালে নিজেকে হিজড়া বুঝতে পেরে হিজড়া দলের সঙ্গে শহরের চাকলা পাড়ায় বসবাস শুরু করেন।

তবে গত ৫ বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক উন্নয়ন ও সেবা মূলক কাজের মাধ্যমে তারা পরিচিতির বিকাশ ঘটে।

তিনি বলেন, আমাদের এলাকার উন্নয়নে অনেক ক্ষেত্রেই জনগণ তাদের পাশে জনপ্রতিনিধিদের পেতেন না । তবে আমি যেভাবে জনগনের সাথে মিশেছি, তারা ভোটের মাধ্যমে আমাকে সেই প্রতিদান দিয়েছেন।

উঠে আশার সেই গল্প এখন তিনি পরিপূর্ণ বলতে চান না জানিয়ে বলেন, এই পরিচয় নিয়ে শিশু বয়সের মানসিক অবস্থা যে কি ছিল তা এখন আর বলতে চাই না। তবে এখন আনন্দিত যে মানুষের মাঝে জায়গা করে নিতে পেরেছি। ভালোবাসা পেয়েছি। এই ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম, গরিব ও মেহনতি মানুষের মাঝে উন্নয়নের কাজ করেছিলাম।

জীবনের বাকি সময়টুকুও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবেন জানিয়ে বলেন, আমার তো পরিবারের জন্য রেখে যাওয়ার কিছু নাই। যা পাবো, সবই মানুষের মাঝে বিলাই দিব। মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব। সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতে কাজ করবো। মানুষ আমাকে যে আশায় ভোট দিয়েছে, তাদের দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবো।

ভোটারদের মন জয় সমাজসেবায়

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের আশরাফুল আলম বলেন, আমরা একজন হিজড়াকে জনপ্রতিনিধি বানিয়েছি, তার ব্যবহারের জন্য। প্রায় দেখা যায় নেতাদের সাথে দেখা করা যায় না, কথা বলা যায় না। আমাদের কোন বিপদের সময়েও তাদের পাশে পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পিংকি খাতুন হিজড়া হাজার গুণে ভালো মানুষ।

ঝিনাইদহের ত্রিলোচনপুরের বাসিন্দা সৈয়দ আলতাপ আলী বলেন, আমাদের পূর্বের চেয়ারম্যান যেসব সামাজিক কাজ করতেন। তখন তার থেকেও বেশি কাজ করতেন তৃতীয় লিঙ্গে নজরুল ইসলাম ঋতু। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, তাকেই ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি বানাবো।

ঝিনাইদহ সদরের বাসিন্দা লিয়াকত মোল্লা বলেন, তার কাজকর্ম ও সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসা দেখেই আমরা ভোট দিয়েছি। কারণ তিনি কখনো কাউকে হেয় বা খাটো করে দেখেন না। যার দ্বারা উপকার হবে, আমরা তো তাকেই ভোট দিব।

এখনো বৈষম্য আছে, কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা তাদের

ক্রমাগত বৈষম্য মোকাবেলার একটি মর্মান্তিক প্রচেষ্টায় চালিয়ে যাচ্ছেন ঝিনাইদহ জেলার এই হিজড়া জনপ্রতিনিধিরা। তারা জানিয়েছেন, সমাজ থেকে এখনো বৈষম্য পুরোপুরি দূর হয়নি। তবে তারা সেই বৈষম্য দূর করতে নিয়মিত লড়াই করে যাচ্ছেন।

কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পিংকি খাতুন হিজড়া বলেন, এখনো অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অপমানের শিকার হতে হয়। নানা বাধা বিপত্তির মধ্যেও কাজ করতে হয়। তবে এই বিষয়ে আমি স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাই না। কারণ সামনে আবারও আমি নির্বাচনে প্রার্থিতা করবো।

তিনি বলেন, কিছু মানুষ বাজে মন্তব্য করবে। তবে বৃহৎ জনগোষ্ঠী এখনো সাম্যের দিকে এগিয়ে গেছেন। কাকে ভোট দিলে উপকৃত হবেন, তাই ভোটাররা বুঝেন। যেহেতু আমি মানুষের জন্য কাজ করছি, তাই আশা রাখি বেশিরভাগই আমাকে ভালোবাসবেন।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু হিজড়া বলেন, আমাদের জন্মেও আর আমাদের হাত ছিল। আমরা সবাই এক সৃষ্টার সৃষ্টি। তাই স্বাভাবিক মানুষের ভালোবাসা আমাদের জন্য আছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আসে। যখন প্রতিদ্বন্দ্বীরা ঘৃণা চড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন, তখনই হিজড়া প্রসঙ্গটা টেনে আনেন। তবে এই ধারা থেকে আমাদের এখানে উন্নতি হচ্ছে। এখন আমাদের জেলায় চারজন হিজড়া জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। আগামীতে আরও হিজড়ারা অন্যান্য ভালো পেশায় যুক্ত হবে বলে আশা করি।

ধীরে ধীরে তাদের বৈষম্য কেটে উঠবে বলে মনে করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) অধ্যাপক ড. তুহিন রায়।

তিনি বলেন, ‌আমাদের সমাজে দৃষ্টিভঙ্গি জনিত কারণে আগে আমরা তাদের সাথে খারাপ আচরণ করতাম। কিন্তু এটা সত্য যে আমাদের সমাজে তাদেরও অবদান আছে। আমাদের বুঝতে হবে, জন্মের জন্য কেউ কখনো দায়ী থাকে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সাংবিধানিক অধিকারে, তারাও আমাদের মত মানুষ। তবে আমাদের দেশে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় তাদের নিয়ে বেশ খারাপ ভাবে আলোড়ন করা হয়েছিল। তারপরেও এই তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিরা মানুষের মন জয় করে নির্বাচনে জয়ী হচ্ছেন, ভোটারও তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলিয়ে ভোট দিচ্ছেন। ঝিনাইদহে এ পর্যন্ত চার জন হিজড়া জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। এই ধারা থেকেই বোঝা যায় দেশ সমতার দিকে এগোচ্ছে, তাই ধীরে ধীরে তারাও একসময়ে মূলধারায় চলে আসবেন।

করেস্পন্ডেন্ট July 5, 2024
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article ভোমরা স্থলবন্দরের উন্নয়নে ১১শ’৭০ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে : প্রতিমন্ত্রী
Next Article একমাত্র ঈশ্বর আমাকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারে : বাইডেন

দিনপঞ্জি

October 2025
S M T W T F S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
« Sep    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
তাজা খবরসাতক্ষীরা

উপকূলীয় জলবায়ু পরিবর্তন বিদেশি তহবিলের অত্যন্ত প্রয়োজন

By করেস্পন্ডেন্ট 2 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

শ্যামনগরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ

By জন্মভূমি ডেস্ক 12 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

মুখোশে পরে ভিন্ন কায়দায় জীবন রক্ষায় সুন্দরবনের মধু আহরন

By জন্মভূমি ডেস্ক 13 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

তাজা খবরসাতক্ষীরা

উপকূলীয় জলবায়ু পরিবর্তন বিদেশি তহবিলের অত্যন্ত প্রয়োজন

By করেস্পন্ডেন্ট 2 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

শ্যামনগরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ

By জন্মভূমি ডেস্ক 12 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

মুখোশে পরে ভিন্ন কায়দায় জীবন রক্ষায় সুন্দরবনের মধু আহরন

By জন্মভূমি ডেস্ক 13 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?