গ্রামীণ হরিলুট পর্ব-২
এম সাইফুল ইসলাম
তেরখাদা উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশ স্যংখক ঘর রয়েছে। এখানকার ভূমিহীন পরিবারগুলো নতুন ঘর হস্তান্তরে যেন ঈদের চাঁদ হাতে পেয়েছিল। তবে ঘরে উঠে দেখে নানা সমস্যায় জর্জাড়িত প্রায় প্রতিটি ঘর। কোন ঘরের জানলা খুলে পড়ে আছে, আবার দেওয়ালের মেঝতে পলেস্তারা খুলে খুলে পড়ছে। মেঝতে লম্বা ফাটল। সোশ্যাল মিডিয়াতে বিষয়গুলো উঠে আসলে তড়িৎ গতিতে মিস্ত্রি দিয়ে সব ফাটল বালু সিমেন্ট দিয়ে বন্ধ করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিজেই অ-ঘোষিত ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে ভূমিহীনদের জন্য এইসব নড়বরে ঘর তৈরি করে। ফলে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর নবনির্মিত ঘরের বেশিরভাগই বেহালদশায় রুপ নিয়েছে।
ছাগলাদহ ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন আলামিন মোল্যা। তিনি জানান, ঘরগুলো হাত দিয়ে ঠেলা দিলে পড়ে যাচ্ছে, বড় বাতাশ হলে বা ঝড় হলে এ ঘর পড়ে যাবে। বর্ষার সময় ঘর দিয়ে পানি পড়ে। তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ঘর দিছে, তার চাবি নিয়ে যাক, আমরা গাছ তলায় থাকব।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা এ প্রতিবেদককে জানান, আমি এ ঘরে উঠার সাথে সাথে দেখি ঘরের জানালা ভাঙ্গা, ঘরের ফেøার থেকে চল্টা উঠে যাচ্ছে, উনারা বলেন এই যে চাবি দিলাম, আজকের থেকে এ ঘরের দায়িত্ব তোমাদের, আমরা কিছু করতে পারব না।
জানা যায়, ঘর নির্মাণের সময় নি¤œ মানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ঘরের মেঝতে নামে মাত্র সিমেন্ট দেওয়া হয়। বেশিরভাগই ধূলাবালি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে কয়েক দিন যেতে না যেতে ঘরগুলো থেকে সিমেন্ট বালুর আস্তারন খসে খসে পড়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নি¤œ মানের কাজ করিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ঘরের বেহালদশা নজরে আসলে কর্তৃপক্ষ মিস্ত্রি দিয়ে ঘরগুলোর রাতারাতি মেরামত করেন। এছাড়া ঘরের এই সমস্যাগুলো কাউকে না জানানোর জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসবাকারীদের বলেন। দীর্ঘ দিন অনেকেই চুপ ছিল। তবে ঘরগুলোর অবস্থা আবারও নাজুক হওয়ার কারণে এখন বাধ্য হয়ে কেউ কেউ মুখ খুলছেন। যে কারণে বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যমের নজরে আসে। এক সময় যারা ভূমিহীন ছিল, এখন তারা ঘর পেলেও বসবাস করতে নিদারুন কষ্ট হচ্ছে। ফলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।
ছাগলাদগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম দীন ইসলাম জানান, ঘরগুলোর অবস্থা দেখে আমি সংশ্লিষ্টদের জানাব। তবে ডিসি মহোদয়ের সাথে যখন গিয়েছিলাম তখন তো ঘরগুলো ভালই দেখেছিলাম।
তেরখাদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা জানান, এ উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে কোন ধরনের ফাটল ধরেনি। যদি এ ধরনের কোন তথ্য পাওয়া যায় তাহলে আমরা রিপেয়ার করে দেবো।
খুলনার জেলা প্রশাসক মনিরুল হক তালুকদার জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পর ব্যাপারে তেরখাদা ইউএনও এর সাথে যোগাযোগ করলে ভাল হয়। কারণ তিনি এটা তদারকি করছেন।