গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : সাতক্ষীরার তালায় বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষে সফল কলেজ যশোর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক তৌহিদুজ্জামান। তিনি সাত বিঘা জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে ড্রাগনের চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। চলতি বছর আরো পাঁচ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে ড্রাগনের আবাদ সম্প্রসারণ করছেন। তৌহিদুজ্জামান গ্রীষ্মকালীন ফলটিকে শীতকালেও সমানভাবে ফলাতে এরই মধ্যে জমিতে চীন থেকে আমদানি করা বিশেষ বৈদ্যুতিক বাল্ব স্থাপন করেছেন। শীতে ড্রাগন আবাদে সফলতা পেলে তাঁকে দেখে অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হবে এমনটাই মনে করছেন কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের প্রয়াত শিক্ষক ওমর আলী ছেলে তৌহিদুজ্জামান বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোরের কলেজ পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রায় ৪ বছর আগে নিজ ইউনিয়নের ফলেয়া-চাঁদকাটি এলাকায় সাত বিঘা জমি ইজারা নিয়ে ড্রাগনের আবাদ করেন তিনি। প্রথম বছর সব মিলিয়ে তার খরচ হয় প্রায় ২৩ লাখ টাকা। ফল আসার দুই বছরেই লগ্নীকৃত সব টাকা উঠে মুনাফা হয়। বর্তমানে ড্রাগন চাষে তিনি পুরোপুরি সফল। তৌহিদুজ্জামান এবার প্রকল্প ড্রাগন চাষের জমির কাছে আরো পাঁচ বিঘা জমি আবাদ উপযোগী করেছেন। সেখানকার জন্য কাটিং প্রক্রিয়ার কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
তৌহিদুজ্জামানের ড্রাগনবাগানে গিয়ে দেখা যায়, সাত বিঘার ক্ষেতে প্রায় পাঁচ ফুট উচ্চতায় এক হাজার ৪০০ কংক্রিটের খুঁটি বসানো রয়েছে। খুঁটিগুলো পরস্পর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বসানো হয়েছে। প্রতিটি খুঁটি ঘিরে রয়েছে চারটি করে হৃষ্টপুষ্ট ড্রাগনগাছ। চারদিকে যেন সবুজের সমারোহ। গাছগুলোতে ফুল ফোটাতে বাঁশের আলাদা অন্তত ২০০ খুঁটি পুঁতে তার টানিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৮০০ বাল্ব স্থাপন করা হয়েছে।
ড্রাগনের বাণিজ্যিক আবাদের উদ্যোক্তা তৌহিদুজ্জামান জানান, ইউটিউব দেখে শখের বশে ২০২০ সালে নিজ এলাকায় তিনি প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। তার ক্ষেতের নাম ‘ড্রাগন ভ্যালি’। সাত বিঘা জমি বার্ষিক এক লাখ ৪০ হাজার টাকা ইজারা নিয়ে এ চাষ করেন। এতে সাফল্যের পর আরো পাঁচ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে ড্রাগনের আবাদ সম্প্রসারণ করছেন। আলো দেওয়ায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এসব বাল্ব আট লাখ টাকা ব্যয়ে সরাসরি চীন থেকে আমদানি করেছেন তিনি। বাল্বগুলো প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা ও ভোররাত ৪টা থেকে সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত জ্বালিয়ে রাখা হয়।
তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমার ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বাগানে। শীতকালীন ড্রাগনের আবাদে পুরোপুরি সফল হলে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো আয় হতে পারে।’
এ সময় শিক্ষিত বেকারদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, চাকুরি নামের সোনার হরিণের পিছনে না ছুটে তারা যদি নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে ড্রাগন ফল চাষ করে তাহলে নিজের বেকারত্ব দূর হবে পাশাপাশি মোটা অংকের টাকাও উপার্জন করা সম্ভব হবে। সরকার যদি ড্রাগন চাষের উপরে ঋণের ব্যবস্থা করে তাহলে বেকার যুবকরা ড্রাগন চাষে আগ্রহী হবে বরে মনে করেন তিনি।
উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা পলাশ কান্তি রায় বলেন, উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে প্রথম ড্রাগন চাষের উদ্যোক্তা অধ্যাপক তৌহিদুজ্জামান। মৌসুমে ড্রাগন চাষে সফলতার পর এবার শীত মৌসুমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন। দেশে এখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শীত মৌসুমে ড্রাগনের আবাদ হলেও তালায় এটি প্রথম। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সফল হবেন বলে তিনি আশা করছেন।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান, ড্রাগন একটি পুষ্টিকর ফল। এই ফলে রয়েছে অধিক পরিমাণে রোগপ্রতিরোধ উপাদান, যা মানবদেহের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এটি কার্যকর একটি ফল। তালার তৌহিদুজ্জামান তাঁর বাগানে ইলেকট্রিক বাল্ব ব্যবহার করছেন। এতে সারা বছর ড্রাগন চাষ করা যাবে। তিনি একাধিকবার উক্ত ড্রাগন বাগান পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান।
এদিকে সাতক্ষীরার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শীত মৌসুমে ড্রাগনগাছে ফুল-ফল আসে না। ড্রাগনগাছে ফুল আসতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ দিনের আলোর প্রয়োজন। গ্রীষ্মে দিন বড় থাকায় গাছটি পরিপূর্ণ আলো পায়। শীতকালে দিন ছোট হওয়ায় প্রয়োজনীয় আলো পায় না। সন্ধ্যার পর সূর্যের আলো না থাকায় অন্ধকারে সালোক-সংশ্লেষণ বন্ধ হয়ে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ফুল ফোটার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়।
সূত্রটি আরও জানায়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের একদল গবেষক চার বছর চেষ্টার পর দিনের আলোর বিকল্প হিসেবে বৈদ্যুতিক বাল্ব ব্যবহার করে শীতকালে ড্রাগন ফলাতে সক্ষম হয়েছেন। বিশেষ এই বাল্বের আলো সূর্যের আলোর মতো। তাই ড্রাগনগাছ থেকে আগাম ফুল-ফল পেতে সূর্যের আলোর বিকল্প হিসেবে বাগানে এই বিশেষ বাল্ব ব্যবহার করা হচ্ছে।
তালায় ড্রাগন চাষে সফল তৌহিদুজ্জামান
Leave a comment