
গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : তালা উপজেলা সদর হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক জনপদ। কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত এই জনপদ পর্যায়ক্রমে থানা ও উপজেলায় উন্নীত হয়েছে। একটা সময়ে তালা সদর ছিল জাঁকজমকপূর্ণ উপ-শহর। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই অবস্থা আজ আর নেই। সন্ধ্যা পার হলেই উপ-শহরে নেমে আসছে অন্ধকারাচ্ছন্নতা! মাঝে মাঝে দিনের বেলার চিত্রটাও প্রায় একই রকম হয়। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে এ উপ-শহরে সুনসান নিরবতা বিরাজ করে। দোকনগুলোতে একদিকে ক্রেতার অভাব অপরদিকে ব্যাংক ঋণের পর্যাপ্ততা না থানায় বড় ব্যবসায়ী বা শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তালা সদরের তিন পাশ ঘেঁষে জাতপুর, পাটকেলঘাটা ও কপিলমুনি বাজার বছরের পর বছর সমৃদ্ধ ও উন্নতি হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তালার ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের উপর। এরসাথে একসময়ের তালা থানার অধিন পাটকেলঘাটা প্রশাসনিক থানায় রুপান্তরসহ সম্প্রতি বছরগুলোতে গ্রামে গ্রামে হাট-বাজার গড়ে ওঠায় দিনে দিনে তালা বাজারে ব্যবসায়ীরা সংকটের সম্মুখিন হচ্ছে। সংকট নিরসনসহ তালার পরিকল্পিত উন্নয়নে এখানকার সংশ্লিষ্ট নেতাদের তেমন ভূমিকা রাখতে দেখা যাচ্ছেনা। যে কারণে আশপাশের উপজেলা সদরগুলোর তুলনায় তালার মানুষ কাংখিত উন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলা নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম বলেন, তালা উপজেলা সদর হতে মৎস্য অফিস রয়েছে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বারুইহাটি গ্রামে। গুরুত্বপূর্ণ রেজিষ্ট্রি অফিস প্রায় ৬/৭ কিলোমিটার দূরে ইসলামকাটি গ্রামে। উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস ও খাদ্য গুদাম রয়েছে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে পাটকেলঘাটা বাজারে। এতে করে এক শহর থেকে জনগণ সরকারের সকল সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন এলাকায় যেতে গিয়ে সময়, শ্রম এবং আর্থিকসহ নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখানকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা মূলত উপজেলা প্রশাসন, থানা প্রশাসন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ২/৩টি ব্যাংক এবং কয়েকটি এনজিও’র উপর ভিত্তি করে কোনভাবে টিকে আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবা নিতে আসা মানুষদের কারণে উপ-শহরে মানুষের আনাগোনা সাময়িক সময়ে দেখা যায়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আলাউদ্দীন জোয়ার্দ্দার বলেন, স্থানীয় অধিবাসীসহ দুর-দুরান্ত থেকে তালা উপশহরে আসা মানুষদের সবসময় কোনও না কোন ভোগান্তির মধ্যে থাকতে হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং উপজেলা পরিষদের ভবনগুলো দূরাবস্থার মধ্যে রয়েছে। সেই সাথে এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও যাতায়াতের রাস্তাগুলো ঝুঁকি তৈরি করছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দপ্তর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় মানুষদের যেমন নানাবিধ ক্ষতির সন্মুখিন হতে হচ্ছে, তেমনি অফিসগুলোর দাপ্তরিক কাজে ধীরগতি তৈরি হচ্ছে। যা মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টিসহ তালা উপশহরের উন্নয়নে অন্তরায় হয়ে উঠেছে। এ সময় তিনি সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো উপজেলা পরিষদের মধ্যে বা সংলগ্নে স্থাপনসহ উপ-শহরের পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।