জন্মভূমি রিপোর্ট : বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা খান মোঃ জাকির হোসেন হত্যা মামলায় পরিকল্পনাকারী ও অর্থযোগানদাতা হিসেবে অভিযুক্ত বাহাউদ্দিন খন্দকারের বিশ^স্ত ক্যাডার সাদিকুর রহমান রনি (৪২) প্রায় ১১ বছর পর গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই এর একটি টিম বৃহস্পতিবার ভোরে নগরীর জিরোপয়েন্ট নিজখামার এলাকা হতে তাকে গ্রেফতার করে। সে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে।
আদালতের এক কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর একটার দিকে আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এরপর সে জাকিরকে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছে। অতি: চীফ মেট্রো পলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দী রেকর্ড করেন, পরবর্তীতে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
২০১২ সালের ২০ মে সন্ধ্যায় কেসিসি মার্কেটস্থ চেম্বারের তালাবন্ধ করে দলিল লেখক সমিতির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব জাকির বাড়ী ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হেলমেট পরিহিত দু’ আততায়ী সেখানে এসে তার নাম জিজ্ঞাসা করে। নাম বলা মাত্রই তাদের একজন পিস্তল বের করে তাকে গুলি করে। ঘটায়- বোমা বিষ্ফোরন। দু’-তিনটি মোটর সাইকেলে ঘাতক দলের অন্য সদস্যরা জেলা পরিষদের সামনের সড়কে অপেক্ষা করছিল। তারা ওই দু’জনকে নিয়ে অকুস্থল ত্যাগ করে। যাবার আগে ওই রাস্তায় তারা আরও একটি বোমা ফাটায়। মামলার নথি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ২২ মে নিহতের স্ত্রী জামিলা বেগম অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামি রনি হত্যাকাণ্ডের মাস্টার মাইন্ড বাহাউদ্দিন খন্দকারের একান্ত বিশ^স্ত ক্যাডার হিসেবে কাজ করতো। বাহাউদ্দিনের সাথে নিহত জাকিরের পারিবারিক, জমি-জমা, দলিল লেখক সমিতির নির্বাচনসহ রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছিল। হত্যাকাণ্ডের দুই দিন আগে তিনি নেপাল চলে যায় এবং জাকির খুন হওয়ার পাঁচ দিন পর দেশে ফিরে আসেন। তার নাম এজাহার গর্ভে না থাকা সত্বেও তাকে এবং সাদিকুর রহমান রনিকে এই মামলায় গ্রেফতার কিংবা হয়রানি না করার জন্য তিনি উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। এরপর তিনি ধারাবাহিকভাবে রিটের সময় বর্ধিত করে আসছিলেন। গত ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট পিটিশনটির নিষ্পত্তি হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) পিবিআই ইন্সপেক্টর মোঃ ইকবাল হোসেন দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, ২০২২ সালের ৭ মার্চ বাহাউদ্দিন গ্রেফতার হওয়ার পর আসামি রনি পালিয়ে যায়। সে ভারত ও বাংলাদেশের সিমান্ত এলাকা বেনাপোলে অবস্থান করতো। বিভিন্ন সময় তাকে গ্রেফতারের চেষ্টাকালে সে ভারতে পালিয়ে যেতো। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে নিজখামার এলঅকা হতে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকান্ডের নেপথ্যের কুশিলব হিসেবে অভিযুক্ত বাহাউদ্দিন তাকে কত টাকা দিয়েছিল? কিলিং মিশনে কতজন অংশ নিয়েছিল? আসামির স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে (আইও) কে করা এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি তদন্তের স্বার্থে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে এর আগে আট জন গ্রেফতার হয়। তারা হলেন, রেজাউল করিম বাবলু (৫৫), শেখ আলমগীর হোসেন (৩৫), শেখ আজিম উদ্দীন (৩৬), মোঃ জামির হোসেন ওরফে জামির শেখ (৪৩), জহিরুল ইসলাম ওরফে লাল্টু (৩৬), শেখ হাসান (৪৮) এবং মোঃ ফারুক হোসেন এবং বাহাউদ্দিন খন্দকার। তারা সবাই জামিনে আছেন।