জন্মভূমি ডেস্ক : বাংলাদেশের দুর্নীতির চিত্র নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিশ্বব্যাপী আওয়ামী মার্কা দুর্নীতির কলঙ্ক তীলক আর কোথাও নেই। দখলদার আওয়ামী সরকার শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দুর্নীতিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, দুর্নীতির এমন লঙ্কাকাণ্ড পৃথিবীর কোথাও ঘটে না। কয়েকবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আওয়ামী সরকার। সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম মুহিত সাহেব বলেছিলেন চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি কিছুই না। এখন ওবায়দুল কাদের সাহেবের কাছে আমার প্রশ্ন কত হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করলে সেটিকে আওয়ামী পরিভাষায় দুর্নীতি হিসেবে গণ্য করা হবে। ওবায়দুল কাদেরের কথায় মনে হচ্ছে যে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দুর্নীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, টিআইবি বলছে এই দুর্নীতি বর্তমানে আরও অবনতিশীল হয়েছে। আর এজন্যই টিআইবিকে বিএনপির দালাল বলা হচ্ছে। বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে। এরা কী কারণে কারাবন্দী সেই কথাটি সাবলীলভাবে ফাঁস করেছেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এখন ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি কখন ড. আব্দুর রাজ্জাককে বিএনপির দালাল বলবেন সেটির জন্য জাতি অপেক্ষা করছে। দখলদার আওয়ামী সরকার শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দুর্নীতিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
রিজভী বলেন, জনগণ প্রত্যাখাত একদলীয় ডামি সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘন্টা পরই জানা গেল আবাসিক পর্যায়ে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার ভাড়া ১০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। মিটার চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় সমন্বয় করতেই নাকি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৭ জানুয়ারি নিরবে সার্কাস দেখার শাস্তি হিসেবে জনগণের ওপর মিটার ভাড়া এক লাফে দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। এমনিতেই আবাসিক পর্যায়ে গ্যাসের সরবরাহ মারাত্মক অবনতি হয়েছে। বাসাবাড়িতে দিনে—রাতে অধিকাংশ সময়ে গ্যাস থাকে না। অথচ অবৈধ সরকার নানা কৌশলে গ্যাস ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা চুষে নিচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত না করে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে মিটার ভাড়া দ্বিগুণ করা সরকারের গণশত্রু চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জনগণকে বন্দুকের নলের মুখে দূরে ঠেলে ক্ষমতা দখলে রাখার একমাত্র লক্ষ্য গোটা দেশটাকে লুন্ঠনের অভয়ারণ্য বানানো। আর এর ফলশ্রুতিতে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অরাজকতার কালো আঁধারে আচ্ছন্ন। ভয়াবহ ডলার সংকটের কারণে রফতানি প্রবৃদ্ধিতে ধস নেমেছে। তৈরি পোশাক ও বস্ত্রখাতে নগদ সহায়তা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবৈধ ডামি সরকার। এমনিতেই বায়ারদের কাছ থেকে পোশাকের অর্ডার অর্ধেকে নেমে এসেছে। এছাড়াও চামড়া, পাটজাত পণ্য, এগ্রো প্রসেসিং পণ্যে নগদ সহায়তা অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে এ সমস্ত পণ্যের রফতানি চরমভাবে হ্রাস পাবে।’
‘ভোটারবিহীন সরকার কখনোই জনকল্যাণমুখী হতে পারে না। এরা অবাধ লুন্ঠনের যে নজীর তৈরি করেছে তা পৃথিবীতে বিরল। বেপরোয়া দুর্নীতি আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ দিয়ে এরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থা গড়ে তুলেছে। এদেরকে দিয়েই প্রবল জনমতকে দমন করা হয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবির ওপর নামিয়ে আনা হয় এক ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। দলীয় ক্যাডার, সন্ত্রাসী আর সিন্ডিকেটবাজদের ভরণপোষণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রের কোষাগার শুন্য করা হয়েছে। তথাকথিত উন্নয়নের নামে যেভাবে হরিলুট হয়েছে সেটি পূরণ করতেই এরা রফতানি খাত থেকে তহবিল কমাচ্ছে।-বলেন রিজভী।
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রভুদের সমর্থনে ডামি নির্বাচন করে অবৈধ ক্ষমতার জোরে আওয়ামী মন্ত্রীরা নিজেদের এখন অখণ্ড কতৃর্ত্বের অধিকারী ভাবছেন। এরা গণতান্ত্রিক বিশ্বের নামকরা গণমাধ্যমকেও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে অবলীলায়। নোবেল লরিয়েট ড. মুহম্মদ ইউনুসকে নিয়ে বিশ্বের অনেক নোবেল লরিয়েট ও বিশ্ব নেতাদের বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে ওয়াশিংটন পোস্টে। এই বিবৃতিকে বিজ্ঞাপন বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনুস প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে নাকি বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ। স্বচ্ছ বটে তবে সেটি বর্তমানে বুড়িগঙ্গা নদীর পানির মতোই।
সংবাদ সম্মেলনে দেশব্যাপী বিএনপির পূর্বঘোষিত কালো পতাকা মিছিলে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।