
জন্মভূমি ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার পর থেকে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই বিএনপির এই নেতার উত্থান হয়েছিল।
চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়ন থেকে উঠে আসা চাঁদের নানা অপকর্মের কথা স্থানীয়দের মুুখে মুখে। একসময় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ১৯৯১-১৯৯৬ ও ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত চাঁদের কথার বাইরে কোনও কাজ হতো না চারঘাটে। তার কথামতো কাজ না করায় এক সরকারি কর্মকর্তাকেও মারধর করেছেন।
দলীয় কয়েকজন নেতাকর্মী জানিয়েছেন, চাঁদের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় শলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর দুই দফা চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান হন। মূলত তখন থেকেই ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০২ সালের পর থেকে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে বিভিন্ন থানায়। বেশিরভাগ সময় জেলে কাটিয়েছেন। জেল থেকে বেরিয়ে আবারও জড়ান চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে।
২০১৯ সালে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হওয়ার পর থেকে উচ্ছৃঙ্খল বক্তব্য দিতে শুরু করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় উত্তেজনার সৃষ্টি হতো। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করেন। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তির ঘটনায় ২০২২ সালের ২৬ জুলাই চাঁদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয়। তার ওই বক্তব্য প্রচারের অভিযোগে আরও সাত জনকে মামলার আসামি করা হয়েছিল। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার আদালতে মামলাটি করেছিলেন।
দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন চাঁদ। ওই নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পান প্রয়াত বিএনপি নেতা কবির হোসেন। এর প্রতিবাদে চাঁদ তার সমর্থকদের নিয়ে মিছিল বের করেন। মিছিল নিয়ে চারঘাট থেকে রাজশাহী শহরে আসার পথে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘কালো পতাকা’ দেখিয়েছিলেন। এটি খালেদা জিয়াকে ‘হত্যার হুমকি’ হিসেবে মনে করেছিলেন দলীয় নেতারা। তবে তখনও তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি দল।
২০১৪ সালে বাঘা-চারঘাট আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তাকেও হত্যার চেষ্টা করেছিলেন চাঁদ। এই নির্বাচনের সময় চারঘাট-বাঘায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। ওই সময় চাঁদের অনুসারীদের হামলায় চারঘাট-বাঘা এলাকায় আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছিল।
সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন সারাদেশে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। চাঁদকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে।
চাঁদের বাবা রাজাকার ছিলেন দাবি করে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘চাঁদ যে কথা বলেছেন, সেটি বিচ্ছিন্ন কোনও কথা নয়। তা তারেক রহমানের কথা। লন্ডন থেকে সে কথা চাঁদের মাথায় কীভাবে ঢুকেছে; এর পরিণতি কত ভয়ানক হবে, তা ভাবেননি চাঁদ।’
চাঁদকে গ্রেফতারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা চলছে জানিয়ে পুঠিয়া থানার ওসি ফারুক হোসেন বলেন, ‘তিনি বাড়িতে নেই। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে; তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তিনি লুকিয়ে থাকতে পারবেন না। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে।’
চাঁদকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানালেন মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘যেকোনো সময় চাঁদকে গ্রেফতার করা হবে।’
তবে চাঁদের ওই বক্তব্য ব্যক্তিগত বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। তিনি বলেন, ‘চাঁদের বক্তব্যের কারণে আমরা বিব্রত। রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তব্য দিতে গেলে এ ধরনের ‘স্লিপ অব টাং’ হয়ে যায়। আমাদেরও হয়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করে নিই। চাঁদ এটি মিস করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করা উচিত ছিল। তবে তার বক্তব্য দলের নয়। এ ধরনের বক্তব্য না দেওয়ার ব্যাপারে দলের নির্দেশনা আছে। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই, শুধু এই বক্তব্য দেওয়ার কথা নেতাদের। কিন্তু চাঁদ আবেগপ্রবণ; এ জন্য হয়তো এ ধরনের কথা বলে ফেলেছেন। তার বড়ভাই হিসেবে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি; তার হয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাইছি।’

