গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : গত ৮ মে ছিল সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের হরিণখোলা-গোয়ালপোতা গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের ৮ মে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে হরিণখোলা-গোয়ালপোতা গ্রামে পাকবাহিনীর সদস্যরা দোসরদের সাথে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায়। শর্টগানের গুলিতে মেরে ফেলা হয় শরণার্থীসহ গ্রামের নিরীহ মানুষকে। এসময় গ্রামটির অধিকাংশ ঘরবাড়ি, ধানের গোলায় অগ্নিসংযোগসহ পোষাপ্রাণী পুড়িয়ে মেরে ফেলে পাকসেনারা। এই দিন নির্বিচারে নিরীহ মানুষের উপর গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এই হত্যাযজ্ঞ চালানো জন্য সহযোগিতা করেছিল পাক-বাহিনীর সহযোগী কিছু বাঙালি দোসর। পরবর্তীতে পাকিস্তানিদের গুলিতে প্রাণ হারানো হরিণখোলা গ্রামের সোনা ঢালী, বালক ঢালী, পাচু মন্ডল, নিতাই মন্ডল গোয়ালপোতার, হরচাদ, সুখচাদসহ ৪৯জনকে সনাক্ত করে তাদের স্বজনেরা। তবে বিভিন্ন সময়ে আশপাশের খাল ও ডোবা থেকে একাধিক মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেলেও তা সনাক্ত করা যায়নি বলে জানান নগরঘাটা ইউনিয়নের সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র সরকার।
তিনি জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘ বছর পরে হলেও নির্মমভাবে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের স্মরণে স্বৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। যেটি নির্মাণে সরকারের পাশাপাশি সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সদস্য সচিব লায়লা পারভীন সেঁজুতির অনেক অবদান ছিল। তিনি তালার নগরঘাটা তথা সাতক্ষীরা জেলার কৃতি সন্তান, আধুনিক সাতক্ষীরা গড়ার স্বপ্নদ্রষ্ঠা, দৈনিক পত্রদূতের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শহিদ স. ম. আলাউদ্দীনের কন্যা। সেঁজুতির বাবা ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অন্যতম। যিনি শুরুতেই ৪১জন ট্রেনিংপ্রাপ্ত যোদ্ধাদের নিয়ে দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে যোদ্ধাদের সহযোগিতাসহ সাহস যুগিয়েছেন। যুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। ৬ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর শহিদ স. ম আলাউদ্দিন গ্রুপ, মুজিব বাহিনী গ্রুপসহ তালায় যত মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রুপ ছিল সবাই মিলে তিন দিনে কপিলমুনি এলাকা রাজাকার ক্যাম্প থেকে ১১০জনকে আটক করেছিলাম। পরবর্তীতে গণ আদালতে বিচার করে তাদের গুলি করে মেরে ফেলা হয়।
তিনি আরও বলেন, এখানে নির্মিত শহিদ স্মৃতিস্তম্ভের সাথে একটি লাইব্রেরি করা গেলে বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম যুদ্ধ তথা স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। বাংলাদেশের যুদ্ধের ইতিহাস সকলের মনে জায়গা করাতে লাইব্রেরি খুবই দরকার। অবসর সময়ে তারা যেন এখান থেকে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। বদ্ধভূমিতে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি ও ভিতরের অন্যান্য ব্যবহারের সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নাজুক অবস্থায় আছে। সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকার সচেতন মহল।
তালার হরিণখোলা-গোয়ালপোতা গণহত্যা

Leave a comment