
গাজী জাহিদুর রহমান,তালা : সাতক্ষীরার তালায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ফসলি জমিতে একের পর এক ইটভাটা গড়ে ওঠায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে ফসলহানির আশঙ্কা করছেন তারা। এদিকে অধিকাংশ ভাটায় কয়লার পরিবর্তে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত কাঠ ও টায়ার। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে জনসাধারণ। এসব রোধে প্রশাসনিক তৎপরতার উপর গুরুত্ব দিয়েছে সচেতন এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তালা উপজেলায় রয়েছে ১৩টি ইটভাটা। আর জেলা জুড়ে রয়েছে ১শ’৪০টির মতো। এরমধ্যে বেতনা ও কপোতাক্ষ নদের দু’ধারে ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে অর্ধ-শতাধিক ইটভাটা। বসতি ও আবাদি জমির আশপাশে ইটভাটা করা নিষিদ্ধ হলেও আবাদি জমিতে গড়ে ওঠা অধিকাংশ ভাটার লাইসেন্স রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তালা উপজেলার বলরামপুর গ্রামে মেসার্স সানি ব্রিকস নামের ইটভাটাটির চারপাশে কৃষি জমি। স্থানীয় কৃষকদের আপত্তি উপেক্ষা করে ভাটাটি নির্মাণ করা হয়।
ইটভাটা সংলগ্ন জালাল, শাহিন, বিধান, শামছুর রহমানসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তারা ভাটা নির্মাণে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রভাবশালীরা পরিবেশ অধিদপ্তরকে ‘ম্যানেজ’ করে ভাটা নির্মাণ করেন।
তারা আরো বলেন, ভাটার চুল্লি জ্বালানো হলে আশপাশের মাটি গরম হয়ে যায়। চিমনি দিয়ে ধোঁয়ার সঙ্গে ছাই বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ফসলের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
একই রকম পরিবেশ দেখা যায় তালার যুগিপুকুরিয়া গ্রামের ফারাহ ব্রিকস, সেনপুরের এসএনবি ব্রিকস, গৌরীপুরের মেসার্স এবিবি ব্রিকস, খেশরা এলাকার এসবি ও এসবিএম ব্রিকসসহ কয়েকটি ইটভাটার।
কৃষকদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মেসার্স সানি ব্রিকসের দায়িত্বরত ম্যানেজার বলেন, ‘লাইসেন্স যখন দেয়া হয়েছে তাহলে ভাটার মালিকের দোষ কোথায়! আপনারা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরে বলেন। তারা ভাটা বন্ধ করে দিলে আর ইট পোড়াব না।’
বাবু নামের এক ভাটা মালিক বলেন, ‘আবাদি জমিতে ইটভাটা অনেকেই করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং প্রশাসন আমাদের অনুমোদন দিয়েছে বলেই আমরা ইট পোড়াচ্ছি।’
তালা উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর দাশ বলেন, ইটভাটার কারণে দীর্ঘমেয়াদে জমির উর্বরতাশক্তি কমে যেতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষক আন্দোলন কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ আশেক ইলাহী বলেন, ইটভাটাগুলো থেকে কয়লা পোড়ানো ধোঁয়ার সঙ্গে ছাই চারদিকে ছড়িয়ে ফসলের পাশাপাশি গাছপালা ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। জেলার আবাদি জমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলো অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সাকিবুর রহমান জানান, কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের কোন আইন নেই। কিভাবে এসব জমিতে ইটভাটার অনুমতি দেয়া হয় তাদের বোধগম্য নয়। তবে নদীর পাড় কিংবা জনবসতি ও কৃষি জমি থেকে দূরে ইটভাটাগুলো স্থাপন হলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হতো না।
এদিকে ফসলের ক্ষতি করছে এমন ইটাভাটা সরিয়ে নিতে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তালা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার আরাফাত হোসেন।
তিনি বলেন, প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। ফলে ক্রমান্বয়ে কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। কৃষিজমি উদ্ধারে অচিরেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। পাশাপাশি নিয়মবহির্ভূত ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধেও জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।
সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম জানান, লোকবল সংকটের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। তবুও আমাদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি কয়েকজন ভাটা মালিককে নোটিশও করা হয়েছে।