গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : সাতক্ষীরার তালা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষক মুস্তাফিজুর রহমানের ঘুষ বাণিজ্য, দুর্নীতি এবং সিমাহীন অনিয়মসহ খামখেয়ালীপনা আচরনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ঠিকাদাররা। এঘটনায় প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, হিসাবরক্ষক মোস্তাফিজুরের চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ দিতে না পারলে কাজের বিল উত্তলোন করতে পারেন না ঠিকাদাররা। একারনে অধিকাংশ ঠিকাদার অর্থ সংকটে পড়ায় চলমান উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি থমকে গেছে। যার ফলে একদিকে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে ধীরগতি অন্যদিকে কাজ পড়ে থাকায় নির্মানাধিন কাজের গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, তালা এলজিইডি অফিসের হিসাবরক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান কারণে-অকারণে ঠিকাদরদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। ঘুষ না দিলে তার টেবিলের ফাইল নড়ে না। কাজের কার্যাদেশ দেয়া, সময় বৃদ্ধি ও কাজের বিল নেয়ার সময় তার ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ না দিলে নিজে ও অধিনস্তদের মাধ্যমে ফাইল আটকে রাখা তার নিত্যদিনের ঘটনা। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় ঘুষ পাওয়া তার অধিকার। আবার বিভিন্ন কাজের প্রলোভোন দেখিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এই ধুরন্ধর প্রতারক মোস্তাফিজ। কখনো ঠিকাদারি লাইসেন্স করে দেয়া, কখনো রাস্তা সোলিং করণ প্রকল্প পাইয়ে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন লোকের কাছে থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এসকল লোক চুক্তি অনুযায়ী কাজ না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার, হুমকি ধামকি দেয়া তার নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।
ভুক্তভোগী ঠিকাদার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, শেফারুল ইসলাম, শিমুল মুন্সি ও রাজিব হোসেন জানান, তালা উপজেলা এলজিইডির হিসাবরক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান প্রায় ৩ বছর পূর্বে এই দপ্তরে সহকারি হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে ঠিকাদারদের হয়রানী করাসহ দুর্নীতি ও অনিয়মের সিমাহীন অভিযোগ ওঠে। সে সময় পত্রপত্রিকায় ব্যপকভাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত পূর্বক তাকে ষ্ট্যান্ড রিলিজ করেন। এঘটনার ৩ বছর পরে হিসাব রক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বিভিন্ন মহলে তদ্বির করে আবারও চলতি বছরে তালায় বদলি হয়ে আসেন। তালায় যোগদান করেই তিনি আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ঠিকাদারদের হয়রানী এবং ঘুষ বাণিজ্যসহ দুর্নীতির কারণে আবারও বেকায়দায় পড়েছে তালার ঠিকাদাররা। যে কারণে বাধ্য হয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন একাধিক ঠিকাদার।
তারা বলেন, এবিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীকে জানালেও তিনি তাঁর বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ফলে দিনে দিনে বেড়েই চলেছে হিসাব রক্ষকের ঘুষ বানিজ্য। এর আগে তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এদিকে তালা উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের হিসাব রক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাকে হয়রানী করার জন্য ঠিকাদারদের একটি মহল ষড়যন্ত্র করছেন। আমি বদলির আবেদন করেছি, যে কোনো সময় অন্যত্র চলে যেতে পারি। তালায় ভালোভাবে কাজের পরিবেশ নেই।
তালা উপজেলা প্রকৌশল রথীন্দ্র নাথ হালদার জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর থেকে তদন্তের জন্য কয়েকজন ঠিকাদারের স্বাক্ষরিত একাধিক অভিযোগপত্র পেয়েছি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোঃ রাসেল অভিযোগপত্র প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ তদন্তের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে চাকুরী বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তালা এলজিইডি’র হিসাবরক্ষক মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ!
Leave a comment