
গাজী জাহিদুর রহমান, তালা : তালা থেকে পাইকগাছা হয়ে কয়রা উপজেলা পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৬০কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সড়ক প্রশস্ত ও বাঁক সোজা করার কাজে চরম ধীরগতির কারণে জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। প্রায় ৫৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক উন্নয়ন কাজটি তিন বার সময় বাড়ালেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনো শেষ করতে পারেনি। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হয়েছে।
আঠারোমাইল থেকে সাতক্ষীরার তালা হয়ে খুলনার কয়রা পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের পথ নির্বিঘ্ন ও ঝুঁকিমুক্ত করতে বিগত সরকারের সড়ক ও জনপথ বিভাগ বাঁক সোজা ও সড়ক প্রসস্ত করতে এ প্রকল্পটি হাতে নেয়। তিন দফায় সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। রফিক, বিপ্লব, গনেশসহ কয়েকজন পথচারী বলেন, যত দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ততোবার ব্যয়ও বেড়েছে। শুনেছি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাই শেখ হেলালের। তাদের তো এখন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাহলে এই কাজ কিভাবে শেষ হবে, মানুষের চলেচলে যে অসহনীয় ভোগান্তি সেটাও বা কবে লাঘব হবে তা কেউ জানে না। কাজটি সম্পন্ন করতে এতদিন লাগার কথা না। শেখ হেলালের কাজ বলে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেনি।
খুলনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি আঠারোমাইল-তালা-কয়রা ভায়া পাইকগাছা সড়ক যথাযথ মানে উন্নতি করণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়। দরপত্র শেষে কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। ২৯ডিসেম্বর তাদের ৩৩৯ কোটি ৫৮লাখ ৪৭হাজার টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ৩০জুন কাজ শেষ করার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে নানা জটিলতার কারণে তিন দফা এক বছর করে সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ডিসেম্বর করা হয়। প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানো হয় ৪০কোটি টাকা। এছাড়া প্রকল্পের মধ্য থেকে তিন কিলোমিটার অংশের জন্য আলাদা করে ব্যয় বাড়ানো হয় আরো ৫৫কোটি টাকা। সর্বশেষ তালা থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত ৩০কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ছয় ফুট প্রশস্তকরণের জন্য বরাদ্দ করা হয় আরো ১০০ কোটি টাকা। এভাবে প্রকল্পের ব্যয় ১৯৫ কোটি বেড়ে ৫৩৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা করা হয়েছে।
সোমবার সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ধীর গতিতে কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। তবে এ কারণে পথচারীদের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কয়েকজন পথচারী জানায়, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়া ও একাধিক বার সময় পেছানোর ফলে বিড়ম্বনা বেড়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে তারা সন্দেহ পোষণ করলেও আশাবাদী সড়কের কর্মকর্তারা।
এক কর্মকর্তা বলেন, সড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ৩০টি ঝুকিপূর্ণ বাঁক সোজা করা। এতে ১১.২৪হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ৭১কোটি ৮২লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
তালা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন বলেন, তালা-কয়রা ভায়া পাইকগাছা অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী এই সড়কের উন্নয়ন। সড়কটিতে অর্ধশতাধিক বাঁক রয়েছে। সড়কটি দ্রুত চওড়া করার পাশাপাশি বাঁক সোজা করার কাজ শেষ করা হোক। এতে এই অঞ্চলের মানুষের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে ভোগান্তিও কমবে।
খুলনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, প্রকল্পটি চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে তিন বার সময় বাড়াতে হয়েছে। এখন দ্রুত গতিতে বাঁক সোজা করার কাজ চলছে। এছাড়া সড়ক প্রসস্ত করার কাজ হচ্ছে। আমরা ঠিকাদারকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছি।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত