গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : বেতগ্রাম-তালা-পাইকগাছা-কয়রা সড়ক প্রশস্তকরণে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) নির্বাহী কমিটি ৩৩৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকার অনুমোদন দিয়েছে। এই প্রধান সড়কের অন্তত দু’বার মেয়াদ ও বরাদ্দ বৃদ্ধি হলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে কাজ সমাপ্ত হতে বিলম্ব হচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে জনদুর্ভোগ!
তথ্য সূত্রে, ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি কাজটি শুরু হলেও শামুক গতিতে নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় মেয়াদের সাথে ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়। সে অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৬০-৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হলেও ইতোমধ্যে ঠিকাদারকে বরাদ্দের ৯০ শতাংশ অর্থ ছাড় করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। আর কাজের সাথে অসংগতিপূর্ণ অর্থ ছাড়ের বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখছেন না শান্তি প্রিয় জনপদের সাধারণ মানুষ। তাদের ধারণা, আগাম অর্থ ছাড়ে কাজের যথাযথ মান ও গতি নিয়ে তাড়া বা জবাবদিহিতা প্রশ্নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি খবরদারি থাকবেনা কর্তৃপক্ষের।
জনপদের সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ৬৪ দশমিক ৬৬ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যের প্রকল্পটিতে এখন পর্যন্ত ৩০টি স্থানে ন্যূনতম এক চতুর্থাংশ কাজ বাকি রয়েছে। এছাড়া নির্মাণাধীন সড়কের দু’পাশের গাইডওয়াল ও প্যালাসাইডিংয়ের মাঝে মাটি ভরাট কাজ বাকি রয়েছে। এ অবস্থায় মূল প্রকল্পের ৪০ শতাংশ কাজ এখনও বাকি রয়েছে বলে দাবি তাদের।
তথ্যানুসন্ধানে সওজ সূত্র জানায়, দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ ৩৩৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা চুক্তি মূল্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যাদেশ পায়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্প কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শামুক গতিসহ নানা জটিলতায় নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। পরে তাদের আবেদনের পরি প্রেক্ষিতে দুই দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়। একই সাথে চলমান প্রকল্পের মধ্য থেকে তিন কিঃমিঃ অংশ আলাদা করে প্যাকেজ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। সেখানে ব্যয় ধরা হয়েছে আরোও ৫৫ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা বলছেন, কাজের পরিধি এবং নির্মাণসামগ্রীর দামের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যায়বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী ও প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আজিম কাওছার জানান, বাঁক সরলীকরণ এলাকায় জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্পের ৩০টি স্থানের সরলীকরণের কাজ বাকি রয়েছে। তার দাবি, সেখানে প্রায় ৫ কিঃ মিঃ সড়ক খুঁড়ে রাখা হয়েছে। দ্রুত সড়কের সেসব এলাকার কাজ সম্পন্ন করতেও সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বেতগ্রাম থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণে ও কয়রা সদর থেকে মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত তিন কিঃমিঃ সড়ক উন্নয়ন দু’টি প্যাকেজ প্রকল্পে আরো ৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া প্রকল্পের কয়রা উপজেলা অংশে ৬টি বাঁকে প্রায় তিন কিঃমিঃ এবং কয়রা সদর থেকে দেয়াড়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিঃমিঃ রাস্তার সম্পূর্ণ কাজ ফেলে রাখা হয়েছে। চলতি বর্ষায় রাস্তার এসব অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজের পক্ষে হুমায়ুন কবির খোকন বলেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের মোট কাজের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ শেষ করেছি। এখন টুকিটাকি কাজ বাকি রয়েছে, যা বর্ষার কারণে বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। পরে করে দেবেন বলেও জানান তিনি।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, প্রকল্পের ৩০টি বাঁকে কিছু অংশে কাজ বাকি রয়েছে। জমি অধিগ্রহণের সমস্যা কাটলে সেটুকুও করা হবে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশিরভাগ কাজ শেষ করে ফেলেছে। তাদের সে অনুযায়ী বরাদ্দ ছাড় করা হচ্ছে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত