গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : ২০১৭ সালে যোগদান করে মাত্র ৩৪ দিন বিদ্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুন। এরপর কেটে গেছে পাঁচ বছর। এ দীর্ঘ সময়ে তিনি আর একদিনও বিদ্যালয়ের যাননি। তবে বিদ্যালয়ে না গেলেও নিয়মিত তুলেছেন বেতন ভাতা। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কমেছে শিক্ষার্থী। এর প্রতিবাদে স্বোচ্চার হওয়ায় স্থানীয় এক ইউপি সদস্যকে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন হুমকি। এ অভিযোগ সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ২২নং সেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে। তিনি তালা উপজেলার দাদপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদ সানার কন্যা। বর্তমানে বসবাস করেন খুলনা শহরে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নাজমা খাতুন ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর সেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর মাত্র ৩৪ দিন বিদ্যালয়ে হাজির হয়ে অফিসের কার্যক্রম সম্পাদন করেন। এরপর তিনি পিটিআই প্রশিক্ষণের জন্য দেড় বছরের ছুটির আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর তিনি ডেপুটেশনে খুলনা পিটিআইতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। কিন্তু পিটিআইয়ের নিয়ম অনুযায়ী এক বছর প্রশিক্ষণ নিয়ে ৬ মাস বিদ্যালয়ে সংযুক্ত থাকার কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুন খুলনাতেই সেটি সম্পন্ন করেন। পিটিআই’র ছুটি শেষ হলেও তিনি বিদ্যালয়ে যোগদান করেননি। গত ২০১৯ সালের ২ জুলাই ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন করে তা অনুমোদন করিয়ে নেন। মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি ২ মাসের মেডিকেল ছুটির জন্য আবেদন করেন। নাজমা খাতুন একের পর এক মেডিকেল সনদ দিয়ে ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে ৫ বছর কাটিয়েছেন ছুটি। এখনো ছুটিতেই থাকতে চান তিনি। এমনটিই দাবি করেছেন বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্যসহ স্থানীয়রা।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুন বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে যোগদানের পর পিটিআই’র প্রশিক্ষণে ছিলাম। পরে মাতৃত্বকালিন ছুটি নিয়েছিলাম। এরপর করোনার কারণে বিদ্যালয়ে যাওয়া লাগেনি।’ করোনা পরবর্তী সময়েও কেন বিদ্যালয়ে যান না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বর্তমানে বিনা বেতনের ছুটি ভোগ করছি। একজন শিক্ষক তার চাকুরী জীবনে ৫ বছর ছুটি ভোগ করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোন শিক্ষক ৫ বছর ছুটি ভোগ করতে পারবেন কি না বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের কোন নিয়ম নেই। সর্বোচ্চ দুই বছর,সেটিও ৬ মাস পর পর নতুন করে ছুটির অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে।
সাতক্ষীরা জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, এ ঘটনায় আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস খুলনার উপ-পরিচালক বরাবর লিখিতপত্র পাঠিয়েছি। সে অনুযায়ী উপ-পরিচালকের দপ্তর হতে ওই শিক্ষক নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তিনি।