
শহিদ জয়, যশোর
যশোরে রবি মৌসুমে তুলা চাষের নতুন সম্ভাবনা দেখছে যশোরের চাষিরা। বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডের গবেষকদের উদ্ভাবিত রুপালী-১ জাতের স্বল্পমেয়াদি-উচ্চ ফলনশীল তুলা চাষে এ বছর জেলার কৃষকরা ব্যাপক সফল হয়েছেন। জাতটি স্বল্পমেয়াদি হওয়ায় একই মৌসুমে তুলা চাষ করে একই জমিতে অন্য ফসল চাষ করে দ্বিগুন লাভ করায় জেলার অধিকাংশ চাষিরাই এখন নতুন জাতের এ তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম তুলা ব্যবহারকারী ও আমদানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের সুখ্যাতি রয়েছে দীর্ঘদিনের। দেশের ৪৫০ স্পিনিং মিলের বার্ষিক আঁশতুলার চাহিদা রয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ লক্ষ বেল। অথচ খরিপ মৌসুমে আমাদের দেশে যে পরিমাণ তুলা উৎপাদন হয় তা চাহিদাপূরণে যথেষ্ট নয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড গত কয়েক বছর ধরে রবি মৌসুমে তুলা আবাদের সম্ভাব্য যাচাইয়ে গবেষণা পরিচালনা করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে যশোরের চৌগাছা,শার্শা, মণিরামপুরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় রুপালি-১ জাতের এ তুলার জাতটি রবি মৌসুমে কৃষক পর্যায়ে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করে। প্রথম বছরেই স্বল্প মেয়াদি এ তুলা চাষে ব্যাপক ফলন পেয়ে খুশি চাষিরা।
কৃষকরা জানান,খরিপ মৌসুমে তুলা চাষে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এরমধ্যে এ মৌসুমে তুলা চাষ করতে হলে অপেক্ষাকৃত উচু জমি লাগে। জমির প্রাপ্যতাও কম থাকে। তাছাড়া এ সময়ে তুলা উৎপাদনের উপযুক্ত সময়ে বৃষ্টির কারণে তুলার আঁশের রং নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বোলের পরিপক্কতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। বোল ঠিকমত ফাটেনা এবং আশের পরিপক্কতা পেতে সময় লাগে। এতে কৃষক একদিকে সঠিক সময়ে তুলা ঘরে যেমন তুলতে পারেন না ঠিক তেমনি কাঙ্খিত দামও পান না।
অন্যদিকে রবি মৌসুমে রুপালী-১ জাতের এ তুলা চাষ নানাভাবে লাভজনক হয়ে উঠেছে কৃষকের কাছে। বিশেষ রবি মৌসুমের এ তুলার জাতটি স্বল্পমেয়াদি হওয়ায় কৃষক একই মৌসুমে তুলার পাশাপাশি আরও দুটি ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন ওই জমিতে। সাথে থাকছে সাথী ফসলও। এছাড়া রুপালী-১ জাতের এ তুলার গাছ অপেক্ষাকৃত ছোট এবং অন্যান্য জাতের তুলার চেয়ে দ্বিগুন ফলন হচ্ছে।
গবেষকরা জানান, রুপালি-১ জাতের এ উচ্চফলনশীল স্বল্পমেয়াদি তুলা চাষে সফলতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন প্রাইভেট জিনাররা। তারা কৃষককে উৎসাহিত করতে সরাসরি ক্ষেতে এসেই ভালো দাম দিয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছে এসব তুলা।
যশোরের চৌগাছার হাকিমপুর ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের তুলা চাষি জামিরুল ইসলাম বলেন, এবছর তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ২২ শতক জমিতে রুপালী-১ জাতের এ রবি তুলার চাষ করেছেন। সাথে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করেছিলেন পেঁয়াজ। ইতিমধ্যে ৫ হাজার টাকা পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। এখন তুলা তুলে সেখানে সবজি আবাদে যাবেন তিনি। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রাইভেট জিনাররা আমাদের ক্ষেতে এসে প্রতিমন তুলা ৪ হাজার টাকার দর দিয়েছে।
খরিপ মৌসুমের পাশাপাশি রবি মৌসুমের তুলা আবাদের স¤প্রসারণে আগামীতে সারাদেশে তুলার এ জাতটি ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে জানালেন বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো.আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, তুলা চাষকে কৃষক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে লাভজনক করে তোলার লক্ষ্য নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন গবেষণা করে এসেছি।