হারুন-অর-রশীদ
দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট জিকেবিএসপি প্রকল্প। হাজারো কৃষকের ভাগ্য বদল হয়েছে নানা প্রজাতির সবজি উৎপাদন করে। এই অঞ্চলে আমন ধান কাটার পর জমি পতিত থাকতো। এই প্রকল্প কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ সার কীটনাশক ও প্রশিক্ষণ দিয়ে মানব সম্পদে পরিণত করেছে। পতিত জমিতে এখন কৃষক সোনা ফলাচ্ছেন। কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হচ্ছে। অর্থনৈতিক ভাবে সামলম্ভী হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছেন, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর জিকেবিএসপি প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় ১০১৯ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে। এই প্রকল্প ৫জেলা নিয়ে কাজ করছেন। কৃষকরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভুট্টা আবাদ করার জন্য। আমনধান কাটার পর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে রোপণ করা হবে ভুট্ট। বিনা চাষে রোপণ করা হয় ভুট্টা। এ বছর ২০০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে ভুট্টা। চাষ হলে সরকারের আমদানী নির্ভরতা কমবে। প্রতি হেক্টরে ১০ মেট্রিকটন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই এলাকার ১১জন কৃষক ২০১৯ সালে ১০একর জমিতে বিনা চাষে ডিবলিং পদ্ধতিতে চারা রোপন ও পলি ব্যাগের তৈরী চারা রোপণ করে এর কার্যক্রম শুরু করেন। অল্প খরচে বেশী লাভ হওয়াতে প্রতিবছর এর চাষ বাড়ছে। বিনা চাষে ডিবলিং পদ্ধতিতে চারা রোপন ও পলি ব্যাগের তৈরী চারা রোপণ করে এর কার্যক্রম শুরু করেন। এর পর প্রতি বছর চাষ বাড়তে থাকে। লবাণাক্ত এলাকায় একটি মাত্র ফসল হত। আমন ধানে ও শুস্ক মৌসুমে আবাদের মুল সমস্যা হল লবাণাক্ততা। আমন ধান কাটার পর জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। এখন এই পতিত জমিতে সোনা ফলছে। কৃষকের মুখে ফুটবে হাসির ফোয়ারা। স্বার্থক হবে তাদের পরিশ্রম।
এই প্রকল্পের আওতায় কৃষক চাষ করছেন ওল কচু, ঝিঙ্গে, শসা, করলা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, মুখি কচু, পানিকচু, চিচিংগা, টমেটো,বাঁধা কপি, ফুলকপি, বেগুন, সুর্যমুখি, কাকরোল, ডেঢ়শ, মরিচ, বরবটি, সিমসহ বিভিন্ন সবজি বছর ব্যাপী উৎপাদন করছেন কৃষক। মাটি ও সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটির উর্বরতা মান বজায় রেখে ফসল উৎপাদন করলে ২০-২৫শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। মালচিং পদ্ধতিওে সবজি চাষ করা হয়ে থাকে। প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার কৃষক জড়িত রয়েছে এবং ৫ হাজার হেক্টর জমিতে এই সবজি উৎপাদন করে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছে।
বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুর এলাকার কৃষক মো: আ. হালিম হাওলাদার, ওমর আলী হাওলাদার ও মো: ইব্রাহীম কাজী এবং দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা এলাকার কৃষক পলাশ বৈরাগী, বিভ‚তি মন্ডল ও মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কোন জায়গা পতিত রাখা যাবেনা। সে বিষয়টি আমরা মাথায় রেখে ভুট্টা ও তরমুজসহ নানাবিধ সবজি চাষের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আবহাওয়া অনুকূলে ভালো থাকা ট্রে ও পলিব্যাগ পদ্ধতিতে রোপণ করা হবে। আগে চারা তৈরী করে ক্ষেতে রোপন করলে দ্রæত বড় হয় এবং সময় কম লাগে।
প্রকল্প পরিচালক অমরেন্দ্রনাথ বিশ^াস বলেন, কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানব সম্পাদে পরিনত করা হয়েছে। প্রশিক্ষণলদ্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সঠিক নিয়মে চাষাবাদ করলে দ্বিগুন ফসল উৎপাদন হবে। কৃষকদের বিনামূলে সার, বীজ প্রশিক্ষণসহ সকল প্রকার উপকরণ কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে । চারা তৈরী করে রোপন করলে ফসল আগে পাওয়া যায়। লবণাক্ততা আসার আগেই গাছ বেড়ে উঠে। বৈরী আবহাওয়া আসার আগেই কৃষক তার ফসল বিক্রি করতে পারবেন।
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে কৃষি বিপ্লব
Leave a comment