
দশমিনা(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামীন জনপদে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস সংগ্রহ করছে। এতদিন গাছিরা খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিল। শীত মৌসুম শুরু হবার আগেই খেজুর গাছ ছেটে গাছিরা তাদের স্বপ্ন বুনতে থাকে। খেজুরের রস সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা সম্ভব হয়। আবার অনেক গাছি রস সংগ্রহের পর পাটালি/গুড় তৈরি করে বেশী দামে বাজারে বিক্রি করে থাকে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অনেকটা অযত্ন ও অবহেলায় বেড়ে উঠা খেজুর গাছ শীতকাল ছাড়া কোন যত্ন নেয়া হয় না। শীত আশার আগ মুহুর্তে গাছিরা আগাম খেজুর গাছ পরিচর্যা করে থাকে। গ্রামের মাঠের ক্ষেতের পাশে, সড়কের পাশে, পুকুর, বিল,ডোবার পাড়ে অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে উঠা খেজুর গাছ আমাদের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক এই সম্পদ রক্ষা করার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না। অবাধে ও বিনা কারনে গাছ নিধনের সময় অবহেলিত এই খেজুর গাছটি কোন ভাবেই রক্ষা পায় না। অথচ আবহমান বাংলার মানুষের কাছে আজও খেজুরের রস,গুড়,পাটালির মুখরোচক স্বাদ স্মরনীয় বটে। উপজেলার গাছিরা ধারালো দা আর কোমরে দড়ি দিয়ে শক্ত করে গাছের সঙ্গে বেঁধে গাছ কেটে রস সংগ্রহ করা শুরু করেছে। শীত মৌসুম আসলে উপজেলায় সর্বত্র উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। শীতকালে খেজুরের রসের পিঠা আর রসালো পায়েস খুবই মজাদার। চলতি মৌসুমে ৩ শতাধিক গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রতি বছর শীতের আমেজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে খেজুর গাছ কাটতে গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়তো। গাছ কমে যাওয়ায় এখন আর আগের মত কেউ গাছ কাটছে না। ফলে গাছিদের রস সংগ্রহে খুব কম দেখা যাচ্ছে। ঘন কুয়াশায় পড়ে খেজুর রসের মন মাতানো সুমিষ্ট ঘ্রান আর দেখা মিলছে না। উপজেলা সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মাহাবুল চৌকিদার বলেন,শীত আসলেই খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহের জন্য নেমে পড়তাম। খেজুর গাছ কাটার পর পরই গাছগুলোতে রসের হাড়ি পরিপূর্ন হয়ে যেত। এই রস আহরন করে গ্রামে গ্রামে খেজুরের মিঠা,পিঠা,পায়েসসহ নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি করা হতো। পর্যাপ্ত পরিমানে রস না পাওয়ায় এখন আর আগের মত সেই ধরনের খাবার তৈরি করা যায় না। তবে ঐতিহ্য ধরে রাখতে উপজেলার গ্রামাঞ্চলে অনেক গাছি পরিবার এখনও খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আগের মত রস পাওয়া যায় না। গাছিরা জানায়, খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় অল্প সংখ্যক গাছ কাটা হয়। এতে এক হাড়ি রস আহরন করা হলে তার দাম প্রায় ৮ শত টাকার কম নয়। এত দাম দিয়ে কেউ রস কিনতে চায় না। তবে শখের বশে কেউ কেউ ক্রয় করে নিয়ে যায়। এদিকে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলে শীতকালিন পিঠা উৎসবে খেজুরের রসের কোন পিঠা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। পর্যাপ্ত গাছ না থাকায় রসের পরিমান কমে গেছে। ফলে শীত মৌসুমের মুখরোচক খেজুরের রস আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না।
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ জাফর আহমেদ বলেন, খেজুর গাছ পরিচর্যার এবং সঠিক উপায়ে রস সংগ্রহ করার বিষয়ে গাছিদেরকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

