আহাম্মদ ইব্রাহিম অরবিল, দশমিনা(পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় ২০ বছর আগে উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে আশ্রয়ণ ও আবাসন প্রকল্পের আওতায় ৪২০ পরিবার ঘর পেয়েছিল। কথা ছিল, তাদের স্বাবলম্বী করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কিন্তু তা আজও আলোর মুখ দেখেনি। অপরদিকে দীর্ঘদিন ঘরগুলো সংস্কার না করায় ঝুরঝুরে হয়ে গেছে টিনের চাল, দরজা, জানালা। ফলে কি শীত, কি বর্ষা- সব ঋতুতেই কষ্ট করছেন এখানকার বাসিন্দারা। তারা জানালেন, একটু বর্ষা হলেই অনেক ঘরে পানি পড়ে মেঝে ভেসে যায়। ঘরের আসবাবপত্র, পরনের কাপড়-চোপড় ও প্রয়োজনীয় মালামাল ভিজে একাকার হয়ে যায়। আর কনকনে শীতে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে যায় ভাঙা টিনের চাল আর জানালার ফাঁক দিয়ে। ফলে ভাঙ্গা ঘরে বর্ষা ও হাড়ভাঙ্গা শীত উপেক্ষা করে অসহায় -দুঃস্থ বাসিন্দাদের বসবাস করতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার দশমিনা ইউনিয়নের আরজবেগী আশ্রয়ণ প্রকল্পের সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজির হোসেন বলেন, প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়, সিডর, আইলা, মহাসেন, ফণিসহ প্রাকৃতিক নানা দূর্যোগে আমাদের লড়াই করতে হয়। আশ্রয়ন প্রকল্পে থাকা মোঃ ফারুখ (৩৫), শাহা ভানু(৬০), হনুফা(৫৫), দেলোয়ার ৪০,রুহুল ফরাজি( ৫০), ফোরকান মৃধা(৪৮), মোস্তফা(৩৮), হানিফ হাওলাদার(৭০), খোকন (২৭) বলেন, আমরা কি বলবো এখানে ৪০ টি পরিবার বসবাস করি মাত্র দু’টি টিউবওয়েল পানির কষ্ট অনেক। প্রতি বছর শিশু ও বৃদ্ধারা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
উপজেলার আলীপুরা ইউনিয়নের পূর্ব আলীপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পাওয়া দিনমজুর ও পূর্ব আলীপুর আশ্রায়ন প্রকল্পের সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক বাবুল হোসেন মৃধা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এই ঘর পেয়ে আমরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলাম। আমরা স্বপ্ন বুনেছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে থেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাবলম্বী হবো। কিন্তু স্বাবলম্বী হওয়া তো দূরের কথা, এখন আমাদের খোঁজ আর কেউ রাখে না। ঘরগুলো মেরামতের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করা হলেও আজও কেউ মেরামত করতে এগিয়ে আসেনি। বাবুল হোসেন মৃধা নিজেদের দুরবস্থার কথা জানালেন আশ্রায়নের ঘর পাওয়া রাশিদা বেগম (৪৮), উত্তম দাস (৬০), রাজ্জাক মৃধা (৫০), সুফিয়া (৪৩), আব্দুল গনি (৫৫), রাবেয়া বেগম (৬০), নাদিরা বেগমসহ (৩৭) আরও অনেকে।
দশমিনা সদর ইউনিয়নের আরজবেগী আশ্রয়নের লোকজন বিশুদ্ধ পনির অভাবে বিভিন্ন সময় পানিবাহীত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং ব্যারাকের ঘরগুলোর উপরের টিনের সাইনি পরিবর্তন করা দরকার। আশ্রয়নের ঘরগুলো সংস্কার ও তাদের শীতবস্ত্র প্রদান করা প্রয়োজন। বর্তমানে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় আশ্রয়নের ঘর এই মুহূর্তে মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। আশ্রয়ন ও আবাসন প্রকল্পের ঘরগুলোর প্রায় অর্ধেক পরিবার অন্যত্র চলে গেছেন। বর্তমানে যে পরিবারগুলো বসবাস করছে তাদের ঘরের ছবিসহ সকল তথ্যাদি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরন করা হয়েছে। আশ্রয়নের ঘরগুলো সেমিপাকা করে দেওয়া দরকার। বরাদ্দ না থাকায় ঘরগুলো সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।
দশমিনায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো ২৪ বছরেও সংস্কার হয়নি

Leave a comment