জন্মভূমি ডেস্ক
প্রতিবেশী ইউক্রেনে মস্কোর সর্বাত্মক হামলা তৃতীয় সপ্তাহে পৌঁছানোর সাথে সাথে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রথমবারের মতো তুরস্কে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক করেছেন। বৃহস্পতিবারের এই বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেনে মানবিক সংকটের সমাধানে কাজ করতে রাজি হয়েছে কিয়েভ-মস্কো। তবে যুদ্ধ অবসানের বিষয়ে বৈঠকের আলোচনায় তেমন কোনও অগ্রগতি আসেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো তুরস্কের আন্তালিয়াতে এ বৈঠকে বসেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
কুলেবা বলেন, ইউক্রেনে মানবিক ইস্যুতে একটি সমাধানে পৌঁছাতে দুই পক্ষ চেষ্টা অব্যহত রাখার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তিনি জানান, তিনি আবারও এ ধরনের বৈঠক করতে প্রস্তুত রয়েছেন ‘যদি বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা ও সমাধান খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’
তিনি আরও বলেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন, যখন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাক্ষাৎ করেন তখন শান্তি ও নিরাপত্তার মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা করাটা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
তুরস্কের আন্তালিয়া শহরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এ বৈঠক শুরু হয়। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলিত সাভাসগলুর আমন্ত্রণে বৈঠকে অংশ নিতে বুধবারই তুরস্কে পৌঁছান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। পরে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবাও তুরস্কে পৌঁছান।
গত ২৪ ফেব্রæয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর এ প্রথম দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হল।
কুলেবা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন দেখা করেন, তখন শান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনার এখতিয়ার তাদের রয়েছে।
ইউক্রেনের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি ইউক্রেনের যুদ্ধের অবসান, ইউক্রেনের বেসামরিক জনগণের দুর্ভোগের সমাপ্তি এবং রাশিয়ার দখলদার বাহিনীর হাত থেকে আমাদের অঞ্চলগুলোকে মুক্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে এই ধরনের আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
কুলেবা বলেন, এই মুহূর্তে দু’টি কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে। মারিউপোলে মানবিক করিডোর স্থাপন এবং ২৪ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ক্রেমলিনে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে তার বার্তা পৌঁছে দেবেন বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি।
ইউক্রেনের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই যুদ্ধ বন্ধ হওয়া সম্ভব নয়, যদি রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করার উদ্দেশ্য না থাকে।
পরে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। রুশ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যুদ্ধের অগ্রগতি কী এই প্রশ্নের জবাবে লাভরভ বলেন, এটি ‘বিশেষ অভিযান’; যা পরিকল্পনা মাফিক চলছে।
পশ্চিমারা ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে ‘বিপজ্জনক আচরণ’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন লাভরভ। তিনি বলেছেন, এটি তাদের তথাকথিত নীতি ও মূল্যবোধের বিরোধী।
রাশিয়ার অন্য কোন দেশে আক্রমণ করার পরিকল্পনা রয়েছে কি না এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করেনি এবং অন্য দেশে আক্রমণের পরিকল্পনা নেই।
এর আগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে বেলারুশ সীমান্তে তিন দফার শান্তি আলোচনা হয়। কিন্তু এ আলোচনার অগ্রগতি দেখা গেছে সামান্য।
তুরস্কে যাওয়ার আগে একটি ভিডিও বার্তা দেন দিমিত্র কুলেবা। ভিডিও বার্তায় তিনি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, দোষারোপের দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে শুভচিন্তা নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে।
বুধবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা জানান, ইউক্রেনকে জোটনিরপেক্ষ করার লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করবে মস্কো। আলোচনার মাধ্যমেই তা অর্জন করার পক্ষে তারা।
আন্তালিয়ার এ আলোচনার মধ্য দিয়ে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দরজা খুলবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।
তুরস্কে ইউক্রেন-রাশিয়া আলোচনা মানবিক ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত
Leave a comment