গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : কৃষকের উৎপাদিত সবজির ভালো দাম পেলেও চলতি ও বিগত মাসের কয়েক সপ্তাহ শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় অনেকটাই দাম কমে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে তালা উপজেলা ক্রেতাদের মাঝে। তবে হঠাৎ করে শীতকালীন সবজির দাম তলানিতে আসায় অস্বস্তিতে রয়েছেন কৃষক।
তালা বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমের শুরুতে শীতকালীন কাঁচা শাক ও সবজির দাম উর্দ্ধমুখী থাকলে সম্প্রতি দাম তলানিতে এসেছে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য পরিবহন খরচই উঠছে না তাদের। ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বস্তি মিললেও দিশাহারা কৃষক। সার তেল কীটনাশক বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পরে ফসল উৎপাদনে খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে অধিকাংশ কাঁচা শাক ও সবজির দাম কমলেও আলু, ও রসুনের দাম এখনও ক্রেতার নাগালে এখনও আসেনি।
সরেজমিনে তথ্য বলছে, কয়েকদিন আগেও তালা সবজির বাজারে বেগুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১২০টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪০টাকা কেজি দরে। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে ৭০টাকা, এখন ১৫ থেকে ২৫টাকা। শসা বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৬০টাকা এখন ২৫ থেকে ৩০টাকা। করলা বিক্রি হতো ১২০ থেকে ১৪০টাকা। লালশাক এক আটি ৩০ থেকে ৩৫টাকা এখন ৭ থেকে ১০ টাকা। ধনে পাতা এক আঁটি ১২ থেকে ১৫ টাকা। পেঁয়াজ আগে ছিলো ১৬০ থেকে ১৮০টাকা কেজি, এখন প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০টাকা। পেঁয়াজের দাম কয়েকদিনের ব্যবধানে নেমে এসেছে ১০০টাকা কেজি দর। শিম বিক্রয় হয়েছে ১০০-১২০টাকা কেজি এখন ১০-২০টাকা কেজি। কাঁচা মরিচ ৪০০ থেকে ৫০০টাকা বিক্রি হয়েছিল, যা এখন ৫৫ থেকে ৬০টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাঁধাকপি প্রতি পিস আকার ভিত্তিক ১০ থেকে ১৫টাকা। টমোটো প্রতি কেজি ৪০টাকা। ফুলকপি প্রতি পিস আকার ভিত্তিক ৭ থেকে ১০টাকা। নতুন আলু প্রতি কেজি ৪০টাকা তবে পুরাতন আলু ৮০-১০০ টাকা কেজি। রসুন প্রতি কেজি ২৪০-২৬০টাকা। পোঁটলা কেজি প্রতি ৩০টাকা। পেঁয়াজের কালি ১০টাকা আটি। ওলকপি ১০টাকা কেজি। গাজর ৪০টাকা কেজি। পালংশাক ৫টাকা আটি। মানকচু ৬০টাকা কেজি। এমন বাজার পরিস্থিতিতে ক্রেতারা সন্তুষ্ট হলেও কৃষকরা অসন্তোষ।
তালা বাজারে ক্রেতা নাজমুল হোসেন, রিপন শেখ, খায়রুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, রীতিমতো সবজি খাওয়া ভুলেই গিয়েছিলাম অনেক বেশি দামের কারণে। এ রকম দাম পেলে আমাদের সবজির ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারব।
এদিকে তালা পাইকারি সবজি বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক বিপ্লব হোসেন, গোলাম মোস্তফা, মোঃ আমান উল্লাহ সবজির দাম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, শীতকালীন শাক সবজির দাম প্রথমে উর্দ্ধমূখী ছিল কিন্তু এখন যেভাবে নিন্মমূখী হয়েছে তাতে করে তো কৃষকের বাঁচা হয় না। দামের মধ্যে সামঞ্জস্য হওয়া উচিত ছিল!
ভ্যানচালক আজহারুল ইসলাম জানান, সারা দিনে যা উপার্জন করি, তা চাল-ডাল কিনতেই শেষ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় সবজির দাম কম হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি বোধ করছি।
কয়েকজন কৃষক জানান, বর্তমানে যেভাবে সবজির দাম কমে গেছে তাতে আমাদের পরিবহন খরচ নিজের পকেট থেকেই দিতে হবে। সরকার একটা ব্যবস্থা না নিলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব। এবছর অতি বৃষ্টিতে তালার জনপদের সকল মানুষের ঘরবাড়ি সহ ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে কৃষকরা নতুন করে তেল সার কীটনাশক বীজের আকাশ ছোয়া দাম থাকলেও মাঠের পর মাঠ সবজি চাষ করেন। নানাবিধ পরিস্থিতিতে সবজি উৎপাদনে খরচ অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি হয়েছে। এমতাবস্থায় বাজার পরিস্থিতি এমন থাকলে পথে বসতে হবে কৃষকদের। শুধু কৃষকরাই ধাক্কা খায়নি। সেই সঙ্গে খুচরা বিক্রেতারাও ধাক্কা খেয়েছে অনেক বড়।
তালা উপজেলা কৃষি অফিসার হাজিরা খাতুন বলেন, কিছুদিন আগেও সবজির দাম চড়া ছিল। তবে বর্তমানে সে একেবারে কমে গেছে। এতে ক্রেতারা খুশি হলেও কৃষকরা কিছুটা বিপাকে পড়েছে।