
গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : সংস্কার ও তদারকির অভাবে সৌন্দর্য ও অবকাঠামো হারাতে বসেছে মুঘল আমলের মুসলিম স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ। কালের বিবর্তনে ধীরে-ধীরে তেঁতুলিয়া ‘মিয়ার মসজিদ’ নামে পরিচিতি লাভ করা মসজিদটি ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। মসজিদটি যদি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ না করা হয়, তা হলে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সাক্ষী তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদটি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন তারা।
‘মোগল মুমেন্টস অব বাংলাদেশ’ নামক গ্রন্থ দ্বারা প্রকাশিত হয় মৌলভী কাজী সালামতউল্লাহ খান বাহাদুর তেঁতুলিয়ার একজন জমিদার ছিলেন। তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলের ডেপুটি কালেকটর এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। জমিদার কাজী সালামতউল্লাহ আঠারো শতকের দিকে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
তথ্যমতে, মসজিদটির সঙ্গে ১৮৪০-৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার শাহজানী বেগম মসজিদ এবং ১৮৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। মসজিদটির নকশা ও কারুকাজের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের বিহারের এক বাসিন্দা। তবে নির্দিষ্ট সাল নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ১৮১৮, ১৮২৫ কিংবা ১৮৫৮-৫৯ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয় বলে বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। মসজিদের খুব কাছে ‘সালাম মঞ্জিল’টিও সমসাময়িক কালে কাজী সাহেব প্রতিষ্ঠা করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদটি খুলনা-পাইকগাছা সড়কের কোল ঘেঁষে তালা উপজেলা সদরের দুই-তিন কিলোমিটার উত্তরে আঠারো মাইল অভিমুখে আঞ্চলিক সড়কের পাশে এক একর জায়গাজুড়ে অবস্থান করছে। মসজিদের সঙ্গেই প্রায় দুই একর আয়তনের একটি বিশাল পুকুর রয়েছে। মসজিদটিতে রয়েছে ৭টি দরজা। প্রতিটি দরজার উচ্চতা ৯ ফুট এবং প্রস্থ ৪ ফুট। ১০ বর্গফুট বেড়বিশিষ্ট ১২টি পিলারের ওপর মসজিদের ছাদ নির্মিত। চুুনসুরকি ও চিটাগুড়ের গাঁথুনিতে নির্মিত মসজিদটিতে ১৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ৬টি বড় গম্বুজ এবং ৮ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ১৪টি মিনার রয়েছে। এছাড়া ২৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট চার কোণে ৪টি মিনার রয়েছে। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতর তাদের আয়ত্তে নিয়ে এরশাদ সরকারের সময় সর্ব সংস্কারের আলোর মুখ দেখে এই মসজিদটি। তার পর থেকে অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে মসজিদটি।
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা জানান, আমরা সম্প্রতি মসজিদটি পরিদর্শন করেছি। ইতোপূর্বে মসজিদের সংস্কার সংরক্ষণ করা হয়েছে। মসজিদটির নিয়মিত পরিষ্কার পরিছন্নতা ও দৈনন্দিন পরিচর্যার জন্য একজন দৈনিক শ্রমিককে নিয়োজিত রাখা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে এর প্রয়োজনীয় সংস্কার সংরক্ষণ কাজের পরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু সরজমিনে সে শ্রমিকের দেখা মেলেনি।